পারিবারিক ধর্মকর্ম পালনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ। সন্তানের কর্মসাফল্যে গর্ব। গবেষণায় অগ্রগতি। ... বিশদ
স্বামীজী মহারাজ: ‘কেন সার্বে না বলো? আসলে অসুখটা কার হয়? আত্মার, দেহের,—না মনের? তোমরা কেন, ডাক্তাররাও বল্বেন—অসুখ হয় দেহের। কিন্তু দেহ তো আসলে জড়যন্ত্র, দেহের পিছনে যদি মন না থাকে তবে দেহ আর কি করতে পারে বলো। মনের অভাবে sensation (সংবেদন বা চেতনা) বলো, feeling (অনুভব) বলো, বা যেকোন জ্ঞানই বলো—কোনটাই হ’তে পারে না। তাই সত্যকারের অসুখ হয় মনের। মনটাই অসুস্থ, চঞ্চল বা বিকৃত হয় দেহের অসুস্থতার জন্য। দেহ ও মনের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক। মনে বিকৃতি বা চাঞ্চল্য এলে সেটাই সঙ্গে সঙ্গে দেহ বা শরীরে সংক্রমিত হয়। তখন লোকে মনে করে দেহের বিকৃতি হয়েছে, দেহের অসুখ করেছে’। এই ধারণাই আমরা আরোপ করি মনে। পরে আবার জড়দেহের ধারণা চৈতন্যময় আত্মায় আরোপ করি। আরোপ কিনা মিথ্যা-আরোপ অথচ তাকে সত্য মনে করি’।
আমরা: ‘এটা ঠিক বুঝ্তে পার্লাম না মহারাজ। শরীরে যখন কোন আঘাত লাগে, তখন মনটা খারাপ বা অসুস্থ হয়। দেহে কোন ক্ষত বা দেহটা আহত বা যেকোন কারণে অসুস্থ হ’লে তবেই সেটা অনুভব করে মন। তখনই মন হয় অসুস্থ। শরীর সুস্থ থাক্লে মনও সুস্থ থাকে। সুতরাং প্রথমে শরীর, তারপর মন। প্রথমে শরীরের হয় বিকৃতি বা অসুস্থ অবস্থা, তার পরে হয় মনের অসুস্থতা। এটাই ঠিক ব’লে মনে হয়’।
স্বামীজী মহারাজ: ‘সাধারণত এটাই তো মনে হয় সকলের। সকল লোকই চিন্তা করে—দেহটা আগে, তারপর মন। তবে মনও জড় ও অচেতন। মন চেতন হয় চৈতন্যময় আত্মার প্রেরণায়। আসলে দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই কথা। যারা বলে দেহটা আগে বা জড়বস্তু আগে, তারা জগতের সব-কিছুকে দেখে জড়বস্তুর ভিতর দিয়ে,—জড়বস্তুই হয় তাদের medium (মধ্যস্থ বা দ্বার)। একে ইংরেজীতে বলে materialistic view (জড়বাদসম্মত দৃষ্টি বা জড়দৃষ্টি)। Materialism-এ (জড়বাদে) মন ও চৈতন্যকেও ম্যাটারের (জড়বস্তুর) সামিল করা হয়। সেখানে one primordial stuff of the world (জগতের আদিবস্তু বা সত্তা) হ’ল ‘ম্যাটার’ (জড়বস্তু)। অর্থাৎ ম্যাটারই সেখানে একমাত্র সত্য সত্তা। মন, চৈতন্য ও এমন কি আত্মা-পর্যন্ত সেখানে bye-product of matter (জড়বস্তু থেকে উৎপন্ন বা সৃষ্ট বস্তু)। সুতরাং materialistic viewpoint-এ (জড়-দৃষ্টিভঙ্গিতে) মন ও আত্মাকে এক দিক থেকে অস্বীকারই করা হয়। জড়দৃষ্টিতে মানুষ দেখে তার দেহটা রক্ত-মাংস-পেশী-তন্তু এইসব দিয়ে তৈরী, অথচ modern science-এর (আধুনিক বিজ্ঞানের) কাজ একমাত্র জড়জগৎ নিয়ে হ’লেও সে energy (শক্তি) ব’লে একটা পদার্থ স্বীকার করে। বিজ্ঞান স্বীকার করে energy (শক্তি) বা electricity-ই (বৈদ্যুতিক শক্তি) হোক বা অন্য-কিছুই হোক, সেটা না হ’লে জড়ে ক্রিয়া বা স্পন্দন হয় না। ম্যাক্সওয়েল, আইনষ্টাইন, ম্যাক্স-প্ল্যাঙ্ক, জিন্স, ক্রোথার প্রভৃতি বৈজ্ঞানিকরা বলেছেন matter (জড়) থাকার অর্থই তার পিছনে energy-ও (শক্তি বা চৈতন্যও) আছে একথা স্বীকার করা’।
স্বামী প্রজ্ঞানানন্দের ‘মন ও মানুষ’ (৩য় ভাগ) থেকে