পুরনো রোগের বৃদ্ধিতে স্বাস্থ্যহানির সম্ভাবনা। ব্যবসায় শুভত্ব বজায় থাকবে। আর্থিক প্রগতিও হবে। ... বিশদ
পোশাকি নাম ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন। গত বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এই নতুন সংস্থা তৈরির বিলে সিলমোহর দিয়েছে। আগামী বাদল অধিবেশনে বিলটি সংসদে পেশ করা হবে। গবেষণা ক্ষেত্রে কোথায় কত টাকা ঢালা হবে এতদিন তা ঠিক করত ২০০৮ সালে ইউপিএ আমলে তৈরি সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ বোর্ড। পরিকল্পনা হল, সেই সংস্থা নতুন এই ফাউন্ডেশনে মিশে যাবে। খাতায়-কলমে ফাউন্ডেশনে থাকবেন ২৫ জনের মতো গবেষক, শিক্ষক, পেশাদার। কিন্তু এর পরিচালন পর্ষদের প্রধান হবেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থাৎ, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকবে ‘রাজনীতিক’ মোদির হাতে। হয়তো তাঁরই অঙ্গুলিহেলনে চলবে সংস্থাটি। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা কেন্দ্রগুলির নিয়ামক সংস্থা হবে এই ফাউন্ডেশন। আনুষ্ঠানিকভাবে ফাউন্ডেশন যাত্রা শুরু করলে ইউজিসি, সিএসআইআর, ডিএসটি বা ডিএই-র মতো গবেষণা অনুদান প্রদানকারী সংস্থাগুলিও সেই ক্ষমতা হারাবে। কেন্দ্রের দাবি, পাঁচ বছরে গবেষণায় ৫০ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হবে। এর মধ্যে ৩৬ হাজার কোটি টাকা আসবে বেসরকারি ক্ষেত্র থেকে। মৌলিক গবেষণার কফিনে কার্যত শেষ পেরেক মেরে গবেষণার বিষয়বস্তু ঠিক করে দিতে চলেছে উদ্ধত সরকার! বলা হয়েছে, আধুনিক প্রযুক্তি, শিল্প ও অর্থনীতির অগ্রগতির প্রয়োজনমাফিক গবেষণা হবে। আসলে এটাই আরএসএসের রাজনৈতিক দর্শন। মোদিদের ‘মেন্টর’ আরএসএস-এর সংস্থা ভারতীয় শিক্ষণ মণ্ডল দীর্ঘদিন ধরে ‘ভারতীয় বিজ্ঞান’ গবেষণায় জোর দিয়েছে। তাদের বক্তব্য, পৌরাণিককালে ভারত অনেক উন্নতি করেছিল বিজ্ঞানে, সেসব নিয়ে গবেষণা হওয়া উচিত। এখানেই আশঙ্কার পাহাড় জমছে। একসময়ে খোদ গেরুয়া শাসক দেশবাসীকে বলেছেন, গণেশের ঘাড়ে প্লাস্টিক সার্জারি করে হাতির মাথা লাগানো হয়েছে! এরাজ্যের বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের আবিষ্কার ছিল, গোরুর দুধ থেকে সোনা পাওয়া যায়! ইতিমধ্যে বিভিন্ন আইআইটিতে গোবর, গো-বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে কি ‘দেশের স্বার্থে’ আগামী দিনের গবেষণায় এইসব বিষয়ই বিশেষ গুরুত্ব পাবে?
বস্তুত বিজ্ঞান গবেষণার গলায় বেড়ি পরাতে বহু পুরস্কার ও ফেলোশিপ বাতিল করে দিয়েছে কেন্দ্র। প্রতি বছর যে ইন্ডিয়ান সায়েন্স আকাডেমির ৭২টি, ন্যাশনাল আকাডেমি অব সায়েন্সেসের ২০টি সহ বহু স্কলারশিপ ও পুরস্কার দেওয়া হতো তার অধিকাংশই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিজ্ঞান গবেষণায় উৎকর্ষের স্বীকৃতি, নতুন গবেষকদের বৃত্তি দিতে বিজ্ঞানীরা এসব পুরস্কার চালু করেছিলেন। পুরস্কারের অর্থমূল্য দিতেন বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থা। তবু তা বন্ধ করে দিল সরকার! আসলে নির্বাচন কমিশন, বিভিন্ন স্বাধীন সংস্থায় হস্তক্ষেপই নিয়মে পরিণত করেছে মোদি সরকার। উচ্চশিক্ষাতেও পাঠ্যসূচি পরিবর্তন, অনুদানের শর্তে পরিবর্তন, নিয়োগে হস্তক্ষেপ—মোদি জমানায় এসব শুরু হয়েছিল আগেই। এবার মৌলিক গবেষণার সঙ্গে বিজ্ঞান সংস্থাগুলিও সরকারের কোপে পড়ল।