পারিবারিক ধর্মকর্ম পালনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ। সন্তানের কর্মসাফল্যে গর্ব। গবেষণায় অগ্রগতি। ... বিশদ
এই বিষয়ে বেশিরভাগ নাগরিকই কমবেশি সচেতন। তা সত্ত্বেও সব পরিবার বিমার সুরক্ষা বলয়ে প্রবেশ করতে পারে না। কারণ আমাদের সরকার সবক্ষেত্রে সকলকে বিমার সুরক্ষা দেয় না। আবার ব্যক্তিগতভাবে বিমা করাটাও মুখের কথা নয়। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরও দেশের অগণিত পরিবার গরিব। ২০১১ সালের পর জনগণনার তথ্য প্রকাশ করেনি সরকার। তাই আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ভারতে গরিব এবং দারিদ্র্যসীমার নীচের পরিবারের সংখ্যা নিয়ে অর্থনীতির পণ্ডিতরাই অন্ধকারে। তবে ২০১১-১২ সালে এনএসএসও (রঙ্গরাজন) সার্ভে অনুসারে, দেশে গরিব মানুষ ছিল মোট জনসংখ্যার ২৯.৫ শতাংশ বা ৩৬ কোটি ৩০ লক্ষ। অন্যদিকে, ২০২৩ সালের পিএলএফএস সার্ভে বলছে, ভারতে গরিব মানুষের সংখ্যা এখনও প্রায় ৩৭ কোটি ২১ লক্ষ বা ২৬.৯ শতাংশ। খেয়াল করুন, দরিদ্র মানুষের শতাংশ হার কমলেও জনসংখ্যার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে, গত এক দশকে মোট গরিবের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে প্রায় ১ কোটি! এ এক বিরাট দুঃসংবাদ। গরিবির বিরুদ্ধে সফল লড়াইয়ের যে দাবি মোদি সরকার এক দশক যাবৎ করে চলেছে, এই সংখ্যা সেটাই নস্যাৎ করে দেয় বইকি। তবু নাম কেনার বাতিক দূর হয় না। যেমন ফের চালু হতে চলেছে আরও দুটি কেন্দ্রীয় বিমা প্রকল্প। আপাতত খবর, তার নাম হবে অন্ত্যোদয় শ্রমিক সুরক্ষা যোজনা। ‘প্রধানমন্ত্রী’ নামাঙ্কিত দুটি বিমা যোজনা চালু থাকার পরেও এই প্রকল্প কেন? সেই প্রশ্ন ইতিমধ্যেই উঠেছে। আগের যোজনা দুটি কিনতে গ্রাহককেই প্রিমিয়াম গুনতে হয়। এবারও একই কীর্তি! ভোটের আগে শ্রমিক দরদের নামে শ্রমিকদেরই পয়সায় বিমা চালু করার প্ল্যান হয়েছে। তার সঙ্গে ‘বাড়তি পাওনা’—২৮ কোটি গরিব শ্রমিকের গোনা বিপুল প্রিমিয়ামের টাকা ঢুকবে চারটি বেসরকারি কোম্পানিতে। একাধিক দক্ষ রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থা চালু থাকতেও বেসরকারি সংস্থাগুলির প্রতি এই বদান্যতা কেন? উঠে গিয়েছে সেই প্রশ্নও।
বিমা কিনে রাখা মানেই কিন্তু রক্ষাকবচ পেয়ে যাওয়া নয়। গ্রাহকের দায়িত্ব এখানেই শেষ হয়ে যায় না। বিমাকারীর আইনি উত্তরাধিকারীর হাতে বিমাজনিত ক্ষতিপূরণের অর্থ যথানিয়মে পৌঁছনোটাই আসল কথা। কিন্তু দেখা যায়, দুঃসময়ে সেই ন্যায্য প্রাপ্য হাতে পেতে অনেক বিমা গ্রাহকের পরিবারকেই নাকাল হতে হয়। তুচ্ছ কিছু অজুহাতে বা ক্ষুদ্র অক্ষরের কারসাজিতে সেই দাবি নাকচও হয়ে যায় কখনও। শিক্ষিত এবং যথেষ্ট সচেতন নাগরিকের পরিবারও অনেক সময় বিমা করে ঠকে যায়। সেখানে ‘অন্ত্যোদয় শ্রমিক সুরক্ষা যোজনা’র গ্রাহকরা যে বাস্তবেই ভীষণ দুর্বল শ্রেণির মানুষ, তাতে কোনও সংশয় নেই। তাই বিমা করানোর আগে শ্রমিক পরিবারগুলিকে সমস্ত শর্ত বিশদে জানানো জরুরি। সবচেয়ে বেশি দরকার ক্ষুদ্র অক্ষরের কারসাজি আগেভাগে খোলসা করে দেওয়া। বিমা চালু করার আগে বিমাকারীর যোগ্যতা খুঁটিয়ে দেখা হোক। নিশ্চিত করা হোক তাঁর নমিনির যোগ্যতাও। দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর যেন নমিনিকে কোনওভাবেই হতাশ করা না-হয়। ভারত ‘অমৃতকাল’ থেকে ‘কর্তব্যকাল’-এ যখন প্রবেশ করেছে, তখন এই কর্তব্য সরকারকেই পালন করতে হবে বিশেষ দায়িত্বের সঙ্গে। গরিব শ্রেণির ‘সামান্য’ প্রিমিয়ামের দায় সরকারেরই নেওয়া উচিত। মোদি সরকার সেই দায়িত্ব এড়িয়ে গিয়ে কর্তব্যকালকেই কটাক্ষ করছে না কি?