পারিবারিক ধর্মকর্ম পালনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ। সন্তানের কর্মসাফল্যে গর্ব। গবেষণায় অগ্রগতি। ... বিশদ
বাম জমানায় হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েই বাংলা-শাসনের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিলেন মমতা। কিন্তু পরিবর্তে এ কী দিলেন তিনি? এই প্রশ্ন উঠেছিল। বিতর্ক দানা বেঁধেছিল শাসক দলের অন্দরেও। শেষমেশ তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব আঠারোর ভুল দ্রুত স্বীকার করে নিয়েই আশ্বাস দিয়েছিলেন, এই বিষাদের পুনরাবৃত্তি হবে না। তৃণমূলের তরফে এবার এই গুরুত্বপূর্ণ ভোটের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন দলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরই ঘোষণা করেন তিনি, ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন সম্পন্ন হবে দৃষ্টান্তমূলক স্বচ্ছতার সঙ্গে এবং শান্তিপূর্ণভাবে, অন্যথা হবে না। কিন্তু ৮ জুলাই, শনিবার নস্যাৎ হয়ে গেল অভিষেকের সমস্ত বড়াই। শুধু সেদিন ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করেই ১৮ জনের প্রাণ চলে গেল! নির্বাচন ঘোষণার দিন থেকে ধরলে এই ভোটের বলির সংখ্যাটি প্রায় দ্বিগুণ! সংখ্যাটির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করতে পারে রাজ্য সরকার এবং শাসক দল। কিন্তু নিহতের সংখ্যা কমলেও তাতে কারও কোনও গৌরব বৃদ্ধি হবে না। ভারতের গণতন্ত্র রক্ষার অনিবার্য শর্ত প্রতিটি নির্বাচন। নির্বাচন মানুষকে নিয়ে এবং মানুষের জন্য। নির্বাচিত সরকার বা সংস্থা তৈরি হয় মানুষকে ভালো রাখার উদ্দেশ্যে। তাই প্রতিটি নির্বাচন উৎসবের মেজাজেই হওয়ার কথা। তার পরিবর্তে একজনও মানুষের প্রাণ অকালে চলে যাওয়াটা বেদনার।
রাজনৈতিক লড়াই যখন হিংসায় রূপান্তরিত হয়, তখন কলঙ্কিত হয় রাজনীতি। তার দায় শাসক ও বিরোধী উভয়েরই উপর বর্তায়। তবে তুলমূল্য বিচারে দায়টা বেশি নিতে হয় শাসক পক্ষকেই। কারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে তারা অনেক বাড়তি সুবিধা পায়। নির্বাচন কমিশনের মতো একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সামনে থাকলেও—কবে নির্বাচন হবে, ক’দফায় হবে, কী থাকবে নিরাপত্তার ব্যবস্থা প্রভৃতি প্রকারান্তরে ঠিক হয় শাসকের মর্জি মেনেই। সুতরাং, এই লজ্জা সরকারেরও। ২০১৩ সালের গ্রহণযোগ্য দৃষ্টান্ত এবং ২০১৮ সালের কালো অধ্যায় সামনে ছিলই। তাই এবার কাম্য ছিল অনেক বেশি সতর্কতা গ্রহণ। বিরোধীরাও অনড় ছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তায় এবং একাধিক দফায় ভোটগ্রহণের ব্যাপারে। আদালতের সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত ছুটেও কেন্দ্রীয় বাহিনী আসা রুখতে পারেনি কমিশন এবং শাসক। তবে শনিবার ভোট হয়েছে এক দফায়। কিন্তু এমন ভোট হয়েছে যে, প্রশ্ন উঠেছে তার প্রয়োজনীয়তা নিয়েই। নানা জায়গা থেকে খবর এসেছে বুথ দখল ও ভোটলুটের। বুথের সামনে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে দাপিয়ে বেড়িয়েছে বন্দুকবাজরা। বোমাবাজিতে হিম হয়ে গিয়েছে ভোটদাতাদের হাড়। প্রার্থী, তাঁর সমর্থক থেকে ভোটার—অনেকেই হিংসার শিকার হয়েছেন। প্রহসনের ভোটের প্রতিবাদে একাধিক গ্রামে ব্যালট বাক্স জলে ফেলে দেওয়া হয়েছে কিংবা তার ভিতরে ঢালা হয়েছে জল। আগুন ধরাবার ঘটনাও নজরে এসেছে। প্রাণ বাঁচাতে ভোট বন্ধ করে পালিয়ে গিয়েছেন ভোটকর্মীরা। অকূল পাথারে পড়ার মতো করে কেঁদেছেন মহিলা ভোটকর্মীরা। অথচ, দূরবিন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায়নি কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের। যথারীতি, দায় এড়াবার প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ নির্বাচন কমিশনার এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তবে শেষকথাটি বলে দিয়েছেন কমিশনার, ‘সব করার পরও কেউ গ্যারান্টি দিতে পারবে না—কে, কাকে, কোথায় গুলি করবে’! সত্যিই তাই, কিছু ‘মহান’ মোটা মাইনে নেবেন আর রাজনীতির কারবারিরা ভোগ করবেন রাজক্ষমতা। জনগণ উলুখাগড়া মাত্র, তাদের ভূমিকা কেবল আত্মবলিদানে।