পারিবারিক ধর্মকর্ম পালনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ। সন্তানের কর্মসাফল্যে গর্ব। গবেষণায় অগ্রগতি। ... বিশদ
সুভাষচন্দ্রের অনুরোধে রবীন্দ্রনাথ প্রেক্ষাগৃহের নামকরণ করেন— ‘মহাজাতি সদন’। শান্তিনিকেতনের বিশিষ্ট স্থপতি ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ কর। তিনিই মহাজাতি সদনের নকশা তৈরির দায়িত্ব পান।
১৯৩৯ সালের সালের ১৯ আগস্ট সুভাষচন্দ্র বসু, বিধানচন্দ্র রায় প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তির উপস্থিতিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাজাতি সদনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। সেদিন বিশ্বকবি বলেছিলেন—
‘আজ এই মহাজাতি সদনে আমরা বাঙালি জাতির যে শক্তি প্রতিষ্ঠা করবার সংকল্প করেছি তা সেই রাষ্ট্রশক্তি নয়, যে শক্তি শত্রুমিত্র সকলের প্রতি সংশয় কণ্টকিত। জাগ্রত চিত্তকে আহ্বান করি; যার সংস্কারমুক্ত উদার আতিথ্যে মনুষ্যত্বের সর্বাঙ্গীণ মুক্তি অকৃত্রিম সত্যতা লাভ করি। বীর্য এবং সৌন্দর্য, কর্মসিদ্ধিমতী সাধনা এবং সৃষ্টিশক্তিমতী কল্পনা, জ্ঞানের তপস্যা এবং জনসেবার আত্মনিবেদন, এখানে নিয়ে আসুক আপন আপন বিচিত্র দান।’
পরবর্তীকালে ১৯৪১ সালে দেশনায়ক সুভাষচন্দ্র বসু দেশত্যাগ করলে ইংরেজ সরকার তাঁকে ফেরার ঘোষণা করে এবং তাঁর নামে থাকা মহাজাতি সদনের জমিটির লিজ বাতিল করে দেয়। নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। সুভাষচন্দ্রের অগ্রজ শরৎচন্দ্র বসু ও নৃপেন মিত্র ব্রিটিশের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে আপিল করেন। আদালতের রায় সরকারের বিপক্ষে যায়। লিজ বাতিল বেআইনি ঘোষিত হয়।
ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে ১৯৪৮ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ‘মহাজাতি সদন বিল’ পাস হয়। এর পর ফের মহাজাতি সদন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ১৯৫৮ সালের ১৯ আগস্ট তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় মহাজাতি সদনের দ্বারোদ্ঘাটন করেছিলেন। উদ্বোধনী ভাষণে তিনি উদাত্ত কণ্ঠে বললেন—
‘এই গৃহ হোক সমগ্র জনসমাজের সকল শুভকর্মের প্রাণকেন্দ্র। তাঁরা যেন এখানে ভারতের মনুষ্যত্ব এবং জাতীয়তার সর্বাঙ্গীণ উন্নয়নের জন্য জ্ঞান ও আলোক খুঁজে পান। তাহলেই এর মহাজাতি সদন নাম হবে সার্থক।’ মহাজাতি সদনের ঠিকানা— ১৬৬, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, কলকাতা-৭০০ ০০৭। এখানে সহস্রাধিক আসনবিশিষ্ট একটি প্রেক্ষাগৃহ রয়েছে। সদনের মধ্যে বহু বরেণ্য স্বাধীনতা সংগ্রামীর ছবি রক্ষিত আছে। রয়েছে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন নিয়ে প্রদর্শনী। আছে ‘নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জীবন ও সংগ্রাম’ বিষয়ক বিশেষ প্রদর্শনী। মহাজাতি সদনের মূল প্রেক্ষাগৃহের প্রবেশপথে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সুভাষচন্দ্র বসুর দু’টি আবক্ষ মূর্তি রয়েছে। ১০০ আসনবিশিষ্ট একটি পৃথক সভাকক্ষও আছে।
প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন সংক্রান্ত একটি গ্রন্থাগার ছিল। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের মৃত্যুর পর তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহের বইগুলি এই গ্রন্থাগারে স্থান পায়। তৎকালীন অছি পরিষদ গ্রন্থাগারের নামকরণ করেন ‘মহাজাতি সদন বিধানচন্দ্র গ্রন্থাগার’। স্বাধীনতা সংগ্রাম, বিপ্লবীদের জীবনী ইত্যাদি সহ গ্রন্থাগারে প্রায় ২০ হাজার বই আছে।
মহাজাতি সদনে সারা বছর কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে সভা, নাটক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সেমিনার, প্রদর্শনী ইত্যাদি আয়োজিত হয়। এছাড়া সদনের নিজস্ব চারটি বার্ষিক অনুষ্ঠান পালন করার রেওয়াজ রয়েছে। সেগুলি হল— ২৫ বৈশাখ রবীন্দ্র জয়ন্তী, ২৩ জানুয়ারি নেতাজি জয়ন্তী, ১ জুলাই ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের জন্ম ও প্রয়াণ দিবস ও ১৯ অাগস্ট মহাজাতি সদনের প্রতিষ্ঠা দিবস।