পারিবারিক ধর্মকর্ম পালনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ। সন্তানের কর্মসাফল্যে গর্ব। গবেষণায় অগ্রগতি। ... বিশদ
নারদ বললেন, হে মহাত্মা পরাশরনন্দন ব্যাস, আপনার দেহাভিমানী ও মনোভিমানী আত্মা, দেহ ও মনের সহিত বেশ সন্তুষ্ট আছে তো? যেহেতু তুমি সর্বপ্রকার ধর্মার্থপরিপূর্ণ অতি আশ্চর্যজনক মহাভারত গ্রন্থ রচনা করেছ, সুতরাং ধর্মাদি সংক্রান্ত সকল জ্ঞাতব্য বিষয়ই তুমি বিশেষভাবে জেনেছ ও অনুষ্ঠানও করেছ। হে সর্বজ্ঞ, তুমি বিচারের দ্বারা ব্রহ্মস্বরূপ উপলব্ধি করেছ, তথাপি নিজেকে অকৃতার্থ (অকৃতকার্য) জ্ঞান করে কেন শোক-কাতর হচ্ছ?
ব্যাসদেব বললেন, আপনি যা বললেন, তা সবই আমার জানা সত্ত্বেও মনে সন্তোষলাভ হচ্ছে না। আপনি ব্রহ্মার পুত্র এবং পরমজ্ঞানী। এই অসন্তোষের কারণ কি, তা আপনাকেই জিজ্ঞাসা করি। যিনি অসঙ্গ—মায়াগুণাতীত হয়েও সংকল্পমাত্রই এই ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি, স্থিতি ও লয় করেন, আপনি সেই কার্যকারণ-নিয়ন্ত্রণকারী ভগবানের উপাসক। সুতরাং সকল গূঢ় তত্ত্বই আপনি জানেন। আপনি ত্রিভুবন পরিভ্রমণ করে করে সূর্যের মতো সর্বদর্শী। আবার, প্রাণবায়ুর মতো যোগবলে সকলের অন্তরে প্রবেশ করে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিকেও জানেন। আমিও ব্রহ্মনিষ্ঠ ও বেদাধ্যয়নাদির দ্বারা শাস্ত্রজ্ঞান লাভ করেছি। তা সত্ত্বেও আমার মধ্যে নিশ্চিতভাবে নূন্যতা বা অসামর্থ্য রয়েছে—এখন আপনি সেটি বিচার করুন।
নারদ বললেন, হে ব্যাসদেব, তোমার রচনায় তুমি শ্রীভগবানের নির্মল যশোলীলার কথা বিশেষভাবে বর্ণনা করনি। সেইজন্য তোমার জ্ঞানও অসম্পূর্ণ বলে আমি মনে করি।
হে মুনিশ্রেষ্ঠ, তুমি ধর্মঅর্থকামমোক্ষাদিকে যেরূপ পুরুষার্থরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছ, ঠিক সেই ভাবে শ্রীভগবানের লীলাকীর্তন করনি। নানাবিধ ভাব-রস-অলঙ্কারপ্রযুক্ত হলেও যে বাক্যে ভগবানের গুণলীলাদি কীর্তিত হয় না, সেই বাক্যে ভক্তিমান পরমহংসেরা আনন্দলাভ করেন না, বরং তুচ্ছ ও হীন বায়সতীর্থরূপে উপেক্ষা করেন। অতি সাধারণ বাক্যেও যদি শ্রীভগবানের গুণকীর্তন করা হয়, তা হলে ভক্তগণ সেই কথা শ্রবণ করেন, গান করেন ও নিজেরা উচ্চারণ করেন। কারণ সেইরূপ বাক্যপ্রয়োগে সকলের পাপ বিনষ্ট হয়। নিষ্কাম, অতিনির্মল ব্রহ্মজ্ঞানও যদি ভগবানের প্রতি ভক্তিভাবহীন হয়, তাহলে সে জ্ঞানও শোভা পায় না অর্থাৎ তার দ্বারা মুক্তিলাভ হয় না। সুতরাং, সাধনকালে ও সিদ্ধিকালে দুঃখজনক কাম্যকর্মগুলি এবং ভগবানে অসমর্পিত নিষ্কাম কর্ম সম্বন্ধে কি আর বলা যায়? হে মহাভাগ, তুমি অব্যর্থদৃষ্টি ও নির্মল যশাধিকারী এবং সত্যনিষ্ঠ ও ব্রতপরায়ণ। সকল জীবের ভববন্ধন মোচন করার জন্য অনন্তশক্তিমান ভগবান শ্রীহরির প্রসিদ্ধ লীলাগুলি একাগ্র মনে বার বার স্মরণ কর। ভগবদ্বিষয় ভিন্ন অন্যবিষয়ে দৃষ্টিনিক্ষেপকারী বহির্মুখ ব্যক্তিগণ তাদের বক্তব্যবিষয়ের নামরূপের দ্বারা বুদ্ধিকে বিক্ষিপ্ত করেও বায়ুতাড়িত নৌকার মতো কোন বিষয়ে কখনোই স্থির আশ্রয় লাভ করে না। বিষয়াসক্ত ব্যক্তিদের ধর্মলাভের জন্য আপনি নিন্দনীয় যে সকল কাম্যকর্মের বিধান দিয়েছেন, সেগুলি সঠিক নয়, বরং ক্ষতিকারক।
অধ্যাপিকা গীতা মাইতি অনুদিত ‘শ্রীমদ্ভাগবতম্’ থেকে