পারিবারিক ধর্মকর্ম পালনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ। সন্তানের কর্মসাফল্যে গর্ব। গবেষণায় অগ্রগতি। ... বিশদ
বলাবাহুল্য, এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রতি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করার সোচ্চার দাবিদার ছিল বিজেপি। এই দাবিতে বঙ্গ বিজেপির নেতারা আদালতের দ্বারস্থ হন। মূলত প্রায় ৬২ হাজার বুথে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য রাজ্য পুলিসের ঘাটতির কথা বিবেচনা করে আদালত ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটের চেয়েও বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনী আনার নির্দেশ দেয়। সেইমতোই ৮২২ কোম্পানি বাহিনী আসার কথা। আদালতের এই নির্দেশে বিজেপিসহ প্রায় সব বিরোধী দলের মধ্যে চাপা উল্লাস দেখা দেয়। নীতিগতভাবে না চাইলেও আদালতের নির্দেশকে সম্মান জানায় বাংলার শাসকদল তৃণমূলও। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ভাবনা বোধহয় অন্যরকম ছিল। সাধারণ নিয়মে ভোটের কয়েকদিন আগেই সংশ্লিষ্ট রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী পৌঁছে যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে দেখা যায়, ভোটের কয়েকদিন আগে দফায় দফায় ৩৩৭ কোম্পানি এসে পৌঁছালেও বাকি ৪৮৫ কোম্পানির দেখা নেই! এই অবস্থায় যাবতীয় ধোঁয়াশা বজায় রেখে ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে তারা জানায় বাকি ওই ৪৮৫ কোম্পানি বাহিনী পাঠানো হচ্ছে। যদিও শনিবার সকাল পর্যন্ত মোট ৬৫০ কোম্পানি বাহিনী আসে। প্রশ্ন হল, শেষ মুহূর্তে বাহিনী পাঠালে কোন জাদুবলে তাদের প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে পাঠানো যাবে? কেন বাহিনী পাঠাতে এমন গড়িমসি বা দেরি তারও কোনও ব্যাখ্যা নেই! ভোটের দিন যদি বাহিনী আসে তাহলে তারা কোন কাজে লাগবে? সঙ্গত এই প্রশ্নটি উঠেছে। এই দেরির রহস্য কি উন্মোচন হবে? ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। প্রায় সব জেলা থেকেই অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে, এদিন অধিকাংশ বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল না। এই দায়িত্বজ্ঞানহীনতার দায় কি কেন্দ্রের উপর বর্তায় না?
আরও মজার ব্যাপার হল, কেন্দ্রের নিয়ম অনুযায়ী একটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্র পাহারা দিতে ন্যূনতম চারজন জওয়ান রাখা বাধ্যতামূলক। রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটগ্রহণ কেন্দ্র যত সংখ্যক, সেই হিসেবে কেন্দ্রের নিয়মেই একটি কেন্দ্রে চারজন জওয়ান রাখতে গেলে কমপক্ষে ১ লক্ষ ৭৮ হাজার জওয়ান দরকার। এই হিসেবে পুরো ৮২২ কোম্পানি বাহিনী দিয়ে সব ভোটকেন্দ্র পাহারা দেওয়াও সম্ভব নয়। আর যত সংখ্যক বাহিনী এসেছে তাদের সবাইকে কাজে লাগানো সম্ভব হলেও এক চতুর্থাংশের সামান্য বেশি ভোটকেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখা সম্ভব ছিল। আর ভোটকেন্দ্র পিছু দু’জন জওয়ান ধরলে অর্ধেক ভোটকেন্দ্রে পাহারার ব্যবস্থা হতে পারে। তার মানে, অঙ্কের নিয়মেই বেশিরভাগ ভোটকেন্দ্র খালি থাকার কথা। ঘটনাও হল, ভোটের সকাল থেকে এই কেন্দ্রীয় বাহিনীর আকাল নিয়ে সোচ্চার হয়েছে সব পক্ষ। তাই প্রশ্ন হল, প্রয়োজনীয় সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো যে সম্ভব নয় তা আগেভাগে জানানো হল না কেন? বা যাদের পাঠানো হল সেক্ষেত্রেই-বা কেন যথাসময়ে তাদের পাঠানো হল না? এই পরিস্থিতি তৈরির জন্য কী জবাব দেবে কেন্দ্র বা বিজেপি? নাকি কেন্দ্রীয় বাহিনীর জুজু দেখিয়ে গেরুয়া শিবির ভোট বৈতরণী পেরতে চেয়েছিল? পাশাপাশি, কম সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠিয়ে কি আদালত অবমাননা করল না কেন্দ্রীয় সরকার? এই প্রশ্নটিও উঠছে।