পুরনো রোগের বৃদ্ধিতে স্বাস্থ্যহানির সম্ভাবনা। ব্যবসায় শুভত্ব বজায় থাকবে। আর্থিক প্রগতিও হবে। ... বিশদ
রাজা বদলালেও বদলায়নি বাংলা ও বাঙালির ভাগ্য। দিল্লির বর্তমান শাসকরা দেশজুড়ে ছোট ছোট রাজ্য চান। বাংলার মানচিত্রও এই প্ল্যানের অঙ্গ কি না খোলসা করেন না মোদিরা। কিন্তু পৃথক গোর্খাল্যান্ড, পৃথক কামতাপুর, গ্রেটার কোচবিহার প্রভৃতি আন্দোলনের পাশে বিজেপিকে বারবার পাওয়া যায়। কোনও সন্দেহ নেই, উত্তরবঙ্গে ভোট বাড়াতেই তাদের এই কৌশল। যেমন মোদির পার্টি এবার গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান অনন্ত মহারাজকে রাজ্যসভায় পাঠাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের খবর। বিজেপি নাকি তাঁকে আশ্বাস দিয়েছে, উত্তরবঙ্গকে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা দেওয়া হবে। এই কৌশল গেরুয়া শিবিরকে বাড়তি সুবিধা দেবে হয়তো। আর এখানেই প্রশ্ন, এত ঘটা করে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালনের গতি কী হবে? শ্যামাপ্রসাদের তৈরি রাজ্যটাকে ধ্বংস করাই তাঁর আজকের উত্তরসূরিদের ব্রত? কর্ণাটক এবং মধ্যপ্রদেশে পালিত হয় তাদের রাজ্যের প্রতিষ্ঠা দিবস। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ এমন দিবস পালনের প্রয়োজন বোধ করেনি। কারণ হিন্দুত্ববাদীরা যেদিনটিকে পশ্চিমবঙ্গের ‘প্রতিষ্ঠা দিবস’ বলে আহ্লাদ করে, ভারতীয় বাঙালিদের কাছে সেটি একটি বিষাদের দিন। স্বাধীনতা অনিবার্য হয়ে এলে পাঞ্জাব ও বাংলার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পাঞ্জাবভাগের বিষয়টি চূড়ান্ত হলেও, দ্বিমত ছিল বাংলা নিয়ে। নেতাদের মধ্যে শ্যামাপ্রসাদসহ একাংশ ছিলেন বাংলাভাগের পক্ষে। অন্যদিকে, শরৎচন্দ্র বসুসহ অন্য একাংশের স্বপ্ন ছিল বাংলার অখণ্ডতা। গান্ধীজিও বাংলাভাগের বিরুদ্ধে ছিলেন। তবু ক্ষমতার কারবারিদের তাড়াহুড়োয় ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ শেষপর্যন্ত রোখা যায়নি। তার আগে, ১৯৪৭-এর ২০ জুন অখণ্ড বাংলার প্রাদেশিক আইনসভায় এক ভোটাভুটিতে প্রদেশটি ভেঙে দু’টুকরো করার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হয়। বিজেপি এটাকে হিন্দু মহাসভার নেতা শ্যামাপ্রসাদের একার কৃতিত্ব বলে দাবি করে। বঙ্গ রাজনীতির সিলেবাসে অনেক দিবস আছে। কিন্তু ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ বলে কিছু ছিল না। জগদীপ ধনকর রাজ্যপাল হয়ে আসার পরই দিনটির কথা প্রথম শোনে রাজ্যবাসী। তিনিই রাজভবনে প্রথম পালন করেন দিনটি। গত ২০ জুন পালন করলেন সি ভি আনন্দ বোসও।
বিধানসভার বর্তমান বিরোধী দলনেতা তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়েই পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনের দাবি জানান। রাজ্য সেই দাবি না-মানায়, ২০২১-এ দিনটি বিধানসভায় তাঁর মতো করে পালনের উদ্যোগ নেন তিনি। অন্যদিকে, রাজভবনের এবারের উদ্যোগের কথা জানতে পেরেই রাজ্যপালকে বিরত থাকতে অনুরোধ করেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য ছিল, ‘রাজভবনের এমন সিদ্ধান্তে আমি হতবাক ও ব্যথিত। আমি এই রাজ্যে জন্মেছি, বড় হয়েছি—কিন্তু এমন দিন উদযাপন হতে দেখিনি। এটা করবেন না। আমাদের সরকারও এটা করে না। সেখানে আপনার নেতৃত্বে আলাদাভাবে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালিত হলে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হবে। তৈরি হবে অবিশ্বাস ও রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব।’ আমরা জানি, মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তি মানেনি রাজভবন। এমন অনুষ্ঠানের তাৎপর্য বুঝতে অসুবিধা হয় না—এটা নিছকই বিধানসভার বিরোধী দলনেতার অনুরোধ রক্ষা নয়, এর পিছনে রয়েছে মোদি সরকারের নির্দেশ ও বিরাট পরিকল্পনা। পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনের মধ্যে বাংলা-প্রীতি এবং রাজ্যের ‘স্রষ্টার’ প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের কোনও ব্যাপার নেই। এক ও একমাত্র মতলব, কিছু মানুষকে বোকা বানিয়ে বাংলাকে অস্থির করে তুলে ক্ষমতার অলিন্দের দিকেই একটু এগনো। উত্তরবঙ্গ কেন্দ্রিক ঘোলা জলের রাজনীতি সামনে আসায় গেরুয়া ধ্যাষ্টামো ফের পরিষ্কার হয়।