পারিবারিক ধর্মকর্ম পালনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ। সন্তানের কর্মসাফল্যে গর্ব। গবেষণায় অগ্রগতি। ... বিশদ
তুমি লিখিয়াছ, “ম”—যদি সোনা হয়, তবে তুমি লোহা। এই কথা বিনয়ের পরিচায়ক বটে। কিন্তু আমি বলিতেছি যে, ‘ম’—যদি সোনা হইয়া থাকে, তবে যেন আজ হইতে শ্রীশ্রীপ্রভুর আশীর্ব্বাদে লোহাই হয়। তুমি এবং ম—উভয়েই লোহাই হও, শক্ত হও, দৃঢ় হও, অনমনীয় হও, অপরাজেয় হও। সোনা দিয়া কি করিব বাছা? সোনা লইয়া মানুষে মানুষে কত কলহ, কত কোলাহল সভ্যতা-সৃষ্টির প্রথম মুহূর্ত্ত হইতে হইয়া আসিতেছে। কাঞ্চন চিরকাল মানুষের লালসার জাল ছড়াইয়াছে, বাসনার বন্ধন শক্ত করিয়া দিয়াছে। আমরা কাঞ্চন চাহি না, চাহি লোহার টুক্রা। কোনও আঘাতে টলিয়া যায় না, কোনও বেদনায় ঢলিয়া পড়ে না, আগুনের তাপে গলিতে চাহে না, তেমন লোহা চাই। লোহার সাথে উপযুক্ত গুরুর সহায়তায় উপযুক্ত মশলা মিশ্রিত হইলে ইহা ইস্পাত হইবে; নীচতা, হীনতা, দীনতা, মলিনতা সকলই নিমেষের মাঝে কাটিয়া ফেলিবার শক্তি ইস্পাতেরই আছে, সোনার নাই। সোনার গহনা গায়ে দিয়া অহংকারে গদগদ হওয়া সহজ, ভূমিতে পদক্ষেপ করিতে নারাজ হওয়া সহজ, সোনার বিনিময়ে জগতের সকল পাপ, সকল অশান্তি ডাকিয়া আনা সহজ, কিন্তু লক্ষযুগের জড়তা যে জাতির সর্ব্বাঙ্গে ছাইয়া পড়িয়াছে, আঘাতের পর আঘাতে সে জাতিকে জাগ্রত ও কর্ম্মপরায়ণ করিতে পারে একমাত্র লোহা। লোকে সোনারই বেশী আদর করিতে পারে, কিন্তু আমি লোক নহি,—আমি অলোক, অমানুষ। আমি সোনার আদর করি না, একমাত্র লোহারই কদর বুঝি। যেদিন আমার গুদামের দরজার তালা, চাবি দিয়া খুলিয়া দেখাইতে পারিব, সেদিন দেখিবে, আমার গুদামের দরজাই শুধু লোহার, তালা-চাবিই শুধু লোহার, তাহা নহে, আমার গুদাম ভরা শুধু লোহা—লোহা—লোহা। কোথাও এককণা সোনা নাই, একটি হীরামাণিক্য বা মুক্তা-জহরৎ নাই। আমি সোনার গৌরাঙ্গ অপেক্ষা লোহার ভীম বেশী ভালবাসি।
সোনার উপরে পারদ মাখাইলে সোনা নষ্ট হইয়া যায়, তার প্রতি অণুপরমাণু পারদে সিক্ত হইয়া যায়, কিন্তু লোহার উপরে পারদ মাখাইলে লোহার একটি কণাও নষ্ট হয় না, বরং তাহার ঔজ্জ্বল্য বাড়ে। সোনার ছেলে চাহি না, কারণ, প্রলোভনের পারদ গায়ে লাগিয়ে সোনার ছেলে আর সোনার থাকে না, সে তখন পারদের ছেলে, প্রলোভনের ছেলে হইয়া যায়। লোহার ছেলের গায়ে প্রলোভনের পারদ লাগিলে সে তখন পূর্ব্বাপেক্ষা উজ্জ্বল হয়, তার জীবনের জীবন্ত গরিমা না মরিয়া এবং বেশী করিয়া বাঁচিয়া উঠে। যে ছেলে কেবল মাটীর দিকে চাহিয়াই চলে, পথ চলিতে চলিতে দশবার সশঙ্ক চিত্তে পথের পাশে আসিয়া দাঁড়ায়, পশ্চাদ্বর্ত্তীকে আগে যাইতে দিয়া নিজে পিছাইয়া পড়ে, যে ছেলে অন্যায় শুনিলে প্রতিবাদ করিতে জানে না, যে ছেলে অসৎ অনুষ্ঠানের বিদ্রোহী হইয়া সিংহগর্জ্জন করিতে ভালবাসে না, যে ছেলে জগতের দ্বন্দ্বসংঘর্ষের মধ্যে লাফাইয়া পড়িয়া পরানপেক্ষী আত্মশক্তিতে বিক্ষুব্ধ সাগর-তরঙ্গ শান্ত করিবার হাঙ্গামা মাথা পাতিয়া নিতে চাহে না, দুঃখকে যে এড়াইয়া চলে, বাধাতে যে এলাইয়া পড়ে, তেমন সোণার ছেলে স্বর্ণান্বেষী অর্থের গোলামের কোলেই শোভা পাউক।