পারিবারিক ধর্মকর্ম পালনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ। সন্তানের কর্মসাফল্যে গর্ব। গবেষণায় অগ্রগতি। ... বিশদ
আলিয়া ভট্টের রূপরুটিনে সম্প্রতি দেখা মিলেছিল একখণ্ড পাথরের! তারপর থেকেই এই বস্তুটি নিয়ে নতুন করে চর্চা শুরু হয় রূপ পরিচর্যায়। আদতে এক টুকরো পাথর হলেও এই পাথরের কারসাজিতে মুখের ত্বকে ঘটতে পারে আমূল পরিবর্তন। ফ্যাশনের ভাষায় একে বলে ‘জেড স্টোন রোলার’। অনেকেই রাতে ঘুমানোর আগে এই জেড স্টোন রোলার দিয়ে মুখের ত্বকের পরিচর্যা করেন। রেজারের হাতলে ব্লেডের জায়গায় সেট করা একখণ্ড পাথর। আর এতেই ত্বকচর্চায় বাজিমাত।
কী এই জেড স্টোন রোলার?
জেড ফেস স্টোন রোলার তৈরি করা হয় জেড অথবা কোয়ার্ৎজ নামক পাথর থেকে। প্রাচীনকালে চীনে যেসব রূপচর্চার চল ছিল, তার মধ্যে এই জেড পাথর অন্যতম। এই পাথরের দ্বারা ত্বকে ম্যাসাজ করলে লিম্ফ্যাটিকের নিঃসরণ বৃদ্ধি পায়। এই পাথর মূলত ত্বকের রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে ত্বকের চাপ কমায় এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে ত্বককে প্রশান্ত করে। শুধু চীন নয়, কোরিয়া-জাপান সহ এশিয়ার নানা দেশেই এই জেড স্টোন রোলার বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
রোলারের গুণ
রূপবিশেষজ্ঞদের দাবি, জেড রোলার ত্বককে টানটান রেখে তাতে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। চীন দেশের বিশ্বাস অনুযায়ী, জেড স্টোন রোলার কোনও সাধারণ পাথর নয়। বরং এতে রয়েছে নিরাময়ের ক্ষমতা। ত্বকের ক্লান্তি দূর করে ত্বককে ঠান্ডা ও প্রশান্ত রাখতে এর জুড়ি মেলা ভার। রূপবিশেষজ্ঞ শেহনাজ হুসেনের মতে, ‘আমাদের ত্বকে ঠান্ডা বরফ ঘষলে যেমন ত্বকের আরাম হয়, ক্লান্তি দূর হয়, ত্বক কোমল হয়— জেড স্টোনও তেমনই।’ সারা দিনের শ্রম, দৌড়ঝাঁপ, পরিবশের দূষণ এই সবকিছুর প্রভাব ত্বকের উপর পড়ে। ত্বক এতে ঔজ্জ্বল্য হারায়। তাই ত্বকের দেখভাল করার অন্যতম শর্ত, এন্ডোডার্ম অর্থাৎ ত্বকের একেবারে ভিতরের অংশে রক্তসঞ্চালন প্রক্রিয়াকে মসৃণ রাখা। জেড স্টোন রোলার এই কাজটিতে বিশেষ সাহায্য করে। ডার্ক সার্কল দূর করা থেকে ত্বকের ফোলাভাব কমানো, বলিরেখা প্রতিরোধ ইত্যাদি নানা কাজেই দড় হয়ে উঠছে এই একখণ্ড পাথর। এমনকী, অনেকের মুখের ত্বকে রঙের কিছু অসামঞ্জস্যতা থাকে। কারও ক্ষেত্রে চোখের চারপাশ একটু বেশি শ্যামলা হয়। এই রোলার সেই ধরনের অসঙ্গতি দূর করতেও বিশেষ কাজে আসে। এছাড়া নিত্য এই রোলার ব্যবহার করার ফলে ত্বকের ইলাস্টিসিটি বাড়ে।
