পারিবারিক ধর্মকর্ম পালনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ। সন্তানের কর্মসাফল্যে গর্ব। গবেষণায় অগ্রগতি। ... বিশদ
কুচবরণ কন্যার মেঘবরণ কেশ? নাহ্ এ যুগে কেবল মেঘবরণেই সন্তুষ্ট নয় তরুণীরা। যুগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তরুণরাও বিশ্বাস করে, সবার রঙে রং মেশাতে হবে। অতএব কালো চুলে ইতিউতি উঁকি দেয় ম্যাজেন্টার হাইলাইটস। কোথাও আবার লাইট ব্লন্ড। আর সল্ট অ্যান্ড পেপার হলে তো কথাই নেই। চুল পাকলে আগের প্রজন্মের অনেকেই বেশ দুঃখ পেত। হালের টল ডার্ক হ্যান্ডসাম পুরুষের মাথায় কালো-সাদা থুড়ি নুন-মরিচের বন্ধুত্বে গ্ল্যামার কোশেন্ট চরচরিয়ে ঊর্ধ্বগামী।
রঙের চার রকম
হেয়ার কালারিং অনেকদিনই ফ্যাশন ট্রেন্ডে। তবে তার ভালোমন্দ এবং যথাযথ প্রয়োগ জেনে রাখা জরুরি। তাই নিয়েই কথা হচ্ছিল এ শহরের ফিউজ স্যালঁ-র কর্ণধার অভিরূপ নন্দীর সঙ্গে। তিনি জানালেন, হেয়ার কালারিং-এ ক্রেতার চাহিদার দিকটা মাথায় রাখলে চারটে কালার নিয়ে মূলত কথা বলা দরকার। প্রথমত হাইলাইটস, যেটায় চিরুনি দিয়ে উইভ করার মতো করে কালার হয়। সোয়েটার যেভাবে বোনা হয়, এটাও তেমন। হাইলাইটস-এ ছোট ছোট টুকরো বা pieces সারা মাথায় ছড়ানো যেতে পারে। কেউ সেটা আংশিকভাবে করাতে পারেন। কেউ আবার হয়তো একটা সাইডে করালেন। কালারিং-এ দ্বিতীয় স্তরে আছে বালেয়াজ। এটা খুবই সাম্প্রতিক বলা যেতে পারে, জানালেন অভিরূপ। এক্ষেত্রে কালারটা উইভ না করে হাত দিয়ে স্কেচ করা হয়। তাঁর কথায়, ‘এতে চুলগুলো এমনভাবে তোলা হয় যে একটা কোনাকুনি ব্যাক প্যানেল বেরিয়ে আসে। তাতে হাত দিয়ে কালার স্কেচ করে চুলে লাগানো হয়। এতে কালারটা উপরের দিকে ব্লেন্ডেড থাকে। যত চুলের নীচের দিকে নামে, তত ভালো করে দেখা বা বোঝা যায়।’ অর্থাৎ উপরে সূক্ষ্ম এবং নীচের দিকে স্পষ্ট। বালেয়াজ এই কারণেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে বলে দাবি তাঁর।
এরপরের অর্থাৎ তৃতীয় কালারিং স্তর হচ্ছে অমব্রে। এক্ষেত্রে গোড়ার দিক বা রুটস থাকবে ডার্ক। যত নীচে নামবে, তত লাইট হবে। এখানে প্যানেলের কোনও ব্যাপার নেই। গোটা চুলটাই উপরের দিক থেকে ডার্ক, তারপর মাঝে মিডিয়াম লাইট আর একেবারে নীচে লাইট হবে। কালারিং-এর চতুর্থ স্তর হল গ্লোবাল হেয়ার কালার। এতে চুলের পুরো রংটা পাল্টানো হয়। মাঝখানে বালেয়াজ বা হাইলাইটস থাকে না। এক্ষেত্রে একটা হেয়ার কালারই প্রাধান্য পাবে ক্রেতার পছন্দমতো। অনেকে আবার গ্লোবালের সঙ্গে বালেয়াজ বা অমব্রে বা হাইলাইটস কম্বোও চান।
অভিরূপ বললেন, ‘ধরা যাক কারও চুলের প্রাকৃতিকভাবে যে রং রয়েছে, সে সেটায় হাইলাইটস চাইল। তার ন্যাচারাল হেয়ারের উপরেই হাইলাইটস সুন্দর একটা ‘এফেক্ট’ তৈরি করল। আবার কেউ হয়তো চাইল হাইলাইটস করার পরে বাকি ন্যাচারাল হেয়ারে কালার করাতে। তখন হাইলাইটস-এর সঙ্গে হবে গ্লোবাল। কেউ আবার চায় বালেয়াজ করিয়ে প্যানেলস-এর সঙ্গে বাকি হেয়ারে গ্লোবাল করাতে। এভাবে কম্বিনেশন কালারিংও করা হয়ে থাকে পছন্দ অনুযায়ী।’
রং চক্র ও ত্বকের রং
