পারিবারিক ধর্মকর্ম পালনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ। সন্তানের কর্মসাফল্যে গর্ব। গবেষণায় অগ্রগতি। ... বিশদ
হাঁটার মাধ্যমে মনে মনে প্রশান্তি অনুভব করতে পারেন। এছাড়া হাঁটলে শরীরও যে ভালো থাকে সেটা বাড়তি পাওনা। জানালেন লাইফস্টাইল থেরাপিস্ট শুভ্রা সেনগুপ্ত। তাঁর কথায়, ‘ওজন বেড়ে গেলে চিকিৎসকরা হাঁটার কথা বলেন। শরীর চাঙ্গা থাকে তাতে। হাঁটা একটা মানসিক এক্সারসাইজও বটে। এই প্রসঙ্গে একটা গল্প বলি। মার্টিন লুথার কিং-এর হত্যার পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে একটা স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছিল আমেরিকার টেনেসিতে। দার্শনিক থেকে ইতিহাসবিদ অনেকেই আমন্ত্রিত হন সেই সভায়। মার্টিন লুথার কিং-এর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে জনৈক দার্শনিক পদব্রজে উপস্থিত হলেন। সবাই তাঁর দিকে তাকিয়ে রয়েছে, চোখে মুখে কৌতুকের ছাপ। দার্শনিক কিন্তু সাধারণ ভঙ্গিতেই বলেন, হেঁটে আসার মাধ্যমে নিজের সঙ্গে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়েছেন তিনি। এই সুযোগ আজকালকার যান্ত্রিক পৃথিবীতে বিরল। কিন্তু নিজের সঙ্গে এই যে সময় কাটানো, এ এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা। নানা চিন্তা মনে মনে বিচার করার সুযোগ পাওয়া যায়। সেদিনের সময়টুকু যেমন তিনি মার্টিন লুথার কিং ও তাঁর কৃতকর্ম বিশ্নেষণ করে কাটিয়েছেন।’
হাঁটার এই ভিন্ন স্বাদ উপলব্ধি করেন ভ্রামণিকরাও। পাহাড়ের আনাচকানাচ বা জঙ্গলের বিস্তীর্ণ নিস্তব্ধ পরিবেশের মাঝে হাঁটতে হাঁটতে যে শুধুই প্রকৃতির শোভা দেখার সুযোগ হয় তা নয়, বরং নিজের সঙ্গে খোলা মনে কথা বলারও সুযোগ পাওয়া যায়। আর সেই সুযোগ ক্রমশ আমাদের জীবনে হ্রাস পাচ্ছে। ফলে হাঁটা কেবলই শারীরিক নয়, মানসিক ব্যায়ামও বটে, বললেন শুভ্রা।
শরীর তরতাজা
দর্শনের কচকচি বরং আজ থাক। হাঁটার মাধ্যমে শারীরিক ব্যায়াম কতটা এবং কীভাবে সম্ভব, সেই নিয়েই আলোচনা করব আমরা। এই প্রসঙ্গে জেনারেল ফিজিশিয়ান ডাঃ আশিস মিত্র বলেন, ‘রোজ যদি এক ঘণ্টা করে হাঁটা যায় তাহলে এক বছরে দশ কেজি ওজন কমবে। তবে অবশ্যই এর সঙ্গে ডায়েটের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। সাধারণ ও সুষম আহার থাকলে ও তার সঙ্গে এক ঘণ্টা হাঁটলেই যথেষ্ট।’
ঘাম ঝরুক
কিন্তু কেমনভাবে হাঁটবেন? ডাক্তারবাবুর মতে হাঁটার ধরন হবে ‘ব্রিস্ক’। মোটামুটি ঘণ্টায় চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার হাঁটাকেই বলে ‘ব্রিস্ক ওয়াক’। কিন্তু আপনার হাতে ধরুন স্মার্ট ঘড়ি নেই। তাহলে বুঝবেন কী করে যে কতক্ষণে কতটা হাঁটলেন? তাই মাপটার সঙ্গে একটা শারীরিক অনুষঙ্গও জুড়ে দিলেন আশিসবাবু। তিনি বললেন, ‘ঘাম ঝরিয়ে হাঁটার নামই হল ব্রিস্ক ওয়াক। তাতেই কাজ দেবে।’
বয়স মেনে
এখন প্রশ্ন হল কোন বয়স থেকে রোজকার জীবনে ব্রিস্ক ওয়াক ঢোকাবেন? লাইফস্টাইল থেরাপিস্ট এবং ডাক্তারবাবু দু’জনেই বললেন, মোটামুটি পঁচিশ থেকে আঠাশ বছর বয়স যখন, তখন থেকেই ঘাম ঝরিয়ে হাঁটাকে জীবনের অঙ্গ করে নেওয়া প্রয়োজন। এর কারণটাও অবশ্য সবিস্তারে বোঝালেন চিকিৎসক। আমাদের জীবনধারণে কিছু পদ্ধতিগত বদল এসেছে। আমরা অনেক বেশি যন্ত্রনির্ভর হয়ে পড়েছি। আমাদের মস্তিষ্ক যতই সচল হয়েছে শরীর ততই অচল। এখন মস্তিষ্কের কাজে আমরা এতটাই মগ্ন হয়ে পড়েছি যে শারীরিক পরিশ্রম প্রায় করিই