এছাড়াও জেড রোলারের আলাদা একটি বিশেষ গুণ আছে। জেড রোলার পরোক্ষে অন্যান্য স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। অনেকেই ত্বকে সিরাম, ফেসিয়াল অয়েল, ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেন। জেড স্টোন রোলারের সাহায্যে নিয়মিত ত্বক মাসাজ করলে এসব স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট খুব ভালোভাবে ত্বকের সর্বত্র মিশে যায় এবং কার্যকারিতাও বাড়ে। দুনিয়াজুড়ে বিশেষজ্ঞরা এই ফেস রোলার ব্যবহারের আরও কয়েকটি ইতিবাচক দিকের কথা বলেন। যেমন:
• মুখে রোলার দিয়ে মাসাজ করলে ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির পাশাপাশি শরীরে ডোপামিন বা গুড হরমোন ক্ষরণ হয়। ফলে মন ভালো থাকে।
• অ্যান্টি এজিং ক্রিমের সঙ্গে সঙ্গে এই রোলার ব্যবহার করলে দ্বিগুণ লাভ হয়।
• মুখের কোনও অংশকে আরও তীক্ষ্ণ করে তুলতে চাইলেও এই রোলারের সাহায্য নেওয়া যায়। দীর্ঘদিন ধরে ফেস রোলারের মাসাজের ফলে গালে মেদ জমে না। থুতনি, নাকের হাড় ইত্যাদি তীক্ষ্ণ করার কাজেও এই রোলার কার্যকর।
রোলার ব্যবহারের সাবধানতা
জেড স্টোন রোলারের অনেক উপকারিতা যেমন রয়েছে, তেমনই এর সুষ্ঠু ব্যবহারও জানা প্রয়োজন। ভুলভাবে রোলার ব্যবহার করলে বরং হিতে বিপরীত হতে পারে। যেহেতু ঘাড়, কপাল, গাল, চোখ সব জায়গাতেই এই রোলার ব্যবহার করা হয়, তাই নিয়ম না জেনে রোলার চালালে এই সব অংশের পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই ত্বককে সুরক্ষিত রাখতে জেড রোলার ব্যবহারের কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়।
• মুখ ধুয়ে নিন: জেড রোলার ব্যবহারের আগে প্রথমেই মুখকে মেকআপবিহীন রাখুন। ভালো করে মুখ ধুয়ে শুকনো করে তবেই রোলার চালান। হাইড্রেট না করে রোলার চালালে তা ত্বকের পক্ষে ক্ষতিকর।
• ক্লেনজিংয়ে আস্থা: রোলার প্রয়োগের আগে ঠান্ডা জলে মুখ ধোওয়ার পর একটি ভালো মানের ক্লেনজার ব্যবহার করুন। চোখের মেকআপ, ঠোঁটের লিপস্টিক, ত্বকে বসে থাকা তেলাভাব ভালোভাবে উঠে যায় এমন ফেশওয়াশ ও ক্লেনজার ব্যবহার করুন।
• ময়েশ্চারাইজিং: শুধু ত্বক পরিষ্কার করেই কাজ কিন্তু ফুরনোর নয়। এরপর টোনিং ও ময়েশ্চারাইজিংও করতে হবে। ত্বক পরিচর্যার এই প্রাথমিক ধাপগুলো শেষ করে তবেই রোলার ব্যবহার করুন। ময়েশ্চারাইজারের বদলে ভিটামিন সিরামও ব্যবহার করতে পারেন।
• ফ্রিজে রাখুন: জেড রোলার যত ঠান্ডা হবে, ত্বকের জন্য তা ততই উপকারী। সাধারণ হাতের তালুর চাপে হওয়া মাসাজে যে উপকার মেলে, সেই একই মাসাজ এই ঠান্ডা জেড রোলার দিয়ে করলে উপকারের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। তাই রোলারটিকে ফ্রিজের সাধারণ তাকে রাখুন।
সুতরাং ফি-দিন একখণ্ড পাথর আর কিছুক্ষণের মি-টাইম পাথেয় করে রূপচর্চায় যোগ করুন আলাদা ছোঁয়াচ।