পারিবারিক ধর্মকর্ম পালনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ। সন্তানের কর্মসাফল্যে গর্ব। গবেষণায় অগ্রগতি। ... বিশদ
প্রবাদপ্রতিম সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় নাম দিয়েছিলেন ‘হীরা বন্দর’। শহর থেকে দূরে শিহরনের হীরা বন্দরে রুবির সঙ্গে তাঁর বেড়াতে যাওয়ার গল্প কাল্ট হয়ে আছে বাংলা সাহিত্যে। হাত বাড়ালেই গঙ্গার চওড়া বুকে ভেসে বেড়াচ্ছে বড় বড় ভেসেল। দূরে তিরতির করে কাঁপছে ডিঙিনৌকো। ঢেউ উঠছে ঢেউ নামছে। হীরা বন্দর বলে ডাকুন বা ডায়মন্ড হারবার, জলের গন্ধ সেখানে প্রতি শ্বাসে মিশে যায়। এমন মায়াবী এক নগর উপকণ্ঠে নতুন করে শাখা খুলল ইন্ডিয়ান কফি হাউস। কলেজস্ট্রিট, যাদবপুর, শ্রীরামপুরের পর এবার ডায়মন্ড হারবারে।
বইপাড়ার মাঝে দাঁড়িয়ে অ্যালবার্ট হল। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের গোপন কোনও অভিযানের দলিল রয়েছে যার শরীর জুড়ে। আর মন জুড়ে রয়েছে ইতিহাসের ফিসফিস কথা বলার শব্দ। সমাজ বদলের গন্ধ মেখে ফিউডালিজমের কোমরে পদাঘাত, নকশাল আন্দোলন সবকিছুর গোপন জবানবন্দি জমিয়ে রেখেছে এই হল। এতদিনে নাম বদলে সে-ই হয়ে গিয়েছে ‘কফি হাউস’। বাংলার সাহিত্য সংস্কৃতির অন্দরেও নানা মুভমেন্টের ঝড় উঠেছে এই কফি হাউসে। দিনশেষে হা ক্লান্ত শরীর টেনে এনে এখানকার ইনফিউশনে চুমুক দিতেই নিমেষে তরতাজা বাংলার কবি-সাহিত্যিক, শিল্পী, ছাত্রসম্প্রদায়। সিগারেটের ধোঁয়া আর কালো কফির মৌতাতে হাংরি জেনারেশন থেকে শুরু করে হালের প্রথম দশক— কফি হাউসের টেবিলে টেবিলে তারা রেখে চলেছে তাদের যুগের নিশান। আড্ডার খাতায় স্মৃতি হয়ে রয়ে গিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ-সুভাষ বসু থেকে শুরু করে শক্তি-সুনীল-মৃণাল-ঋত্বিক।
তেষ্টা পেলে কফি, আর খিদে পেলেই ফিস কবিরাজি, ফিস ফিঙ্গার, চিকেন স্যান্ডউইচ, চিকেন অমলেট, মোগলাই, আফগানি ইত্যাদি। সঙ্গে দোসর ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা। ডায়মন্ড হারবারে নতুন শাখা উদ্বোধনেও উঠে এল নস্টালজিয়ায় ঠাস বুনট। কফি হাউস ঘিরে কিশোর ও যৌবনের স্মৃতি তুলে আনলেন উদ্বোধক সাহিত্যিক অমর মিত্র, কবি ও গল্পকার মৃদুল দাশগুপ্ত, পরিচালক সুদেষ্ণা রায়, গল্পকার ঝড়েশ্বর চট্টোপাধ্যায়, কবি প্রসূন ভৌমিক, অধ্যাপিকা অনন্যা চক্রবর্তী, নাট্যকার দেবপ্রসাদ মণ্ডলরা। মঞ্চে হাজির ছিল ব্যান্ড সহজ মানুষ। প্রসূন ভৌমিকের কবিতা ‘মা’ ভিডিও আকারে প্রকাশ পায় এই মঞ্চেই।
এসি ও নন এসি মিলিয়ে দুই কামরার এই কফি হাউসের জানলার ধরে বসলেই সামনে উন্মুক্ত গঙ্গার হাতছানি। বর্তমানে কফি হাউস পরিচালনার ভার ন্যস্ত রয়েছে কফিহাউসের কোঅপারেটিভ, কর্মী ও কর্মচারীদের দ্বারা পরিচালিত বোর্ডের উপর। কফি হাউস সমবায় সমিতির উপদেষ্টা প্রসূন ভৌমিকের আশা, এই আউটলেটটি কলেজ স্ট্রিটের মতোই নগরের শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির পীঠস্থান হয়ে উঠবে। এই কফি হাউস জেলার পর্যটনশিল্পেও জোয়ার আনবে।
গঙ্গার ছলাৎ ছল ঢেউ, নগরীর ব্যস্ত রাস্তা আর টেবিলে চিরায়ত হট কফি বা ইনফিউশন, আড্ডাপ্রিয় এক জাতির এ যেন শিকড়ে ফেরার অভিযান। হীরা বন্দরের হাওয়াবাতাস আপনাকেও ডাকছে।