পারিবারিক ধর্মকর্ম পালনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ। সন্তানের কর্মসাফল্যে গর্ব। গবেষণায় অগ্রগতি। ... বিশদ
পশ্চিমবঙ্গে গ্রামের মানুষের মতিগতিই স্পষ্ট করে দেয়, পরবর্তী বড় (বিধানসভা/ লোকসভা) নির্বাচনের আসরে কী ঘটতে চলেছে। সেইদিক থেকে এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়টি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। লোকসভার ভোটের বাকি আর হাতে গোনা কয়েকটি মাস। স্বভাবতই সব পার্টি লোকসভা নির্বাচনের আগে ‘ওয়ার্ম আপ’-এর মতোই সদ্ব্যবহার করে নিতে চাইছে এই ভোটকে। তাই উৎসবের মেজাজে ভোটের ঐতিহ্য ছাপিয়ে এই নির্বাচন বাড়তি উত্তাপ ছড়িয়ে দিয়েছে। এগরায় বাজির কারখানার আড়ালে ভয়াবহ বিস্ফোরণেই মিলেছিল পূর্বাভাস। অনেক টালবাহানার পর ৮ জুন ভোট ঘোষণা হতেই, একযোগে নড়েচড়ে বসেছে বাংলার রাজনৈতিক মহল। তার ঢেউ আছড়ে পড়েছে দিল্লির তখতেও। ব্যতিক্রমীভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন স্বয়ং ‘ভারতেশ্বর’ এবং তাঁর ‘ডান হাত’। বিভিন্ন দলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় মনোনয়নপত্র জমা এবং দিকে দিকে দেওয়াল লিখন। প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে তৃণমূল। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক আগেই সাফ জানিয়ে দেন, দাদা বা নেতা ধরে কেউ প্রার্থী হতে পারবেন না। প্রার্থী মানুষই বেছে দেবেন। মানুষের মতামত নিয়েই প্রার্থী ঠিক করবে দল। এই ব্যাপারে বিভিন্ন জেলায় দলের অভ্যন্তরে এক অভিনব ভোটাভুটিও হয়। প্রার্থী বাছাইয়ের ‘নির্বাচন’ নিয়ে একাধিক জেলায় গণ্ডগোলেরও খবর সামনে আসে। প্রকট হয় শাসক দলের অভ্যন্তরে কোন্দল। কোথাও ধরা পড়ে মূল দলের ভিতরে উপদলীয় গণ্ডগোল, আবার কোনও কোনও জায়গায় ‘মাদার’ ও ‘যুব’ সংগঠনের মধ্যে রেষারেষি। অভ্যন্তরীণ ঝামেলা মনোনয়নপত্র পেশের আগে মেটাতে পারেনি নেতৃত্ব। তার ফলে একই আসনে তৃণমূলের একাধিক প্রার্থীর মনোনয়ন জমা অনিবার্য হয়ে ওঠে। দিকে দিকে গোঁজ প্রার্থীরাও শাসক দলের চিন্তার কারণ হয়েছে। ওইসঙ্গে যোগ হয়েছে ‘রাম-বাম-কং’ বা ‘রামধনু’ জোটের প্রকাশ্য কারবার। কোন দল যে কীভাবে ‘খেলছে’—মাথা ঝিমঝিম করছে তবু বুঝেই উঠতে পারছেন না গ্রামবাসীরা। তার মধ্যে ধারাবাহিকভাবে চলেছে ভোটের দফা ও কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে তরজা এবং বিভিন্ন কোর্টে দৌড়োদৌড়ি। নির্বাচন ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত ১৬ জন নিহতও হয়েছেন। এই ভোটের সর্বশেষ বলি বুধবার দেগঙ্গায় এক স্কুলপড়ুয়া।
অবশেষে ভোট হতে চলেছে বৃষ্টির মধ্যে ৮ জুলাই। রাজ্যের ২২টি জেলায় ৬১,৬৩৬টি ভোট কেন্দ্রে ৫ কোটি ৬৭ লক্ষ ২১ হাজারের বেশি ভোটার ভোট দেবেন। গঠিত হবে ৩,৩১৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত, ৩৪১টি পঞ্চায়েত সমিতি এবং ২১টি জেলা পরিষদ। ত্রিস্তরে মোট ৭৩,৮৮৭টি আসনের মধ্যে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় ঘোষিত হয়েছে ৯০০৯টি বা ১২ শতাংশ আসনে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বীরভূম, উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব বর্ধমান প্রভৃতি জেলা এই ব্যাপারে রাজনৈতিক মহলের নজর কেড়েছে। ফলে ভোট নেওয়া হবে ৮৮ শতাংশ আসনের জন্য। রাজ্যের সশস্ত্র পুলিস থাকবে ৭০ হাজার। আসছে ৬৫ হাজারের বেশি আধাসেনাও। রাজনীতি নিছক কৌশলের মারপ্যাঁচে আর আবদ্ধ নয়। কৌশলের বদলে বাড়ছে হিংসা। এজন্য দায়ী সব পক্ষই। নির্বাচন কমিশনের উচিত, এই কথা মাথায় রেখেই নির্বাচনের সবক’টি পর্ব সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হওয়ার চেষ্টা গ্রহণ। রাজনৈতিক দলগুলিরও সংযম প্রার্থনীয়। মানুষকে ভালো রাখার জন্যই তো ত্রিস্তর পঞ্চায়েত গঠন। সেখানে মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হলে, কিছু লোক অকালে মারা গেলে, এমন নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা নিয়েই প্রশ্ন উঠবে। প্রশ্নের মুখে পড়বে কমিশনের যোগ্যতা, সর্বোপরি বাংলার গণতন্ত্র।