পুরনো রোগের বৃদ্ধিতে স্বাস্থ্যহানির সম্ভাবনা। ব্যবসায় শুভত্ব বজায় থাকবে। আর্থিক প্রগতিও হবে। ... বিশদ
কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হল—বিপুল সম্পদ এবং আশ্চর্য জনবল ও মেধা থাকা সত্ত্বেও সামরিক সরঞ্জামের জন্য ভারতকে বন্ধুরাষ্ট্রগুলির উপর বিশেষভাবে নির্ভর করতে হয়। রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইজরায়েল, ফ্রান্স, ইতালি, ব্রিটেন, জার্মানি প্রভৃতি দেশ ভারতের সামরিক সহযোগী হিসেবে পরিচিত। স্বাধীন ভারতের এই পরনির্ভরতা বারবার সমালোচিত হয়েছে। যখন যে রাজনৈতিক দল বিরোধী আসনে থাকে, সে তখনই সরকার এবং শাসক দলকে তুলোধনা করে। এমনকী, বিদেশ থেকে যুদ্ধাস্ত্র এবং যুদ্ধবিমান ক্রয় নিয়েও বারেবারে উঠেছে দুর্নীতির অভিযোগ। বোফর্স কামান ইস্যুতে গদিচ্যুত হন রাজীব গান্ধী। তাঁর মৃত্যুর আগেও, কংগ্রেস সরকার নিজেকে বেকসুর প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়। মোদি জমানাও বিতর্কে জড়িয়েছে রাফাল যুদ্ধবিমান ক্রয় নিয়ে। এই সমস্যা দূর করার অভিপ্রায়সহ মোদি সরকার ‘আত্মনির্ভর’ ভারত নির্মাণের অঙ্গীকার করেছে। এই মিশনে ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও) এবং হিন্দুস্তান এরোনটিকস লিমিটেড (হ্যাল) নামক দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকেই ভারত সরকারের প্রধান ভরসা হিসেবে ধরা হয়। তারপরেও মোদি সরকার রাফাল কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছে। মনমোহন সিং সরকার ৩৬টি রাফাল কেনার চুক্তি করেছিল ফরাসি কোম্পানির সঙ্গে। কিন্তু মোদি সরকার এসে সেই চুক্তি বাতিল করে এবং একই নির্মাতা সংস্থার সঙ্গে নতুনভাবে চুক্তিবদ্ধ হয় ১২৬টি রাফাল কেনার জন্য। এই নতুন ডিলে রাজকোষের বিপুল অর্থ অপচয়ের দায় চাপে কেন্দ্রের ঘাড়ে। একইসঙ্গে দেশ তোলপাড় হয় স্বজনপোষণ এবং বিপুল অঙ্কের আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে। সমস্ত অভিযোগ, অনেক দেরিতে সরকার নস্যাৎ করলেও বিতর্কের অবসান এখনও হয়নি।
তারই মধ্যে নতুন অভিযোগ সামনে এসেছে আমেরিকা থেকে ৩১টি অত্যাধুনিক প্রিডেটর ড্রোন ক্রয় নিয়ে। আমেরিকান কোম্পানি জেনারেল অ্যাটোমিকসের তৈরি এই এমকিউ বা হান্টার ড্রোনের কার্যকারিতা প্রশ্নাতীত। যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী, কাস্টমস এবং সীমান্ত সুরক্ষা বিভাগ এই শিকারি ড্রোনের উপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল। এই আনম্যানড কমব্যাট এরিয়েল ভেহিকল নজরদারি ও গোয়েন্দাগিরিতে নাম্বার ওয়ান ওস্তাদ হিসেবে গণ্য হয়। সেই হিসেবে শত্রু পরিবেষ্টিত ভারতের প্রতিরক্ষা বিভাগের হাতে এই ড্রোনের অপরিহার্যতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন থাকতে পারে না। কিন্তু বিতর্ক দানা বেঁধেছে অন্যখানে: গত এপ্রিলে ভারতীয় সেনা ১৮টি প্রিডেটর ড্রোনের প্রয়োজনের কথা জানিয়েছিল। কিন্তু তার বদলে ৩১টি কেনা হচ্ছে কোন যুক্তিতে? একই যুদ্ধ-সরঞ্জাম আমেরিকা, ব্রিটেন, ইতালি, জার্মানি, স্পেন প্রভৃতি দেশ ইতিমধ্যেই যে দামে কিনেছে তার চেয়ে দু’গুণ থেকে ছ’গুণ বেশি দামে আমরা কিনব কেন? এত বড় ডিল চূড়ান্ত করার আগে মন্ত্রিসভা এবং ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটিকে অন্ধকারে রাখা হল কোন যুক্তিতে? ২৫ হাজার ২০০ কোটি টাকার এই চুক্তির মারাত্মক অভিযোগ খণ্ডনেও যথারীতি ‘মৌনীবাবা’ প্রধানমন্ত্রী। সামান্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরও এড়িয়ে গিয়েছেন মিডিয়ার প্রশ্ন। ভারত সরকারের তরফে অভিযোগ নেহাতই দায়সারাভাবে অস্বীকার করা হয়েছে প্রেস ইনফর্মেশন ব্যুরোর (পিআইবি) মাধ্যমে। এত বড় জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলির প্রশ্নেও ট্র্যাডিশন আঁকড়ে আছে মোদি সরকার। যেমন অব্যাহত ‘আত্মনির্ভর’ সাইনবোর্ড টাঙিয়ে রেখে বৈদেশিক নির্ভরতা ক্রমে বৃদ্ধির সাধনা।