পারিবারিক ধর্মকর্ম পালনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ। সন্তানের কর্মসাফল্যে গর্ব। গবেষণায় অগ্রগতি। ... বিশদ
মানব সভ্যতার ধারক ও বাহক নদী। পর্বতের বরফ গলা জলে পুষ্ট প্রকৃতির এক অমূল্য অবদান। প্রকৃতি তার সৌন্দর্যের ডালি সাজিয়ে রেখেছে সমগ্র বিশ্বজুড়ে। মানব সভ্যতার সঙ্গে নদীর নিবিড় সম্পর্ক। সর্পিল গতিতে নিরন্তর প্রবাহমান এই জলধারা দেখলেই মনটা ভরে যায়। অথচ এই নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের মধ্যেও কত বিভীষিকা লুকিয়ে আছে, তা আমাদের অজানা! আসলে প্রকৃতির থেকে রহস্যময় আর কী-ই বা হতে পারে! আপন বেগে পাগল পারা নদীও কখনও কখনও মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে অপেক্ষা করে! আজ তেমনই দু’টি নদীর কথা জানব, যে নদী দুটি বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর নদীর তকমা পেয়েছে।
ওয়ার্ফে নদী
ইয়র্ক শায়ারের সবুজ প্রান্তরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে নদীটি। কবি উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের ‘দ্য ফোর্স অব প্রেয়ার’ কবিতায় এই নদীটির কথা পাওয়া যায়। এ এমনই এক নদী, যা শুধু মানুষের প্রাণই নিতে জানে। প্রাকৃতিক মরণফাঁদ ওয়ার্ফে দেখতে যতটাই সুন্দর, ঠিক ততটাই বিপজ্জনক। এর বিভ্রান্তিকর গভীরতা, শক্তিশালী চোরাস্রোত সাঁতারুদের কাছেও বিপজ্জনক। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৬৫ মাইল দীর্ঘ এই নদীর বিশেষ একটি অঞ্চলে পড়ে গেলে মৃত্যু অবধারিত। এই ঘাতক অঞ্চলটি ‘বলটন স্ট্রিড’ নামে পরিচিত।
স্ট্রিডের শুরুর ঠিক উত্তরে, দীর্ঘ পথের প্রস্থ সঙ্কুচিত ও বিপজ্জনক। এখানে ২৭ মিটার চওড়া নদীটির প্রস্থ হয়ে যায় ৬ ফুট । সংকীর্ণতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে গভীরতা ও স্রোতের ধারা। এই অঞ্চলে জলধারার গতি স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। জল এতটাই ঠান্ডা যে গ্রীষ্মকালেও তাপমাত্রা শীতের তুলনায় খুব সামান্যই বাড়ে। ফলে শরীর শক হয়ে যায় এবং সাঁতার কেটে নদীর তীরে পৌঁছানো অসম্ভব হয়ে পড়ে, যার পরিণতি মৃত্যু। কারও কারও মতে এই নদীগর্ভে রয়েছে অসংখ্য সুড়ঙ্গ। স্নান করতে জলে নামলে এই সুড়ঙ্গে তলিয়ে যায় মানুষ। আছে আরও কত অজানা রহস্য যার উদঘাটন আজও পুরোপুরি সম্ভব হয়নি।
শানায়-টিমপিশকা, পেরু
পৃথিবীর একমাত্র ফুটন্ত নদী হিসেবে পরিচিত এই নদীটির দৈর্ঘ্য সাড়ে ছয় কিলোমিটার। প্রস্থে প্রায় ৮২ ফুট, গভীরতা ২০ ফুট । নদীর জল এতটাই গরম যে, এই জলে পড়ে গেলে কোনও মানুষ বা প্রাণীর পক্ষে বেঁচে ফেরা সম্ভব নয়। এখানকার জলের উষ্ণতা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কোথাও কোথাও আবার সেই উষ্ণতা ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছিও পৌঁছে যায়। অত্যধিক উষ্ণতার কারণে নদীর জল ফুটতে শুরু করে। পেরু অঞ্চলে আমাজনের রেনফরেস্টে বহমান নদীটির ধারে ঘন সবুজ অরণ্যরাজি প্রায় ৬০ ফুট উঁচু প্রাচীরের মতন দণ্ডায়মান। স্থানীয় মানুষ এই নদীটিকে অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করেন। তাঁরা এও মনে করেন যে, এই নদীর জলের এমন অলৌকিক ক্ষমতা আছে, যা অনেক রোগব্যাধি হরণ করে। নদীটি ‘লা বাম্বা’ নামেও পরিচিত। ঠাকুরদার কাছে গল্প শুনেছিলেন এমন এক নদীর, যার জল ফুটন্ত । প্রথমে বিশ্বাস করেননি। নিছক মজাচ্ছলেই বেরিয়ে পড়েছিলেন সেই নদীর সন্ধানে এন্ড্রিজ রুজো। ২০১১ সালে নদীটির সন্ধান পান। তাঁর বই ‘দ্য বয়েলিং রিভার: অ্যাডভেঞ্চার অ্যান্ড ডিসকভারি ইন দ্য আমাজন’-এ লিখেছেন, ‘এই নদীর জল একটি উষ্ণ প্রস্রবণ থেকে আসে। নদী থেকে জল তুলে সরাসরি বানিয়ে নিতে পারেন চা।’
প্রকৃতি যতই সুন্দর হোক না কেন তার মধ্যে লুকিয়ে আছে অনেক অজানা বিপদও। যে নদীকে কেন্দ্র করে সভ্যতার বিকাশ, যে নদী সভ্যতার অগ্রগতির আশীর্বাদ, সেই নদীও কখনও কখনও প্রাণঘাতী হতে পারে। প্রকৃতির বুকে ছড়িয়ে আছে এমন কত রহস্যময় অজানা নদী যাদের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে কত প্রাণী অবগাহন করেছে তার জলে, কিন্তু প্রাণে বাঁচতে পারেনি কেউই। সেই রহস্যগুলো উন্মোচনের অপেক্ষায় দিন গুনছে আজও।