আরও একটা দিক বিশদে বললেন হেয়ার এক্সপার্ট। কালারিং-এ একটা কালার হুইল আছে। এই হুইল বা চক্রের একদিকে আছে রেড, ইয়েলো, অরেঞ্জ। এই তিনটিকে ধরা হয় ওয়ার্ম টোন। এই চক্রের উল্টো দিকে আছে ভায়োলেট, গ্রিন আর ব্লু। এগুলো কুল টোন। এই টোনগুলোর উপরে ভিত্তি করেই কালারিং হয়। ক্রেতা যে সব কালার চায়, সেগুলো এই চক্র থেকে মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করে দেওয়া হয়, বললেন অভিজিৎ। এবার আসা যাক স্কিন টোনের কথায়। অভিরূপের কাছে জানতে চেয়েছিলাম ভারতীয় ত্বকের জন্য কোন কোন ধরনের হেয়ার কালার উপযুক্ত। কারণ বিদেশিদের জন্য যে রং আদর্শ, সেটা ভারতীয়দের জন্য ঠিক নাই হতে পারে। তিনি বললেন, ‘মনে রাখতে হবে, ভারতীয়দের ত্বক এবং চুলে ডার্ক পিগমেন্টেশন বেশি হয়। সাদা চামড়া যাদের, তাদের পিগমেন্টেশন ইয়েলোর দিকে হয়। ভারতীয়দের হেয়ার ও স্কিন টোনের পিগমেন্টেশন রেড বা অরেঞ্জের দিকে হয় বলে সেটা অনেক ডার্ক হয়। আমাদের চুলের রং এমনিতে কালো বা খয়েরি যা-ই থাক, যখন তাতে কালার করা হচ্ছে সেটা লাইট হচ্ছে, কারণ তাতে ব্লিচ হচ্ছে। ব্লিচকে এখন বলা হয় ‘প্রি-লাইট’। চুলের সাধারণ রং আরও হালকা হয় এতে। তাই ভারতীয়দের রেড বা অরেঞ্জ পিগমেন্টেশন কমাতে কালার হুইল বা চক্রের কুল টোন দিতে হয়। আমাদের স্কিন বা হেয়ার ওয়ার্ম-এর দিকে বলে কুল টোন দিয়ে তা নিউট্রালাইজ করা হয়। ফলে ব্লু, ভায়োলেট আর গ্রিন ব্যবহার করতে হয়। এই থিওরি না মেনে বা না জেনে কালার করলে চুলটা বেশি ওয়ার্ম কালারের দিকে চলে যেতে পারে। সেটা ভারতীয় ত্বকে ভালো লাগবে না।’ নিজের স্যালোঁতেও ক্রেতাদের এটা প্রথমেই বুঝিয়ে দেন অভিরূপ, ‘এরপরেও কেউ ওয়ার্ম কালার করাতে চায়। সে হয়তো ওটা ভালোভাবে ক্যারি করতে পারল। তবে সাধারণ প্রবণতা সেটা নয়।’ কালার চার্ট দেখে যখন কালার পছন্দ করবেন, তখন একজন কী কী দেখবেন? অভিরূপের কথায়, ‘চার্টে নানারকম শেড থাকে। অনেকের মনে হয় ব্লন্ড মানে প্রচণ্ড ব্লন্ড। আবার কালো মানে একেবারে জেট ব্ল্যাক। আমাদের হেয়ার কিন্তু জেট ব্ল্যাক হয় না। বেশিরভাগের মিডিয়াম ব্রাউন টোন থাকে। তার থেকে কেউ কতটা লাইট করাবে, সেটা তার পছন্দ। যেমন ব্রাউন রয়েছে চকোলেট শেড ক্যাটেগরিতে। ডার্ক ব্লন্ড আছে হানি বা ক্যারামেল শেড ক্যাটেগরিতে। আরও হালকা চাইলে রয়েছে প্ল্যাটিনাম বা অ্যাশ ব্লন্ড ক্যাটেগরি। আমাদের এখানে মূলত খুব ডার্ক বা খুব লাইট কালার করাতে লোকে চায় না। মাঝামাঝি কিছু খোঁজে। তাই হানি বা ক্যারামেল বেশি চলে। আছে রেড ক্যাটেগরি। তাতে থাকে ব্লাড রেড এবং ম্যাজেন্টা রেড। ম্যাজেন্টায় রেডের সঙ্গে ভায়োলেট মেশে। এই চাপা রংটা ভারতীয় স্কিন টোনে খুব ভালো যায়। ক্রেতাদেরও এই শেডটা সাজেস্ট করি। কারণ ব্লাড রেড কালার করালে বেশি লাল হয়ে যায়, সেটা খুব তাড়াতাড়ি ফেড হয়ে যায়। ফেড হলে নিজেদের চুলের আন্ডার টোন মিশে ওটা অরেঞ্জের কাছাকাছি চলে আসে। কিন্তু ম্যাজেন্টা করলে সেটা হয় না। ফলে এই যে চারটে ক্যাটেগরির কথা বলা হল, সেগুলো ভেবেই কালার বেছে নেওয়া উচিত।’
