পারিবারিক ধর্মকর্ম পালনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ। সন্তানের কর্মসাফল্যে গর্ব। গবেষণায় অগ্রগতি। ... বিশদ
কিন্তু ছাপ্পান্ন ইঞ্চির হুব্বা রাজনীতির সৌজন্যে এনডিএ ক্রমে সোনার পাথরবাটির রূপ নিচ্ছে। যে কয়টি ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকার টিকে রয়েছে, তাদের ‘মহিমা’য় মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। সবচেয়ে করুণ দশা হয়েছে পাহাড়ের কোলে ছোট্ট সুন্দর রাজ্য মণিপুরের। যেসব রাজ্যে বিরোধী পার্টির সরকার চলছে তাদের অপারেশন লোটাসের ভয় দেখানো হচ্ছে অহরহ। সব মিলিয়ে বিজেপি আজ কোনও বৃহৎ রাজনৈতিক দলের নাম নয়, এক সাক্ষাৎ আতঙ্ক—পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রের সামনে সর্ববৃহৎ চ্যালেঞ্জ। ভারত এই চ্যালেঞ্জে হারবে না জিতবে, সেটাই নির্ধারিত হবে ২০২৪-এর এপ্রিল-মে মাসের নির্বাচনে। রাজনৈতিক মহল জানে, মোদি বাহিনীকে হারাবার একটাই রাস্তা—মানুষের গেরুয়া-বিরোধী জোট। একটি বা দুটি দলের পক্ষে এত বড় কাজ হাসিল সম্ভব নয়। জরুরি হল উন্নয়ন, ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সব দলের ঐক্য। আঞ্চলিক কিছু বাধ্যবাধকতাকে উপেক্ষা করেই, এই ‘মহাজোট’ গঠনের কাজ ইতিমধ্যেই অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে। কিছুদিন আগে পাটনায় অনুষ্ঠিত এই বিষয়ক বৈঠকের মধ্যমণি ছিলেন বাংলার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার তো বটেই, সারা দেশের অনেকেই চান—মোদি-শাহি নামক জগদ্দলের অপসারণে অগ্নিকন্যাই নেতৃত্ব দেবেন, কারণ একাধিক অগ্নিপরীক্ষায় ইতিমধ্যেই তিনি সসম্মানে উত্তীর্ণ। তাই নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহদের প্রধান লক্ষ্য দেশের বিরোধী নেতাদের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই সবার আগে রুখে দেওয়া। বাংলার জনভিত্তি হল তার গ্রাম। ত্রিস্তর পঞ্চায়েতই গ্রাম স্বরাজ গঠনের হাতিয়ার। গ্রামের ভোটের ফলাফলেই পরিষ্কার ইঙ্গিত থাকে, রাজ্যটা বস্তুত কার দখলে। পরববর্তী অন্য (বিধানসভা/ লোকসভা) ভোটের ফলাফলও এই জনমতের নিরিখে আন্দাজ করে নেওয়া যায়। গত লোকসভার ভোটে বিজেপি বাংলার মাটিতে অপ্রত্যাশিত ভালো ফল করেছিল। সেটাকেই সত্যি ভেবে নিয়ে একুশের বিধানসভা ভোটের আগে আকাশকুসুম দেখেছিল গোটা গেরুয়া শিবির।
সেই স্বপ্ন চুরমার হতেও দেরি লাগেনি। সাম্প্রতিক এক ঘরোয়া সমীক্ষায় বিজেপি আরও জেনে গিয়েছে, বিধানসভা ভোটের পরিস্থিতিটাও উধাও। তাই গ্রামের ভোটের মাধ্যমে, লোকসভা নির্বাচনের আগে, ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া ছিল মোদির পার্টি। কিন্তু তার জন্য যেটা দরকার ছিল তার কিছুই করেনি বিজেপি। বাংলার মানুষের মন জয়ের পরিবর্তে তাদের দুঃখ-কষ্ট বৃদ্ধিরই চেষ্টা করেছে। দিল্লিওয়ালাদের হীন কৌশলে বঙ্গ বিজেপি শুধু সিলমোহরই দেয়নি, তার সঙ্গে সংগতও করে গিয়েছে সমানতালে। তারা ভেবেছিল, মানুষের কষ্টের দায়টা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘাড়ে চাপিয়েই বাজিমাত করবে পঞ্চায়েতে। রাজনৈতিক মহলের আশঙ্কা মতোই ব্যুমেরাং হয়েছে সেই অঙ্ক। রাজ্যজুড়ে মানুষ ফের আস্থা রেখেছেন মমতার মানবিক রাজনীতির উপরেই। বিজেপি কি সত্যিই প্রাসঙ্গিক থাকতে চায় বাংলায়? তাহলে কেন্দ্রীয় সরকার বাংলার মানুষের ভালোর জন্য এখনও কিছু করুক। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে কেন্দ্রীয় ক্ষমতার অধিকারী যে-কেউ, মানুষের কল্যাণে বহু বহু কিছু করতে পারেন। ভোট মিটে গিয়েছে। এবার অন্তত, ইতি পড়ুক হিংসায়। নতুন গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদগুলি যাতে ফের গ্রামের উন্নয়নে কাজ করে যেতে পারে তার জন্য যথার্থ রাজনৈতিক সহযোগীরই ভূমিকা নিক সবক’টি বিরোধী দল।