পারিবারিক ধর্মকর্ম পালনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ। সন্তানের কর্মসাফল্যে গর্ব। গবেষণায় অগ্রগতি। ... বিশদ
জগতের নৈতিক চরিত্রে উন্নত ও সকলের কল্যাণকামী সজ্জনগণের মধ্যে যাঁরা ঈশ্বর বা জন্মান্তরে বিশ্বাসী তাঁরাই সর্বশ্রেষ্ঠ মানব ও বিশ্ববন্দিত। ঈশ্বরবিশ্বাসী লোকদের মধ্যে একমাত্র ভারতবর্ষের সনাতনধর্মী হিন্দুগণ আর্যশাস্ত্রবাণীতে ও সাধু মহাপুরুষের কথায় নির্ভর করে জগৎ কল্যাণের জন্য ঈশ্বরের এই মর্ত্যে অবতরণ স্বীকার করেন এবং ভগবানের শাস্ত্র কথিত নানা অবতারের পূজা করেন। কিন্তু অনেক পরবর্তীকালে যে সকল মহাশক্তিধর মহামানব পৃথিবীতে জন্মেছেন, যেমন পাঁচশত বৎসর পূর্বে আবির্ভূত শ্রীচৈতন্য ও দেড়শত বৎসর পূর্বে আবির্ভূত শ্রীরামকৃষ্ণ ভগবানের অবতার কিনা একথা এখনও বিতর্কের বিষয়। ভারতের আধ্যাত্মিক তত্ত্বে দুইটি কথাই সুন্দরভাবে ঘোষিত আছে—একটি করুণায় অবতরণ, অন্যটি সাধনায় আরোহণ। পরম কারুণিক পরমেশ্বর জীবজগতের প্রতি অসীম করুণায় জগন্মঙ্গলের জন্য অজ ও অধিকারী হ’য়েও জন্মগ্রহণ করেন এবং মানুষরূপে তাঁর জন্ম ও লীলা খেলা সর্বোত্তম। আবার সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণী মনুষ্যগণের মধ্যে কেহ কেহ সাধনার দ্বারা ক্রমে ক্রমে জ্ঞানমার্গে আত্মজ্ঞানলাভ করে ব্রহ্মলীন হন, কেহ বা ভক্তিমার্গে ঈশ্বরসাধর্ম্য লাভ করে নিত্য চিন্ময়দেহধারী হয়ে সেব্য ভগবানের প্রেমসেবানন্দে বিভোর হয়ে থাকেন।
ব্রহ্মজ্ঞানী বা পরমভক্ত সাধুমহাত্মার হৃদয়ে সর্বদা ঈশ্বরের অবস্থান ও বিশুদ্ধ চরিত্রের জন্য তাঁরাও ভগবৎ সদৃশ ব্যক্তি এবং তাঁদের পরম পবিত্র উপাখ্যানও হরিকথা। তাঁরাই তো তাঁদের সদুপদেশ ও সদ্গ্রন্থের দ্বারা অজ্ঞানীকে জ্ঞানী করেন অভক্তকে ভক্ত করেন। তাঁদেরই শ্রদ্ধা প্রেম ও আকুলতায় জলের বরফে জমাট হওয়ার মত সর্বব্যাপী ঈশ্বর কোনও সসীম ধাতু বা মাটির মূর্তিতে প্রকট হয়ে ভক্তের সেবা পূজা গ্রহণ করেন। তাঁরা যে তীর্থভ্রমণ করেন নিজেরা পবিত্র হওয়ার জন্য নয়, কারণ সর্বতীর্থপদ ভগবান, তাঁদের হৃদয়ে বিরাজমান। পাপিগণের পরিত্যক্ত পাপে অশুদ্ধ তীর্থকে শুদ্ধ করার জন্য এবং দর্শন দানে লোক নিস্তারের জন্য তাঁদের তীর্থে আগমন। পুণ্যতীর্থ স্নান বা দেবতার মূর্তির সেবায় পাপক্ষয় বহু বিলম্বে ঘটে কিন্তু সাধু মহাত্মাদের কেবল দর্শন ও সঙ্গেই সর্বপাপক্ষয় ও পরম শুদ্ধি ঘটে। আধ্যাত্মিক সভ্যতার প্রথম পর্বে শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের মধ্যেই ঈশ্বর দর্শন এবং সেজন্য মানুষেরই সেবা পূজা মুখ্যতম ছিল কিন্তু পরে যখন মানুষের প্রতি মানুষের অবজ্ঞা ও হিংসা হ’ল তখন থেকেই দেবালয়ে ঈশ্বরের বিগ্রহ স্থাপন করে পূজা প্রচলিত হ’ল। তথাপিও মানুষ-বিদ্বেষীর মন্দিরে বিগ্রহ পূজা ভস্মে ঘৃতাহুতির ন্যায় বিফল বলা হয়েছে।