পারিবারিক ধর্মকর্ম পালনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ। সন্তানের কর্মসাফল্যে গর্ব। গবেষণায় অগ্রগতি। ... বিশদ
• কত ধরনের সাপ আমাদের মূলত কামড়াতে পারে?
•• সাপে কামড়ানোর পর চিকিৎসা কোন পথে এগবে জানার আগে এই মূল কথাটি আমাদের জেনে নিতে হবে। আমাদের রাজ্যে প্রধানত চার ধরনের বিষাক্ত সাপ মানুষকে কামড়ায়। ১. ফণাযুক্ত সাপেদের মধ্যে গোখরো ও কেউটে। এরা নিউরোটক্সিক ২. ফণাবিহীন সাপেদের মধ্যে কালচিতি বা ডোমনাচিতি বা কালাচ (নিউরোটক্সিক) এবং ৩. চন্দ্রবোড়া, যা হিমোটক্সিক। এটি রক্ততঞ্চনে (রক্ত জমাট বাধা) বাধা দেয়।
• গ্রামবাংলায় বা জলা জায়গায় জলঢোড়া সাপও দেখা যায় যে, তারাও তো কামড়ায়?
•• হ্যাঁ কামড়ায়। আমাদের রাজ্যে জলঢোড়া সাপের দৌরাত্ম্য আছে। তবে এই সাপ নির্বিষ। তাই কামড়ালে কিছু হয় না। একটি টিটেনাস ইঞ্জেকশনই সেক্ষেত্রে যথেষ্ট।
• গোখরো বা কেউটে, সবচেয়ে বেশি বিষধর যারা, সেইসব সাপে কামড়ালে কি বাঁচার আশা থাকে?
•• অবশ্যই থাকে। যে কোনও সাপ কামড়াক না কেন, সাপে কামড়ানোর পর প্রথম ১০০ মিনিটের মধ্যে যদি অ্যান্টিভেনাম সিরাম বা এভিএস দেওয়া যায়, তাহলে সেই রোগী নিশ্চিতভাবে বাঁচবেন। একে বলে ‘হান্ড্রেড মিনিটস রুল’ বা ‘রুল অব হান্ড্রেড’। সাপে কামড়ানোর চিকিৎসা সম্পর্কে সচেতন করতে গিয়ে আমরা সবচেয়ে আগে এই কথাই বলি।
• তাহলে বলছেন, সাপে কামড়ানোর পর সময়টাই সবচেয়ে দামি?
•• সর্পাঘাতে প্রাণ বাঁচানোর প্রশ্নে সময়ে চিকিৎসা সবচেয়ে জরুরি। ১০০ মিনিটের মধ্যে এভিএস যেভাবেই হোক দিতে হবে। তাহলেই আর প্রাণহানির আশঙ্কা থাকবে না।
• কোনও ব্যাক্তিকে সাপে কামড়ানোর পর তাঁর পরিজনদের প্রাথমিক কাজ কী?
•• প্রথমেই জায়গাটিকে নন মোবিলাইজড করে তোলা প্রয়োজন। নন মোবিলাইজড করার অর্থ শক্ত বন্ধন নয়। জায়গাটার মুভমেন্ট বা নড়াচড়া বন্ধ করে দেওয়া। যে জায়গায় সাপে কামড়াবে সেই অঞ্চলকে স্কেল বা লম্বা লাঠি ও দড়ির সাহায্যে হাল্কা করে বেঁধে রাখুন, অনেকটা হাড় ভাঙার পর প্লাস্টার করার আগে যেমন সেট করে দেওয়া হয়। এবার রোগীকে দ্রুত নিয়ে যেতে হবে নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। বর্তমানে সব স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই সাপে কামড়ানোর উত্তম চিকিৎসাব্যবস্থা আছে। খুব দ্রুত রোগীকে অ্যাক্রোপিন ও নিওসিস্টিন এই দু’টি ইঞ্জেকশন দিতে হয়। এরপর তাঁকে এভিএস দিতে হবে। এই পুরো প্রক্রিয়াটি সারতে হবে ১০০ মিনিটের মধ্যে।
• তাহলেই কি রোগী বিপদমুক্ত?
•• হ্যাঁ, সম্পূর্ণ চিকিৎসা ১০০ মিনিটের মধ্যে হলে প্রাণ হারানোর ভয় থাকে না। কিন্তু রোগী হাসপাতালে আসতে এত দেরি করেন যে, প্রতি বছর সাপে কামড়ানোর জন্য প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। গোখরো কামড়ানোর পর পুরো চিকিৎসা প্রক্রিয়া ১০০ মিনিটের মধ্যে শেষ হলেও, কোনও কোনও রোগীর কিডনি বিকল হয়। তবে তা সাময়িক। দিন কয়েক ডায়ালিসিস চালালে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যান। পরে আর ডায়ালিসিসও লাগে না।
• সাপেই যে কামড়েছে তা রোগী বুঝবেন কী করে?
•• খুব সহজ পথে আমরা বুঝতে চেষ্টা করি। দংশনের চিহ্ন হিসেবে দুটো বিন্দু দেখা যাচ্ছে কি না। তবে সবক্ষেত্রে দুটো দাগ দেখাও যায় না। আবার কালচিতি সাপ কামড়ালে কোনও ব্যথা বা দাগ হয় না। আক্রান্ত বুঝতেও পারেন না তাকে সাপে কামড়েছে। তাই এই সাপ কামড়ানোর পরে দেরি করে ফেলেন রোগীর পরিজনরা। এই সাপ কামড়ালে কিছু সময়ের পর থেকে পেটে ব্যথা, গলায় ব্যথা ও চোখের উপরের পাতা পড়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা যায়। তাই তেমন কিছু দেখলেই সরাসরি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হাজির হতে হবে। চেষ্টা করতে হবে মেঝেতে না শুয়ে বিছানায় ঘুমানো, মশারি টাঙানো ও সাপ যাতে না আসে বাড়ির চারপাশে, তার ব্যবস্থা করা।
• যেমন?
•• আমাদের ধারণা, কার্বোলিক অ্যাসিড বা ফিনাইলে সাপ চলে যায়। এটি সম্পূর্ণ মিথ। সাপ মূলত নিজের খাবারের খোঁজে ঘরে ঢুকে পড়ে। সাপের খাবার ইঁদুর। তাই বাড়িতে যাতে ইঁদুর না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাহলেই সাপকে আটকানো যাবে।
মনীষা মুখোপাধ্যায়