পুরনো রোগের বৃদ্ধিতে স্বাস্থ্যহানির সম্ভাবনা। ব্যবসায় শুভত্ব বজায় থাকবে। আর্থিক প্রগতিও হবে। ... বিশদ
কেন এই অবস্থা? ধরা যাক, রান্নার গ্যাসের কথা। মোদি সরকারের বরাবরের যুক্তি হল, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচা মালের দাম বাড়ায় এদেশে রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ছে। এই যুক্তি মানলে কাঁচা মালের দাম কমলে উল্টোটা হওয়া উচিত। ঘটনা হল, গত মার্চে প্রতি টন প্রোপেনের দাম ছিল ৭২০ মার্কিন ডলার, বিউটেন ৭৪০ মার্কিন ডলার। জুন মাসে তা কমে হয়েছে যথাক্রমে ৪৫০ বা ৪৪০ মার্কিন ডলার। অঙ্কের হিসেবে তাহলে গ্যাসের দাম অনেকটাই কমার কথা। কিন্তু বেসরকারি সংস্থার মতো মোদি সরকার কৌশলে মুনাফার লোভে এই দুই কাঁচা মালের উপর ১৫ শতাংশ করে আমদানি শুল্ক চাপিয়ে দিয়েছে। ফলে রান্নার গ্যাসের দাম মার্চে যা ছিল, এই জুলাইতে তাই-ই আছে। ১১২৯ টাকা প্রতি সিলিন্ডার। পেট্রল ডিজেলের ক্ষেত্রেও অতীতে দেখা গিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রুড অয়েলের দাম কমলেও দেশে জ্বালানি তেলের দাম কমায়নি মোদি সরকার। আম জনতার পকেট কাটার এই নির্মম সত্যটাকে অবশ্য স্বীকার করেন না প্রধানমন্ত্রী থেকে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। উল্টে মাত্র কয়েকদিন আগেই দেশে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার কমেছে বলে মোদি বন্দনায় মেতে থেকেছে গেরুয়া শিবির। অথচ দেশের ৭০-৮০ শতাংশ গরিব-মধ্যবিত্ত মানুষের জীবনযন্ত্রণার ভার লাঘব করার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের। জ্বালানি তেল বা গ্যাসের দাম বাড়লে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ে, এই সরল যুক্তিকে মেনে নিয়ে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে উপযুক্ত পদক্ষেপ করবে কেন্দ্র, তেমনটা হওয়াই বাঞ্ছনীয়। কিন্তু মোদি সরকার সেই পথে হাঁটেনি বলেই মানুষের এত দুর্ভোগ।
এরাজ্যে আনাজের দাম বোধহয় অনেক রেকর্ড ছাপিয়ে গিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা হল, প্রথমে তীব্র গরম ও তাপপ্রবাহ, তারপর কয়েকদিনের তুমুল বৃষ্টি—প্রকৃতির এই আচরণে মার খেয়েছে ফলন। প্রচুর ফসল নষ্ট হয়েছে। তাই এই অস্বাভাবিক দামবৃদ্ধি। একথা ঠিক যে, তাপপ্রবাহ বা অতি বৃষ্টির কারণে ফসল নষ্ট হলে বাজারে দামের ক্ষেত্রে তার আঁচ পড়তে বাধ্য। কিন্তু সেই মাত্রাছাড়া দামকে নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্ব রাজ্যের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও টাস্ক ফোর্সের। অভিজ্ঞতা বলছে, দাম শুধু প্রাকৃতিক কারণেই বাড়ে না। চাষিদের থেকে ফসল কিনে খুচরো বাজারে আসার পথে তা কয়েক হাত ঘোরে। ফলে দশ টাকা মূল্যের আনাজের দামও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। আবার অনেক ক্ষেত্রে বেআইনি মজুতের মাধ্যমে কৃত্রিম চাহিদা তৈরি করার ফলেও দাম বাড়ে। এই মধ্যস্বত্বভোগী বা বেআইনি মুনাফাখোরদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে দাম নাগালের মধ্যে থাকতে পারে। কিন্তু রাজ্যের সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা টাস্ক ফোর্স সেই দায়িত্ব পালনে কতটা আন্তরিক, তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন রয়েছে। শোনা যাচ্ছে, মানুষের এই দুর্দশা ঘোচাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ‘সুফল বাংলার’ মাধ্যমে কিছুটা কম দামে আনাজ বিক্রির ব্যবস্থা করেছে সরকার। কিন্তু সুফল বাংলার এই ‘সুফল’ কতজনের কাছে পৌঁছতে পারে সেটাও বড় প্রশ্ন। অতএব নিকট ভবিষ্যতে মূল্যবৃদ্ধির এই তাণ্ডব থেকে বোধহয় রক্ষে নেই আম জনতার।