পারিবারিক ধর্মকর্ম পালনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ। সন্তানের কর্মসাফল্যে গর্ব। গবেষণায় অগ্রগতি। ... বিশদ
আমাদের মানবদেহ অসংখ্য ব্যাকটেরিয়া এবং কিছু ভাইরাসের নিবাসস্থল। আমাদের অন্ত্রেই থাকে কয়েক কোটি ব্যাকটেরিয়া। জন্মের পর নানাভাবে এই ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করে। এছাড়া বেশ কিছু ভাইরাসও শরীরে প্রবেশ করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সঙ্গে লড়াই করে হেরে যায় এবং ঘাপটি মেরে শরীরের অন্দরে বসে থাকে। আমাদের আজকের আলোচনা তেমনই কিছু ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া নিয়ে।
লেটেন্ট টিবি
শরীরে একাধিক ব্যাকটেরিয়া সুপ্ত অবস্থায় থাকলেও সবচাইতে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া হল মাইক্রোব্যাকটেরিয়াম টিউবারক্যুলোসিস। এই ব্যাকটেরিয়ার কারণেই হয় টিবি। শরীরে টিউবারক্যুলোসিসের ব্যাকটেরিয়া সুপ্ত অবস্থায় থাকলে তাকে বলে লেটেন্ট টিবি।
লেটেন্ট টিউবারক্যুলোসিস একজন ব্যক্তির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। ডায়াবেটিস থাকলে, ধূমপান করলে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়। ফলে এমন ব্যক্তির দেহে টিউবারক্যুলোসিসের জীবাণু বংশবৃদ্ধি করার সুযোগ পায়। এছাড়া ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। ক্যান্সারের রোগীর ক্ষেত্রেও টিউবারক্যুলোসিসের সমস্যা মাথাচাড়া দিতে পারে।
ইন্টাফেরন গোল্ড, মান্টু টেস্ট পজিটিভ এলে সেক্ষেত্রে ধরতে হয়ে লেটেন্ট টিবি ইনফেকশন আছে। সেক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আইসোনিয়াজিড প্লাস রিফাপেন্টাইন, লিভোফ্লোক্সাসিন ইত্যাদি ওষুধ দিয়ে শরীরে লুকিয়ে থাকা জীবাণুকে নষ্ট করা যেতে পারে। তবে আশার কথা একটাই, লেটেন্ট টিউবারক্যুলোসিস একজন ব্যক্তি থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়ায় না। এই প্রসঙ্গেই জেনে রাখুন, টিউবারক্যুলোসিস শুধু যে ফুসফুসে বাসা বেঁধে থাকে, তা কিন্তু নয়। ইউরিনারি ট্র্যাক্ট, জিআই ট্র্যাক্ট, ব্রেনেও টিউবারক্যুলোসিস হতে পারে। সুতরাং টিবি সক্রিয় হয়েছে মানে সবসময় যে উপসর্গ হিসেবে কাশি হবে, এমন নয়। দীর্ঘদিনের পেট গন্ডগোল, লুজ মোশন, ওজন কমে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই একবার টিবির কথা ভাবতে হবে। এছাড়া হঠাৎ করে কনভালশন হলে ব্রেনে টিউবারক্যুলোমোর কথাও স্মরণে রাখা প্রয়োজন।
সুপ্ত ভাইরাস
একাধিক ভাইরাস শরীরের অন্দরে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। যেমন-হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস, সাইটোমেগালো ভাইরাস, ভেরিসিলা জস্টার ভাইরাস, এপস্টাইন বার ভাইরাস হল হারপিস ভাইরাস পরিবারের সদস্য। এগুলির জন্য জ্বরঠোসা, চিকেনপক্স, গ্ল্যান্ডে সংক্রমণ ও ফুলে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা যায়।
এই ধরনের ভাইরাসে সাধারণত মানুষ ছোটবেলায় আক্রান্ত হয়। এরপর সারাজীবন এই ভাইরাসগুলি শরীরে সুপ্ত অবস্থায় থেকে যায়। সাধারণত শরীরের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা অসুখগুলিকে শরীরের অন্দরে দমিয়ে রাখে। বয়স, ডায়াবেটিস, ধূমপান, মদ্যপানে আসক্তি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে অসুখগুলি পুনরায় শরীরে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। সাধারণত অ্যান্টি ভাইরাল থেরাপিতেই কাজ হয় ও সপ্তাহ দুয়েকের মাথায় সমস্যা মিটে যায়।
এইচআইভি
এছাড়াও এইচআইভি এর কথা বলতে হয়। রক্ত অথবা অসুরক্ষিত ঘনিষ্ঠ শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে এই ভাইরাস প্রবেশ করে শরীরে। এরপর এইচআইভি শরীরে দীর্ঘদিন অবধি সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। তবে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখার জন্য দায়ী কোষগুলিকে নষ্ট করতে থাকে ধীরে ধীরে। ফলে ঘন ঘন জ্বর, ওজন কমে যাওয়া, খিদে কমে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমন ক্ষেত্রে প্রথমে লিভার ফাংশন টেস্ট করে দেখতে হবে লিভারের কোনও সমস্যা আছে কি না। এলএফটি টেস্ট-এ কোনও সমস্যা ধরা না পড়লে সেক্ষেত্রে টোটাল হোয়াইট ব্লাড সেল কাউন্ট করে দেখা প্রয়োজন। কোনও কারণে প্রতি মাইক্রোলিটারে হোয়াইট ব্লাড সেলের সংখ্যা ৪ হাজারের কম হলে সেক্ষেত্রে সাবধান হতেই হবে। এইচআইভি সংক্রমণের কথাও ভাবতে হবে।
এলাইজা টেস্ট-এর মাধ্যমে দেখতে হয় এইচআইভি সংক্রমণ আছে কি না। এরপর সেরোলজি করে ভাইরাল লোড জানা সম্ভব হয়। এইচআইভি-এর ক্ষেত্রে রয়েছে অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি। সমস্ত সরকারি হাসপাতালে এআরটি সেন্টারে ওষুধ পেতে পারেন রোগী।