পারিবারিক ধর্মকর্ম পালনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ। সন্তানের কর্মসাফল্যে গর্ব। গবেষণায় অগ্রগতি। ... বিশদ
১৮২০ সালের ১২মে এক বর্ধিষ্ণু রক্ষণশীল পরিবারে জন্ম নিলেন ফ্লোরেন্স। তখন দীর্ঘ কয়েক শতক ধরে ভদ্রঘরের মেয়েদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য স্থির করে দেওয়া হয়েছিল সঙ্গীত, চিত্রকলা ইত্যাদি বিষয়ে পারদর্শী হয়ে নিজেকে বিয়ের জন্য প্রস্তুত করা। পরিবারের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার অধিকারও ছিল না এঁদের।
এদিকে অন্ধকারের পর আলোর মতোই সেই সময় ইউরোপে এসে গিয়েছে রেনেসাঁর চিন্তা, যার মূল মন্ত্র ছিল বৈজ্ঞানিক যুক্তিভিত্তিক মানবতাবাদ। এরই প্রভাবে ফ্লোরেন্স এই প্রচলিত ধারণার বাইরে গিয়ে মানবসেবার কাজে নিজেকে উৎসর্গ করতে চাইলেন।
ঊনবিংশ শতকের গোড়ায় ইংল্যান্ডের হাসপাতালগুলি পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে সচেতন ছিল না। সেখানে সেবার কাজে আসতেন সমাজের পিছিয়ে পড়া মহিলারাই। কোনও উচ্চশ্রেণির মহিলা এই কাজে যুক্ত থাকার কথা স্বপ্নেও ভাবতেন না। এহেন নার্সিং পেশায় সেবার ব্রত নিয়ে জীবন কাটানোর প্রস্তাবে সায় দিল না তাঁর পরিবার। হাল না ছেড়ে দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় পরিবারের সঙ্গে লড়াই করে নার্সিংকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করলেন ফ্লোরেন্স।
মৃত্যুমুখী ব্রিটিশ সৈন্যবাহিনীকে রক্ষা করার গুরুদায়ভার নিয়ে স্কুটারি বারাক হাসপাতালে গিয়ে ফ্লোরেন্স বুঝলেন সেখানে না আছে খাবারের ব্যবস্থা, না আছে পর্যাপ্ত ব্যান্ডেজ, ওষুধ, এমনকী রোগীদের পোশাক পর্যন্ত নেই। সেই না থাকার পরিবেশে, আহত সৈনিকদের শুশ্রূষা করার জন্য তিনি ও তাঁর ৩৮ জন নার্স অক্লান্ত পরিশ্রম করছিলেন। রোগীদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, পোশাক, নিত্য খাওয়াদাওয়ার মতো বিষয়গুলির প্রতি তিনি বিশেষ নজর দেওয়ায় মৃত্যুর হার কমল। প্রতি রাতে রোগী ঘুমিয়ে পড়লে একটি বাতি হাতে তিনি রোগীদের দেখতে আসতেন। তাঁর এই ‘রাউন্ড’ আহত সৈনিকদের মনে প্রবল আশার সঞ্চার করত। তাঁরাই ফ্লোরেন্সকে ‘দ্য লেডি উইথ দি ল্যাম্প’ আখ্যা দেয়।
স্কুটারি বারাক হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা সেনা অফিসারদের অধিকাংশ কিন্তু নিজেরা সুখে দিন কাটাতেন। এদিকে প্রচণ্ড শীতে প্রয়োজনীয় পোশাকের অভাবে অনেক সাধারণ সৈনিক আরও অসুস্থ হয়ে মারা যাচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় প্রথমে ফ্লোরেন্স আহত সৈনিকদের শুশ্রূষা করার জন্য ওষুধপত্র ও গরম পোশাকের দাবি জানান। আবেদনে কাজ না হওয়ায় স্টোররুমের তালা ভেঙে গরম পোশাক জোগাড় করে অসুস্থ সৈনিকদের মধ্যে বিতরণ করলেন তিনি। তাঁর এই অনমনীয় ও প্রতিবাদী চরিত্রের জন্য তিনি পরিচিত ছিলেন ‘লেডি উইথ দ্য হ্যামার’ নামেও।
আজও আমাদের দেশে আমরা লক্ষ লক্ষ মানুষকে করোনা ও অন্যান্য কারণে। অসহায়ভাবে মরতে দেখেছি। একের পর এক পরিষেবা ক্ষেত্রগুলো ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষের জীবনের মূল্য আজও কিছু নেই। ‘জো হুজুর’ না হয়ে, আজকের মানুষের স্বাস্থ্যের অধিকারের উপর যে তালা লাগানো হয়েছে তা ভাঙতে কেউ কি এগিয়ে আসতে পারেন না ?
বর্তমান সময়ের স্বাস্থ্যকর্মীরা তাঁকে আদর্শ করবেন কি না, ভেবে দেখতে পারেন কিন্তু!