পারিবারিক ধর্মকর্ম পালনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ। সন্তানের কর্মসাফল্যে গর্ব। গবেষণায় অগ্রগতি। ... বিশদ
বস্তুত গণতন্ত্র ফেরানোর জন্য মানুষের এইভাবে আত্মবলিদানের দৃষ্টান্ত স্বাধীন ভারতে আর নেই। তাই ২১ জুলাই দিনটিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতি বছর ‘শহিদ দিবস’ হিসেবে পালন করে চলেছেন। ১৯৯৩ সালে কংগ্রেস ছিল বাংলায় প্রধান বিরোধী দল। ১৯৭৭ সালে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের সরকারের পতনের পর থেকেই দলটি রাজ্যে বিরোধী আসনে। কিন্তু কংগ্রেসকে এখানে চাঙ্গা করার ব্যাপারে ইন্দিরা গান্ধী থেকে নরসিমা রাও পর্যন্ত কোনও প্রধানমন্ত্রীকেই আন্তরিক মনে হয়নি। ১৯৯৩ সালে ২১ জুলাই ‘সরকারি মদতে গণহত্যার’ পরও তৎকালীন কংগ্রেসি প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাওয়ের কাছ থেকে আশানুরূপ প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। সে-সময় প্রদেশ কংগ্রেসের ‘মাথা’ ছিলেন যাঁরা, তাঁদেরকেও মনে হতো ‘বসুর হাতে তামাক সেবনকারী’। সেই থেকেই রাজনীতিতে ‘তরমুজ’ শব্দটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ভাগ্যের এমনই পরিহাস রাজ্য কংগ্রেস আজ সিপিএমেরই ভোটের পার্টনার! এসব যে ভিতরে ভিতরে চলত, তা বিলক্ষণ জানতেন মমতা। তাই তিনি সার বুঝেছিলেন, এই কংগ্রেসকে দিয়ে আর যাই হোক রাইটার্স থেকে ‘লাল পতাকা’ নামানো সম্ভব হবে না। বেশি দেরি না করে কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে যান তিনি। বছর পয়লা ১৯৯৮, শুরু হয় তাঁর নতুন রাজনৈতিক যাত্রা। আত্মপ্রকাশ করে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস। তারপর মমতা নেতৃত্ব দিয়েছেন একের পর এক গণআন্দোলনের। অবশেষে হার মানল সিপিএম, অষ্টম বামফ্রন্ট সরকার গড়ার স্বপ্ন চুরমার হল।
২০ মে, ২০১১ তারিখে মমতার নেতৃত্বে রাইটার্সে কায়েম হল মা-মাটি-মানুষের সরকার। ঘটনাটি সারা পৃথিবী দেখল একটি প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করা হিসেবে। বাংলার গণতন্ত্রের এই দীর্ঘ যাত্রাপথ সারা দেশকেই আলো দেখিয়েছে বললে অত্যুক্তি হবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ বাংলার বিরোধী নেত্রী নন। ১২ বছর যাবৎ তিনিই মুখ্যমন্ত্রী। তবে দেশের অন্যতম প্রধান বিরোধী নেতা। ‘বাংলার বাঘিনী’-কেই যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিরোধী নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভয় পান, তা সম্প্রতি একাধিকবার বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। পরবর্তী লোকসভার নির্বাচন আর মাস কয়েক বাদে। এই উপলক্ষ্যে ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে গেরুয়া-বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ জোট। সারা দেশ দেখেছে, এই জোটের উজ্জ্বল মধ্যমণির নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘ইন্ডিয়া’-র মুখে ‘জিতেগা ভারত’ আওয়াজে, কোনও সন্দেহ নেই, কাঁপুনি ধরে গিয়েছে মোদির ভারতের। ‘মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’ বুলি ক্রমে নিভু নিভু! ২১ জুলাই শহিদ দিবসের তাৎপর্য, এই যুগসন্ধিক্ষণ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই গণসমাবেশের দু-তিনদিন আগে থেকেই গোটা বাংলার গন্তব্য হয়ে উঠেছে কলকাতা। রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিকতা খোয়ানো বঙ্গ বিজেপি কি এজন্যই একই দিনে (আজ, শুক্রবার) রাজ্যজুড়ে বিডিও ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে? একটি বালকও জানে, এই কর্মসূচি পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়ার চেষ্টা ছাড়া কিছু নয়, যা শুধু হেরোরাই করে থাকে। এমন দুষ্টুমি, পরের দানে জেতার কোনও উপায় হতে পারে না। বরং এর দ্বারা ফের শান্তি বিঘ্নিত হলে, ক্ষয়ক্ষতি হলে মানুষের, তার দায় অবশ্যই নিতে হবে এমন ভুল কর্মসূচির আহ্বায়কদেরই।