না। কাজের ধরনও সেডেন্টারি। এক জায়গায় বসে। এর ফলে আমাদের শরীরে কিছু রোগ অযাচিতভাবে বাসা বেঁধে বসে। এই ধরনের রোগগুলোকে লাইফস্টাইল ডিজিজ বলা হয়। তার মধ্যে ডায়াবেটিস, হার্ট ফেলিওর, ওবেসিটি সবই রয়েছে। আর সেই কারণেই আমাদের রোজ নিয়ম করে এক্সারসাইজ করতে হবে। সেই এক্সারসাইজের মধ্যে সবচেয়ে সহজ হল হাঁটা। সব বয়সের সকলের জন্যই হাঁটা উপযুক্ত। তাই এর উপর এতটা জোর দেওয়া হয়। তবে সুগার থাকলে খালি পায়ে হাঁটবেন না। এমনকী, ভিজে ঘাসের উপরেও হাঁটবেন না। পায়ে কিছু ফুটে গেলে তা থেকে ডায়াবেটিক ফুট হতে পারে।
হাঁটার সঙ্গে জগিং
হাঁটার সঙ্গে একটু জগিং জুড়ে দিলে আরও ভালো হয়, বললেন আশিসবাবু। এক ঘণ্টা হাঁটলে যা উপকার পাওয়া যায়, আধ ঘণ্টা জগিংয়েও সেই উপকারই পাবেন। কিন্তু জগিং সবসময় সকলের পক্ষে সম্ভব হয় না। কেউ বয়সের কারণে, কেউ বা সামাজিক কারণে আবার কেউ শারীরিক কারণেও জগিং করে উঠতে পারেন না। কিন্তু হাঁটতে তো কোনও বাধা নেই। তাই ওবেসিটির মতো রোগ তাড়াতে হলে হাঁটাই অব্যর্থ।
প্রাণবন্ত ওয়াকিং স্টাইল
হাঁটা অনেক ক্ষেত্রেই একঘেয়ে হয়ে যেতে পারে, বললেন লাইফস্টাইল থেরাপিস্ট শুভ্রা। তাঁর মতে রোজ একসময় নিয়ম করে হাঁটতে বেরনো অনেকের কাছেই বিরক্তিকর। তাই হাঁটার মতো এক্সারসাইজকেও একটু প্রাণবন্ত করে তুলতে হলে তার সঙ্গে মিউজিক যুক্ত করুন। অর্থাৎ হাঁটার সময় কানে যদি কোনও গান বাজে তাহলে সেই তালে হাঁটতে ভালো লাগবে।
এছাড়াও মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ ওয়াকিং-এর কথাও বলেছেন তিনি। যেমন হাঁটার ছন্দের সঙ্গে নাচের কিছু স্টেপসও জুড়ে নিন। অথবা হাঁটার ছন্দ ভেঙে একটু জগিং করুন। অথবা খানিকক্ষণ হাঁটার পর অল্প দম নিয়ে একটু স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করুন বা স্কিপিং করুন। এগুলো সবই যদি হাঁটার সঙ্গে মিলিয়ে মিশিয়ে করা যায় তাহলে হাঁটার ছন্দে প্রাণ আসবে।
ব্যথা কমাতে
এবার একটু রোগের কথায় ফেরা যাক। বয়স্কদের ক্ষেত্রে যদি বাতের ব্যথায় কাবু হন তাহলে হাঁটবেন কী করে? চিকিৎসক বললেন, বাতের ক্ষেত্রে সমতলে হাঁটা যে একেবারেই অসম্ভব তা নয়। বাড়ির ছাদে বা সমতল রাস্তায় হাঁটা যেতেই পারে। অবশ্য হাঁটুর উপর চাপ দেওয়া যাবে না। ফলে একটানা একঘণ্টা হাঁটা হয়তো এঁদের ক্ষেত্রে অসম্ভব। হাঁটার রুটিনটা সেক্ষেত্রে ভেঙে নিতে হবে। একটানা না হেঁটে বারে বারে হাঁটুন। ব্যথা অনুভব করলে বিশ্রাম নিন। আবার সচল বোধ করলে হাঁটা শুরু করুন। এইভাবেই শরীরকে চালনা করুন। আর এঁরা যদি সাঁতার কাটতে পারেন তাহলে কিন্তু উপকার আরও বেশি। অনেকে কার্ডিও এক্সারসাইজ বা সাইক্লিং করেন, তাতেও উপকার পাওয়া যায়।
ডায়েটও জরুরি
হাঁটার সঙ্গে ডায়েটের দিকেও খেয়াল দেওয়া দরকার। শুধু হাঁটলাম আর যেমন খুশি খেলাম সেটা কিন্তু চলবে না। ফলে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, খনিজ সবই পরিমাণ মতো খেতে হবে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক যদি ১৪০০ থেকে ১৬০০ কিলো ক্যালোরি আহার দিনে গ্রহণ করেন, তাহলে ওজন কমাতে হলে সেটা কমিয়ে ১২০০ কিলো ক্যালোরিতে আনতে হবে। তার জন্য কার্বোহাইড্রেট কমিয়ে প্রোটিন ও মিনারেলস পরিমাণে বেশি খেতে হবে। প্রোটিনের মধ্যে মাছ, মাংসের পাশাপাশি দুধ, দই, ডাল ইত্যাদিও খাওয়া যেতে পারে। আর বেশি পরিমাণে ফল খেতে হবে। ফলে ডায়েট চার্ট মেনে চললে এবং নিয়ম করে হাঁটলে ওজন কমবেই।