পারিবারিক ধর্মকর্ম পালনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ। সন্তানের কর্মসাফল্যে গর্ব। গবেষণায় অগ্রগতি। ... বিশদ
একরত্তি কন্যাসন্তানকে নিয়ে রায় পরিবারে ধুন্ধুমার আয়োজন। ছোট্ট রাইয়ের ভালোমন্দের খুঁটিনাটি এক্কেবারে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলছেন পরিবারের সকলেই। অন্নপ্রাশন থেকে শুরু করে বিভিন্ন মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের দিনক্ষণ আর যাবতীয় তথ্য পঞ্জিকার পাতা উল্টেপাল্টে ইতিমধ্যে দেখে নিয়েছেন একরত্তির দাদু-ঠাকুরমারা। কিন্তু কান বেঁধানোর অনুষ্ঠান আর বয়স নিয়ে রীতিমতো চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন বাড়ির প্রায় সকলেই। ছোট্ট রাইয়ের ঠিক কোন বয়সে কান বেঁধানো হবে বা কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে এই নিয়ে পরিবারের অন্দরেই নানা মুনির নানা মত। এই পরিস্থিতিতে অবশ্য হাল আমলের পদ্ধতিকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন রাইয়ের মা-বাবা।
একটা সময় ছিল যখন বাড়িতেই কান বেঁধানোর ব্যবস্থা করা হতো। কাঁথা সেলাইয়ের সূচ গরম করে কান ফুটিয়ে দেওয়ার পরে সুতো ঘুরিয়ে কানের মধ্যেই সুতো বেঁধে দেওয়া হতো, তারপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষত শুকিয়ে গেলে পরিয়ে দেওয়া হতো সোনার ছোট রিং। ছোট্ট একরত্তির তুলতুলে মুখের সঙ্গে দিব্যি মানানসই হয়ে উঠত সেই দুল।
এখন ঘরোয়া পদ্ধতির পরিবর্তে বেশিরভাগেরই পছন্দ আধুনিক গান-শট পিয়ার্সিং। অনেকে আবার আস্থা রাখছেন সার্জিকাল নিডল ব্যবহার করে কান বেঁধানোর ব্যবস্থার উপর। এতে সুরক্ষা নিশ্চিত হয় অনেকখানি।
পিয়ার্সিং-এর সময় আর পদ্ধতি নিয়েও নানা ধারণা রয়েছে। অনেকেই বলেন একেবারে ছোট বয়সে শিশুদের কান বিঁধিয়ে দিলে কম ব্যথা লাগে। আবার অনেকের মত, একেবারে ছোট বয়সে কান বেঁধানো উচিত নয়। কারণ অনেক সময়ই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুটো কানের ফুটোর মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা সম্ভব হয় না। আবার ছোট বয়সে কান বেঁধানোর বন্দোবস্ত করা হলে শিশুদের বিভিন্ন রকমের সংক্রমণেরও সম্ভাবনা থাকে। কাজেই এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাড়ির ছোট সদস্যটির কান বেঁধানোর ব্যবস্থা করা উচিত। এক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন।
>> অভিজ্ঞ কোনও ব্যক্তিকে দিয়েই কান বেঁধানোর ব্যবস্থা করা উচিত। বাড়ির আশপাশে কোথায় পিয়ার্সিং পার্লার রয়েছে সেই সম্পর্কিত খুঁটিনাটি তথ্য জেনে নিন। ঘরোয়া পদ্ধতিতে কান বেঁধানোর ব্যবস্থা সুরক্ষার কথা ভেবে এড়িয়ে যাওয়া শ্রেয়।
>> আপনার শিশুর ছ’মাস বয়স থেকে কান ফোটানোর কথা ভাবতে পারেন। শিশুর বয়স এক-দেড় বছর হলেও ক্ষতি নেই।
>> আপনার শিশু আদৌ মানসিকভাবে প্রস্তুত কি না অভিভাবক হিসেবে তা দেখে নেওয়া প্রয়োজন। যদি শিশু কোনও কারণে বেশি ভয় পায়, তা হলে তাকে জোর না করাই ভালো।
>> অনেক পিয়ার্সিং পার্লারেই স্প্রে অ্যানাস্থেশিয়া ব্যবহার করে সার্জিকাল নিডল দিয়ে কান বেঁধানো হয়। এরপর পরিয়ে দেওয়া হয় ইমিটেশনের দুল। এই ধরনের ইমিটেশনের দুল দুই থেকে তিন দিন শিশুর কানে পরিয়ে রাখবেন, তারপর খুলে দিয়ে সোনা কিংবা রুপোর দুল পরিয়ে দিতে পারেন। দুলের বদলে সরু নিমের কাঠি ব্যবহার করতে পারেন। তাতে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে না এবং কানে নতুন করে কোনও সমস্যা তৈরি হয় না।
>> এখন বিভিন্ন পিয়ার্সিং পার্লারে সার্জিকাল স্টেনলেস দুল কিংবা গান শটের পরে গোল্ড প্লেটেড পিয়ার্সিং পিনও ব্যবহার করা হয়। এগুলি ব্যবহার করা এখন অনেকটাই নিরাপদ। তবে, এক্ষেত্রেও তিন দিন পরে স্টেনলেস পিন কিংবা দুল খুলে রেখে সোনা বা রুপোর দুল শিশুকে পরিয়ে দেবেন। যে পার্লারে পিয়ার্সিং-এর ব্যবস্থা রয়েছে, সেখানে হাইজিন ঠিকভাবে মানা হয় কি না, দেখে নিন সেটাও।
>> সংক্রমণ এড়াতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক মলম ব্যবহার করতে পারেন।
>> কান বেঁধানোর পরে শিশুর কানে ব্যথা হতে পারে। ব্যথা কমে গেলে হাত দিয়ে ধীরে ধীরে দুলগুলো ঘুরিয়ে দেবেন দিনে কয়েকবার।
ছোট বয়সে অনেক শিশুরই ত্বকে নানারকমের অ্যালার্জির সমস্যা দেখা যায়। আপনার শিশুরও যদি এই ধরনের কোনও সমস্যা থাকে, তাহলে শিশুর কান বেঁধানোর আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। সেক্ষেত্রে কান বেঁধানো একটু দেরিতে করতে হলে সেটাই করুন। বিশেষ কোনও জেল যদি ক্ষতস্থানে ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়, তা হলে আগেই তা কিনে বাড়িতে রেখে দিন।
একটা সময়ে ষোড়শ সংস্কারের কথা মাথায় রেখে কন্যাশিশু জন্মানোর তৃতীয় কিংবা পঞ্চম বছরে ‘কর্ণবেধ’ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হতো। রীতিমতো ঘরোয়া নিয়মেই পালন করা হতো যাবতীয় পদ্ধতি। এখন অবশ্য সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনেক নিয়মেরই পরিবর্তন এসেছে, কর্ণবেধ অনুষ্ঠানও
তারই একটা অংশমাত্র। কাজেই, পুরনো নীতি-নিয়মের সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনেই শিশুর কান বেঁধানোর আয়োজন করুন।
কানে দুল পরলে যে কোনও শিশুরই মুখশ্রীতে বদল আসে। দেখতে আরও সুন্দর লাগে একরত্তিকে। কিন্তু দেখতে ভালো লাগবে, সেই যুক্তিতে শিশুর নরম ত্বকে বেশি আগে আঘাত দেবেন না। প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে তবেই এই কাজের পরিকল্পনা করুন।
মডেল: অনুমেঘা মুখোপাধ্যায়