পারিবারিক ধর্মকর্ম পালনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ। সন্তানের কর্মসাফল্যে গর্ব। গবেষণায় অগ্রগতি। ... বিশদ
• সহনশীল হয়ে রোগী দেখা, সরকারি হাসপাতালের ভিড়ে কতটা সম্ভব?
•• সরকারি হাসপাতাল, বিশেষত কলকাতার প্রথম সারির সরকারি হাসপাতাল মানেই একটি চিত্র আমাদের মনে ভেসে ওঠে, থিকথিকে ভিড়। ভাবনাটা মিথ্যে নয়। দূর দূরান্ত থেকে বহু মানুষ ছুটে আসেন ‘কলকাতার ডাক্তার’ দেখাবেন বলে। এই ‘কলকাতার ডাক্তার’ বিষয়টি তাঁদের প্রত্যেকের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই সেখানে এসে যদি চিকিৎসকের সঙ্গে ভালো করে কথা বলার, তাঁর রোগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার সুযোগ না পান বা প্রয়োজনীয় চিকিৎসাটুকুও না পান, তিনি কিন্তু বিফল মনোরথ হয়ে ফিরে যাবেন ও গোটা স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়েই তাঁর মনে ক্ষোভ তৈরি হবে। তাই সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের প্রবল ভিড়েও ধৈর্য ধরে রোগী দেখার অনুশীলন করতে হয়। চিকিৎসক জীবনে ঠান্ডা মাথায় এত রোগীর ভিড় সামলানোটাও একটা অভিজ্ঞতা।
• আপনার বিভাগের আউটডোরে রোজ গড়ে কত পেশেন্ট আসেন?
•• আমাদের ইএনটি বিভাগে গড়ে রোজ ৭৫০-৮০০ জন রোগী আসেন।
• এ তো বিপুল চাপ! কোন কোন বিভাগে চাপ খুব বেশি?
•• পিজি’র সব দপ্তরেই বেশি। তবে আউটডোরের হিসেব ধরলে মেডিসিন, নিউরোলজি, ইএনটি, গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি এসব বিভাগে চাপ মাত্রাতিরিক্ত। কার্ডিওলজিতে আবার মরণাপন্ন রোগীর চাপ বেশি।
• এত চাপ সামলান কী করে?
•• সরকারি হাসপাতালে চাকরি করব, স্বাস্থ্যব্যবস্থার একেবারে প্রয়োজনীয় সারির চিকিৎসক হব, অথচ চাপ নেব না— বললে হবে? আমার বিভাগের সকল সহযোগী, সিনিয়র চিকিৎসকরা এ বিষয়ে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। জুনিয়রদেরও দিনরাত রোগীর কথা ভালো করে শোনার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলি। রোগীর সমস্যা ভালো করে শুনলেই চিকিৎসার অর্ধেক সম্পন্ন হয়। যেমন তেমন করে রোগী দেখলে, তাঁদের সমস্যা ভালো করে না বুঝলে রোগীরও এত দূরে এসে চিকিৎসা করানো বৃথা, নিজের কেস সম্পর্কে অভিজ্ঞতার ভাঁড়ারেও ক্ষতি। সরকারি হাসপাতালে যাঁরা প্র্যাকটিসের সুযোগ পান, নানা বিচিত্র রোগ ঘাঁটেন। এতে ভবিষ্যতে খ্যাতনামা চিকিৎসক হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। ক্লিনিকে এত বেশি রোগী দেখার সুযোগ সবসময় থাকে না। তাই ওপিডি-তে চাপের মধ্যে কাজ করা জীবনেরই একটা পাঠ। এই পাঠে ফাঁকি দিলে নিজেরই ক্ষতি। নির্দিষ্ট নিয়মে রোগী দেখলে চাপও সামলানো যায়।
• কী সেই নিয়ম?
•• ধরুন, আমাদের আউটডোরে গড়ে আটশো রোগী আসছেন রোজ। আমরা হয়তো সাত-আটজন চিকিৎসক রোজ রোগী সামলাচ্ছি...।
• মানে চিকিৎসকপিছু ১০০ রোগী!
•• ঠিক তাই। আউটডোর চলে সকাল ৯.৩০ থেকে বিকেল ৫.৩০ পর্যন্ত। টানা আট ঘণ্টা। হিসেবমতো প্রতি রোগী পান মাত্র দেড় মিনিট! তবে এখানে একটা অন্য অঙ্ক আছে। এই ৮০০ জনের মধ্যে রোজই ২০০-২৫০ জন রিপোর্ট দেখাতে আসেন। যাঁদের আমরা আগে দেখেছি। ওষুধ খেয়ে এখন অবস্থা কী, নতুন কোনও উপসর্গ এল কি না, তাঁদের বেলায় এটুকুই দেখার থাকে। এই ২৫০ জনকে দেখতে কিন্তু সবসময় দেড় মিনিটও লাগে না। সময় লাগে নতুন রোগী দেখতে। সেক্ষেত্রে তা গড়ে ৫০০ জন। তাই প্রতি দেড় মিনিটের যেটুকু পুরনো রোগীর ক্ষেত্রে বাঁচে, সেটা পান নতুন রোগীরা মানছি, সেটাও পর্যাপ্ত সময় নয়। তবু এই সময়ের মধ্যে ঠান্ডা মাথায় পরিষেবা দেওয়াই একজন সরকারি চিকিৎসকের আশু কর্তব্য। তাই চাপের মুখে পড়লেও নানা দলে ভাগ হয়ে রোগীদের পরিষেবা দিই।
• তরুণদের কোনও বার্তা?
•• নিজের কাজের প্রতি ভালোবাসা, আত্মবিশ্বাস, রোগীর কথা শোনার মতো ধৈর্য ও একাগ্রতা—এইসব গুণ থাকলেই চাপ সামলানো যায়। প্রথমদিকে এত রোগী একসঙ্গে সামলাতে অসুবিধা হতে পারে। তবে সঙ্গে সিনিয়র চিকিৎসকরা থাকেন, অভ্যাসও হয়ে যায়। তাই কাজকে ভালোবেসে, চিকিৎসা করার মনোবৃত্তি নিয়ে এলে তাঁর অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।