পারিবারিক ধর্মকর্ম পালনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ। সন্তানের কর্মসাফল্যে গর্ব। গবেষণায় অগ্রগতি। ... বিশদ
বাচ্চাদের অনেকেরই এমন সমস্যা থাকে। বিহেভিওরাল থেরাপিস্ট সাধনা দুগ্গার জানালেন এটা কোনও রোগ নয়, ব্যবহারগত সমস্যা। আমাদের সকলের মনেই শান্ত এবং অশান্ত দুটো ভাগ থাকে। ইমনের ক্ষেত্রে অশান্ত ভাগটা বেশি। তাই তার চঞ্চলমতি আচরণ বাগে আনা যায় না। বাচ্চাদের এমন স্বভাবগত ত্রুটি আগেও ছিল। তখন তাদের অতিরিক্ত দুরন্ত বলা হতো। তাঁর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এক সহকর্মীর দস্যি পুত্রের কথা মনে পড়ে গেল। মায়ের ওড়না পিঠে বেঁধে স্পাইডারম্যান সেজে জানালার সিল থেকে ঝাঁপ দিয়ে পড়েছিল সে মায়েরই পায়ের উপর। সঙ্গে সঙ্গে হাঁটুর মালাইচাকি ঘুরে যায় মায়ের। অতি যন্ত্রণায় কাঁদতে কাঁদতেও কিন্তু মা পুত্রটির মানসিক গঠনের সমস্যা নিয়ে ভাবেননি। বরং অতিরিক্ত দুরন্ত ছেলে নিয়ে চিন্তা বেড়েছিল তাঁর। প্রশ্ন হল, এমন দুরন্ত বা হাইপার অ্যাক্টিভ বাচ্চাকে বাবা মা সামলাবেন কী করে? অতিরিক্ত সচেতন থাকতে হবে তাদের। বাচ্চা সামলানোর কিছু পরামর্শ দিলেন ডাঃ দুগ্গার।
বাচ্চার সঙ্গে অনবরত কথা বলতে হবে। বকে-মেরে কোনও লাভ নেই। তাতে পরিস্থিতি সামলানো যায় না। তাই তার সঙ্গে বাচ্চাদের মতো নয়, বরং বড়দের মতো আচরণ করা দরকার। কেমন সেই আচরণ? যে কোনও কথা খুব আস্তে ধীরে শান্তভাবে তার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। আলোচনার করার ভঙ্গিতে যেন জ্ঞান দিচ্ছেন এমন ইঙ্গিত না থাকে।
আলোচনা করার মাধ্যমে কয়েকটা জিনিস বুঝিয়ে দিন। তার অতিরিক্ত দুরন্তপনায়, স্কুলের বন্ধুদের নালিশে বাবা মা হিসেবে আপনারা কষ্ট পাচ্ছেন। তার এই আচরণের ফলে তার ক্ষতি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। মারামারি করে সে নিজেও আহত হচ্ছে, পড়ায় মন বসাতে পারছে না, সবার কাছে বকুনি খাচ্ছে, কেউ তার বন্ধু হতে চাইছে না— এই ধরনের জিনিসগুলো তাকে বারবার বলুন।
সব বাচ্চারই কোনও না কোনও জিনিসের প্রতি টান থাকে। কেউ গল্প শুনতে ভালোবাসে, কেউ গান শুনতে ভালোবাসে, কেউ হয়তো আঁকতে পছন্দ করে, কেউ বা কোনও বাদ্যযন্ত্র বাজাতে ভালোবাসে। আপনার হাইপার অ্যাক্টিভ বাচ্চার কোন জিনিসটা পছন্দ, তা খুঁটিয়ে লক্ষ করে বুঝে নিন। তারপর সেই দিকে তার মনটা ঘোরানোর চেষ্টা করুন।
এক্ষেত্রে বলা দরকার বাচ্চার টান যেদিকে, সেই কাজটা তাকে নিজের মনে করতে দিতে হবে। অর্থাৎ আপনার অতি চঞ্চল শিশুটি আঁকতে ভালোবাসে বুঝলেন আর অমনি তাকে আঁকার স্কুলে ভর্তি করে দিলেন, তা হলে চলবে না। বরং তাকে নিজের মনের খুশিতে আঁকতে দিন। এতে আরও একটা লাভ হবে, তার কল্পনাশক্তি বাড়বে।
গান শুনতে ভালোবাসলে সেই নেশা তৈরি করতে সাহায্য করুন। ভালো গান, বাজনা শোনান। গানের মাধ্যমে অশান্ত মন শান্ত হয়। চঞ্চলতা অনেকটাই কমে যায়।
যে কোনও এক্সারসাইজ বা খেলাধুলোর অভ্যাস করান। এক্সারসাইজের মধ্যে ফ্রিহ্যান্ড যেমন রাখবেন, তেমনই আবার যোগাসনও রাখবেন। আর যোগাসনের শেষে প্রতিদিন পাঁচ মিনিট মেডিটেশন অভ্যাস করান তাকে।
বাচ্চার মনঃসংযোগ বাড়াতে পারলে চঞ্চলতা অনেকটাই কমে। এর জন্য উপযুক্ত কিছু খেলা রয়েছে। সেগুলো বাচ্চাকে খেলতে দিন। এমন অনেক বোর্ড গেমস আছে যা মনঃসংযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। সেই ধরনের বোর্ড গেমসে বাচ্চার মন বসানোর চেষ্টা করুন। দাবা, স্ক্র্যাবল ইত্যাদি খেলার মাধ্যমে বুদ্ধির বিকাশ এবং মনঃসংযোগ দুই-ই বাড়ে।
বাচ্চাকে সময় দিন। তার সঙ্গে তার মতো করে মিশুন। মনে রাখবেন, শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে। ফলে বাচ্চা মানেই তাকে বকে-ধমকে মানুষ করবেন এমন ধারণা ক্রমশ পাল্টে যাচ্ছে।
এক একটি বাচ্চার মানসিক গঠন এক এক রকম। সেই অনুযায়ী তাদের সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। বাবা মায়ের কাছে যেন বাচ্চারা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পায়, সেটা খেয়াল রাখার দায়িত্ব কিন্তু বাবা মায়েরই।