পুরনো রোগের বৃদ্ধিতে স্বাস্থ্যহানির সম্ভাবনা। ব্যবসায় শুভত্ব বজায় থাকবে। আর্থিক প্রগতিও হবে। ... বিশদ
সমরেশের সময় থেকে অনেকটাই এগিয়ে এসেছেন সুব্রত। পটভূমিকেও পাল্টে দিয়েছেন। পাতা উল্টে যাতে পড়তে অসুবিধা না হয়। মূল কাহিনির অসংখ্য চরিত্র আর ঘটনা কাটছাঁট করে সুখেন, শিখা, টুকু, জিনাদের গল্প সুব্রত তুলে এনেছেন মর্মস্পর্শী চিত্রনাট্যে। সুখেন, টুকু দুই ভিন্ন প্রজন্মের মস্তান। পুরুলিয়া টাউন কেন্দ্রিক ওদের দৌরাত্ম্য। কোনও পার্টি বা নেতার ছত্রছায়ায় নয়। একার তৈরি তল্লাট। ক্ষুর চালাতে হাত কাঁপে না। অথচ মনকেমন করে ওঠে মাস্টারমশাইয়ের পেনশনের টাকা লাল ফিতের ফাঁসে আটকে থাকলে।
সহজেই জট খুলে দেয় সুখেনদের বন্দুকের নল। যৌবন বাজি রেখে মঞ্চ মাতানো শিখারা সুখেনদের সঙ্গে সংসার বাঁধার স্বপ্ন দেখে। সমরেশের অনুসন্ধান ছিল যাপনের রুক্ষতায়, সমঝোতার সমীকরণে, পঙ্কিল আবর্তে পাক খাওয়া নিকৃষ্ট বারোমাস্যায়। সুব্রতর ছবির ক্যামেরা (বাসব মল্লিক) সেই সময়কে বহুমাত্রিক কোণ থেকে তুলে ধরেছে।
তিন ভিন্ন সময় ও প্রজন্মকে ছবির শেষে শঙ্কুর মতো একবিন্দুতে মিলিয়েছেন পরিচালক। আমরা তো কেউ নিজের ইচ্ছেয় পৃথিবীতে আসি না। তবুও কেন সব দায়িত্ব নিজেকেই বহন করতে হয়? তাই নিজেদের ঠিক কী করা উচিত বুঝে উঠতে পারে না সুখেন, টুকুরা। চিত্রনাট্যের চমৎকারিত্ব এখানেই। আর অভিনেতা সুব্রত দত্ত সেই দ্রোহকালকে দুর্দান্ত মুন্সিয়ানায় বাঙ্ময় করে তুলেছেন সুখেনের সংলাপে, নির্মমতায়, নীতিবোধে। অভিনেতা সুব্রত দত্ত যদি ছবির ছায়াপথ হন, ঋতব্রত মুখোপাধ্যায় চমকে দেওয়া পরিপূর্ণতা। টুকুর রুক্ষতা ও রোম্যান্টিকতা ঋতব্রত নির্মাণ করেছেন আশ্চর্য দক্ষতায়। এ এক অন্য ঋতব্রত, যাঁকে নতুন নজরে আবিষ্কার করবেন দর্শক। মেকআপ মুছে ফেলেও যে পর্দায় মায়া তৈরি করা যায় মুমতাজ সরকার ‘শিখা’র মধ্যে দিয়ে প্রমাণ করেছেন। আগুনের মতোই শুদ্ধ তাঁর অস্তিত্ব ও অভিনয়। প্রজাপতির মতো পর্দায় রং ছিটিয়ে দেন ‘জিনা’ শ্রীতমা দে। প্রজন্ম আর পরিবেশের সুর উঠে এসেছে আরব চৌধুরির সিম্ফনিতে। এ ছবি রুক্ষ বাস্তবের নির্মম নিয়তি। ষাটের দশকের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে বর্তমান সময়ের আবহে টিউন করতে গিয়ে সবটাই যে সময়োচিত ও সময়োপযোগী হয়ে উঠেছে, তা নয়। কিছু খামতি রয়ে গিয়েছে। কয়েকটি অপ্রধান চরিত্রের অভিনয়ে আরও একটু নজর দেওয়া যেত হয়তো। এই সেকেলেপনাটুকু বাদ দিয়ে এ ছবি ভীষণভাবে একেলে ও প্রাসঙ্গিক।