হোয়াইট নাইট— যেখানে রাতে কখনও পুরোপুরি আঁধার নামে না। বছরের ছ’মাস মাঝরাতেও সূর্যালোক দেখা যায় বেশ কিছু দেশে। তারই খোঁজ নিলেন শান্তনু দত্ত

‘এক যে আছে মজার দেশ, সব রকমে ভালো,
রাত্তিরেতে বেজায় রোদ, দিনে চাঁদের আলো!’
যোগীন্দ্রনাথ সরকারের লেখা ‘মজার দেশ’ ছড়া তোমাদের সকলেরই পড়া। মনে মনে নিশ্চয়ই ভেবেছ, এমন দেশ সত্যিই হয় নাকি! রাতের বেলা খটখটে সূর্যের আলো, দিনের বেলায় জ্যোৎস্নার দেখা মেলে? আশ্চর্য হলেও, এমনটা হয়। পৃথিবীর বুকে এমন কয়েকটি জায়গা রয়েছে, যেখানে রাতের বেলা দেখা মেলে রোদের। আর দিনের বেলায় থাকে নিকষ কালো। চল আজ তোমাদের সেই সমস্ত ‘মজার দেশ’ থেকে ঘুরিয়ে আনি। 

নরওয়ে
উত্তর মেরুর এই দেশ প্রায় সারা বছর ঢাকা থাকে বরফের চাদরে। কনকনে ঠান্ডায় দিন গুজরান স্থানীয়রা। তবে তোমরা কি জানো, গ্রীষ্মকালে নরওয়েতে সূর্যাস্ত হয় না। ৭৬ দিন একটানা সূর্যের আলো দেখা যায় এখানে। অর্থাৎ রাতের বেলাতেও আকাশে বিরাজ করে সূর্য। এই কারণে নরওয়েকে ‘নিশীথ সূর্যের দেশ’ও বলা হয়। নরওয়ের স্যালবার্ডে ১০ এপ্রিল থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত একটানা দিন থাকে। এই সময়ে পর্যটকরা ভিড় জমান এখানে। আবার শীতকালে দেখা যায় বিপরীত দৃশ্যের। এই সময়ে সূর্যোদয় হয় না নরওয়েতে। ফলে প্রচণ্ড ঠান্ডায় কাবু হতে হয় সকলকে। সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত এখানে দেখা যায় মেরুপ্রভা। অপূর্ব সুন্দর আলোর ছটা মুগ্ধ করে পর্যটকদের। 

ব্যারো, আলাস্কা
আলাস্কার উত্তর অংশের সবচেয়ে বড় শহরের নাম ব্যারো। শহরটির আসল নাম উটকিয়াগভিক। মে মাসের শেষ থেকে জুলাই পর্যন্ত এখানে সূর্য অস্ত যায় না। আবার নভেম্বরের শুরু থেকে টানা ৩০ দিন এখানে রাত বিরাজ করে। এই ঘটনা ‘পোলার নাইট’ নামে পরিচিত।

নুনাভাট, কানাডা
আর্কটিক সার্কেলের (সুমেরু বৃত্ত) ২ ডিগ্রি উপরে অবস্থিত নুনাভাট। বছরের দু’মাস এখানে সূর্য অস্ত যায় না। আবার শীতকালে টানা ৩০ দিন রাত থাকে এই অঞ্চলে। 

সুইডেন
মে মাসের শুরু থেকে আগস্ট মাসের শেষ পর্যন্ত এখানে মাঝরাতে সূর্য অস্ত যায়। সূর্যোদয় হয় ভোর ৪টেয়। একটানা ৬ মাস রোদ থাকে সুইডেনে। আবার পরবর্তী ছ’মাসে থাকে কেবল রাত।

আইসল্যান্ড
গ্রেট ব্রিটেনের পর ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ আইসল্যান্ড। আর এটিই এমন একটি দেশ যেখানে মশার দেখা পাওয়া যায় না। গ্রীষ্মকালে এখানে সূর্যের দেখা পাওয়া যায় না। আবার জুন মাসে রাতই হয় না আইসল্যান্ডে।  

ফিনল্যান্ড
ইউরোপের আরও এক দেশ ফিনল্যান্ডেও 
গরমকালে একটানা ৭৩ দিন সূর্যের আলো দেখা যায়। অন্যদিকে, হাজার হ্রদের এই দেশে শীতকাল জুড়ে থাকে গাঢ় অন্ধকার। এখানকার স্থানীয়রা শীতকালে বেশি ঘুমোন। আর গরমকালে যাবতীয় কাজ সেরে নেন। 

কেন এমন হয়?
দুই মেরু অঞ্চলে এমন ঘটনা ঘটার প্রধান কারণ হল, পৃথিবী কক্ষতলের সঙ্গে সাড়ে ৬৬ ডিগ্রি কোণে হেলে অবস্থান করে বলে। ২১ মার্চের পর থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পৃথিবী তার কক্ষপথের এমন স্থানে আসে যে উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে হেলে থাকে। এই সময় সুমেরু বিন্দু সর্বদা সূর্যের আলো পায়। অন্যদিকে, কুমেরু অঞ্চলে থাকে রাত। অন্যদিকে, ২৩ সেপ্টেম্বরের পর থেকে ২১ মার্চের আগে পর্যন্ত দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের দিকে হেলে থাকে। ফলে কুমেরুতে হয় দিন এবং সুমেরুতে এই সময় বিরাজ করে রাতের অন্ধকার। 
সবশেষে যোগীন্দ্রনাথ সরকারের লাইন তুলেই বলা যায়—
‘মজার দেশের মজার কথা বলব কত আর;
চোখ খুললে যায় না দেখা মুদলে পরিষ্কার।’