পারিবারিক ধর্মকর্ম পালনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ। সন্তানের কর্মসাফল্যে গর্ব। গবেষণায় অগ্রগতি। ... বিশদ
আসলে মনে হয়, ওই অমানবিক বর্বরোচিত ঘটনায় দেশবাসী লজ্জিত হলেও প্রধানমন্ত্রী কোনও লজ্জাই পাননি। সবটাই তাঁর রাজনীতির মুখোশ। মোদি জমানায় একের পর এক নারী নির্যাতনের উদাহরণ সামনে আনলেই তাঁর সরকারের আসল চেহারাটা বেআব্রু হবে। যেমন তাঁর মুখ্যমন্ত্রিত্বকালে ২০০২ সালে গুজরাতে গোধরা হিংসার সময়ে বিলকিস বানো গর্ণধর্ষণের ঘটনার কথাই ধরা যাক। গত বিধানসভা ভোটের আগে সেখানে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ১১ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়। সেই অভিযুক্তদের অনেককে বীরের সংবর্ধনা দেয় গেরুয়া শিবির। তা নিয়ে কড়া সমালোচনাও হয়। কিংবা বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ সিংয়ের কথাই ধরা যাক। উত্তরপ্রদেশের এই বাহুবলী সাংসদের বিরুদ্ধে দেশের পদকজয়ী একাধিক মহিলা কুস্তিগির নিগ্রহের অভিযোগ এনেছেন। কিন্তু অমিত শাহের দিল্লি পুলিস আদালতে ব্রিজভূষণের জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করেনি। ফলে নারীনিগ্রহের দায়ে অভিযুক্ত এই গেরুয়া সাংসদ হাসিমুখে জামিন নিয়ে আদালত ছাড়েন। এসব ঘটনা থেকেই প্রশ্ন ওঠে, নারীসুরক্ষা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভাবগম্ভীর বক্তব্য আদৌ আন্তরিক ও বিশ্বাসযোগ্য কি? একইভাবে মণিপুরের ভিডিও ভাইরাল হয়ে মুখ না পোড়ালে তিনি মৌনীবাবা হয়েই থাকতেন বলে মনে করে বিরোধীরা। আরও উদ্বেগের ঘটনা হল, মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, এমন ঘটনা শ’য়ে শ’য়ে ঘটছে! আশার কথা যে, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চও এই ঘটনা নিয়ে মণিপুর ও কেন্দ্রীয় সরকারকে কড়া বার্তা দিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছে। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, মণিপুরের ঘটনা সার্বিকভাবে সংবিধানিক ব্যর্থতার ছবি। তাই হয়তো ঘটনার ৭৮ দিন পর প্রধানমন্ত্রীর এমন দুঃখ ও ‘রাগের’ কুনাট্য দেখল দেশবাসী। দেখল রাজনীতিও। মণিপুরের ঘটনার প্রেক্ষিতে তিনি টানলেন এমন দুটি রাজ্যের প্রসঙ্গ, যেখানে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস। বিস্ময়করভাবে টানলেন না নারীনির্যাতনে শীর্ষস্থানীয় বিজেপি-শাসিত রাজ্যের প্রসঙ্গ।
আড়াই মাস ধরে মণিপুরে কোনও আইনের শাসন নেই। অন্তত ২০০ জন মৃত, ৬০ হাজার মানুষ ঘরছাড়া। আহত অনেক। দুই জনজাতির এই লড়াইয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রী ও পুলিসের পরোক্ষে উস্কানি রয়েছে বলে মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে। বস্তুত, রাষ্ট্রপতি শাসনের অনুকূল পরিস্থিতিই সেখানে। তবু বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন বহাল তবিয়তে! আর তাঁর জমানায় ক্রমবর্ধমান ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্য ব্যর্থতার দায় স্বীকার দূর অস্ত, মণিপুরের সংঘর্ষ নিয়ে একটি শব্দও ব্যয় করেননি দেশের প্রধানমন্ত্রীও! কিন্তু শেষপর্যন্ত কি তিনি মুখ বুজে থাকতে পারবেন? বিরোধীদের সদ্য গঠিত মহাজোট ‘ইন্ডিয়া’ সংসদে প্রধানমন্ত্রীর মুখ খোলার দাবিতে একযোগে সবর হয়েছে। মণিপুর নিয়ে দেশ ও আন্তর্জাতিক মহলের চাপ রয়েছে। ভাইরাল ভিডিও-তে এক নির্যাতিতা তরুণীর দাবি, উন্মত্ত জনতার হাতে পুলিসই তাঁদের তুলে দিয়েছে এবং পরে দূরে দাঁড়িয়ে মজা দেখেছে! তাই দায় এড়াতেই কি মৌনতা ভেঙে শেষে মুখ খুলতে হল প্রধানমন্ত্রীকে?