ভারতীয়দের গমরঙা ত্বকে হেয়ার কালার বাছতে অভিরূপের মত, ‘চকোলেট অথবা হানি ক্যারামেল কিংবা ম্যাজেন্টা— এই তিন ক্যাটেগরির কালার খুব ভালো ম্যাচ করে। লাইট ব্লন্ড বা অ্যাশ ব্লন্ড এই স্কিন টোনে না করানোই ভালো। ভারতীয় হলেও খুব লাইট স্কিন টোন যাদের, তারা প্ল্যাটিনাম বা অ্যাশ ব্লন্ড ক্যারি করতে পারে। তাছাড়া অন্য কালারও তাদের স্কিন টোনে যায়। যাদের স্কিন টোন চাপা, ফ্যাশনেবল হতে চাইলে তারা বাছতে পারে অ্যাশ ব্লন্ড কিংবা চকোলেট হানি।’
হেয়ারস্টাইল মেনে
কালারিং দিয়ে হেয়ারস্টাইলেও বদল আনা যায়। যেমন পাতলা চুলে ভলিউম দেখাতে চাইলে তাতে ফাইন বা মিডিয়াম হাইলাইটস করা যায় মাথার ঠিক উপরে বা ক্রাউনে, বোঝালেন অভিরূপ। এতে পাতলা চুলেও মনে হবে ভলিউম এসেছে। কোঁকড়া বা কার্লি হেয়ারে কী ধরনের কালার প্যাটার্ন ভাবা উচিত? তাঁর পরামর্শ, ‘কার্লি হেয়ারে হাইলাইটস করালে সেটা খুব ভালো ডিফাইন করে কার্লসকে। দেখা যেতে পারে গ্লোবাল কালারও। স্ট্রেট হেয়ার বা ওয়েভি হেয়ারে বেশি ভালো লাগে বালেয়াজ। এই ধরনের চুলের জন্য হেয়ার কালারিং-এর যেসব স্তর আলোচনা করা হল প্রথমে, তার সব ক’টিই খাপ খায়।
রং কিন্তু সবই সুন্দর। কীভাবে বা কোন পদ্ধতিতে ব্লেন্ডিং হচ্ছে তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। অভিরূপ জানিয়ে দিলেন, হেয়ারে জ্যামিতিক নকশায় ঠিকভাবে প্যানেল না সাজাতে পারলে বেমানান লাগে। কালার-এর ভিজিবিলিটি যদি খুব বেশি বা খুব কম হয় তাহলে বিষয়টা ভালো লাগবে না। মনে রাখবেন এটা কিন্তু কোনও পোশাক বা অ্যাক্সেসরিজ নয়। যে কোনও কালার দিয়ে আপনি চুল রাঙাচ্ছেন মানে সেটা আপনার ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলছে এবং সেটা সবসময় আপনার চেহারার অংশ হয়ে থাকছে, অন্তত যতদিন সেটা উঠে না যাচ্ছে। তাই প্রয়োগটা সঠিক পদ্ধতিতে দরকার। ভালো জায়গা থেকে প্রফেশনাল শ্যাম্পু এবং মাস্ক ব্যবহার করে তবেই কালার করান। তাতে চুলে কালারটা থাকে বেশিদিন। কালার করানোর পরে সাধারণ শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন না। কালার করা অর্থাৎ চুল ‘প্রি লাইট’ (আগে বলা হতো ব্লিচ) করা নিয়ে অনেকের নানা আশঙ্কা থাকে। আপনি জেনে নিয়েই করছেন যে আপনার চুলের ন্যাচারাল পিগমেন্ট লাইট করা হচ্ছে। সবই বাইরে থেকে দেওয়া হচ্ছে। বেশি ঘন ঘন কালার করালে চুলে একটা শুষ্ক ভাব আসতে পারে।
কোন মুখে কোনটা
মুখের আকৃতির সঙ্গে হেয়ার কালার সঙ্গতিপূর্ণ কিনা, সেটাও দেখতে হয়। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অভিরূপ বলেন, ‘ট্রেন্ডমাফিক ফেস শেপ সকলেই ওভাল চায়। হেয়ার কালারের মাধ্যমেও সেটা আনা সম্ভব। চুলের উপরের দিকে কিছু পাতলা অংশে যদি বালেয়াজ বা হাইলাইটস করা যায় এবং বাকি চুলটা ডার্ক রাখা যায়, তখন ডাইমেনশন অনুযায়ী ফেসটা একটু লম্বাটে দেখতে লাগে। গোল মুখকেও ওপর থেকে এভাবে ওভাল দেখতে করা যায়। ঠিকমতো হাইলাইটস দরকার এইজন্য। খুব ছোট ফেস শেপে যদি ভারিক্কি ভাব আনার দরকার হয়, তাহলে কালার প্লেসমেন্ট সবটা হবে সাইড থেকে। সাইডের কিছু হালকা অংশ চুলের উপর এলে মুখটা চওড়া ও ভরাট লাগবে।