পারিবারিক ধর্মকর্ম পালনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ। সন্তানের কর্মসাফল্যে গর্ব। গবেষণায় অগ্রগতি। ... বিশদ
‘সিবিসি’। ‘পুরো নাম ‘সেন্ট্রাল ব্যুরো অব কমিউনিকেশন’। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের অধীন এই সংস্থার মাধ্যমেই কেন্দ্রীয়ভাবে মোদি সরকারের যাবতীয় প্রচার করা হয়। চলতি অর্থবর্ষে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের প্রচার খাতে বরাদ্দ হয়েছে ২০০ কোটি টাকা। কিন্তু ভোটের বছরে এই টাকায় মোদি সরকারের যাবতীয় ব্যর্থতা ঢাকার প্রচার করা কি সম্ভব? হয়তো নয়। তাই মুশকিল আসানে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, গ্রামোন্নয়ন, নারী ও শিশু কল্যাণের মতো অন্তত কেন্দ্রের ১৫টি মন্ত্রকের বাজেট থেকে ৪০ শতাংশ অর্থ কেটে তা সিবিসিকে দেওয়ার নাকি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেসের এমনই অভিযোগ। সহজ অঙ্কে মোদির প্রচারের জন্য টাকার পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ৭৫০ কোটি। দেশের মানুষ নানা সমস্যায় জর্জরিত, বহু মানুষ অর্ধাহারে দিনগুজরান করলেও ভোটের দেশে এই টাকায় মোদি সরকারের ঢাক পেটানোর ব্যবস্থা হবে! চটকদার প্রচারের ট্যাগ লাইন এবার অমৃতকাল, কর্তব্যকাল! সঙ্গত প্রশ্ন উঠেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিটি মন্ত্রকের বাজেট বরাদ্দ অনুমোদন করেছে সংসদ। তাহলে এখন কী করে এক মন্ত্রকের টাকা অন্য মন্ত্রকের কাজে ব্যয় করা হবে? এই কাজ যে পুরোপুরি ‘বেআইনি’ সেই দাবি করেছেন বিরোধীরা। আসলে কাজ দিয়ে নয়, বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজেদের ‘সাফল্য’ প্রচারকে বরাবরই জোর দিয়ে এসেছে এই সরকার। সরকারের দেওয়া তথ্যই বলছে, ২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মোদি জমানার আট বছরে শুধু সিবিসি-র মাধ্যমে বিজ্ঞাপনে খরচ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ বিজ্ঞাপন বাবদ প্রতিদিন খরচ ২ কোটি টাকার বেশি। বলা বাহুল্য, ঢাক পেটানোর এই ব্যবস্থার জন্য সবটাই জনগণের আয়কর এবং জিএসটি বাবদ দেওয়া করের টাকা।
অথচ, চন্দ্রযান-৩ পাঠানোর দিনেই খবরে প্রকাশ, দেশের বিজ্ঞান সংক্রান্ত গবেষণা কেন্দ্রগুলিতে অর্থ বরাদ্দ হয় কমিয়ে দিয়েছে অথবা বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। বহু ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা নিজেদের অর্থ খরচ করে গবেষণার কাজ চালু রেখেছেন। অর্থের অভাবে শিক্ষা স্বাস্থ্যের মতো মৌলিক পরিষেবার ক্ষেত্রগুলি ধুঁকছে। কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকেই শূন্যপদের সংখ্যা কয়েক লক্ষ। সরকারি তথ্য বলছে, ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে কর্মখালির বিজ্ঞাপনের জবাবে ২২ কোটির বেশি যুবক-যুবতী বিভিন্ন সরকারি পদের জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু এর মধ্যে চাকরি হয়েছে মাত্র ৭ লক্ষ ২২ হাজারের। মোদি সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক রাজ্যের অভিযোগ, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা দিচ্ছে না দিল্লি। বাংলারও ১০০ দিনের কাজ ও আবাস যোজনার কয়েক হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। সব মিলিয়ে গভীর সঙ্কটে রয়েছে দেশবাসী, বিশেষত গরিব মধ্যবিত্ত। কিন্তু প্রচার খাতে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের বিষয়টি প্রমাণ করে দিচ্ছে মোদি সরকারের অগ্রাধিকারের মধ্যে আসলে কোন কাজ গুরুত্ব পাচ্ছে? বিভিন্ন মন্ত্রকের টাকা কেটে ২৪-এর ভোটে মোদির প্রচারের পরিকল্পনার অভিযোগ প্রসঙ্গে কেন্দ্র এখনও মুখ না খুললেও বিজেপির আইটি সেল কিন্তু সাফাই দিতে শুরু করে দিয়েছে। আসলে বেকারি, মূল্যবৃদ্ধি, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন, হিন্দুত্বের এজেন্ডা পূরণের চেষ্টা—এসব সত্ত্বেও মোদি সরকারকে বাঁচাতে যেন বিজ্ঞাপনই ভরসা।