টেনিস এলবো— নামটা শুনলেই মনে হয়, এই সমস্যা বোধহয় শুধুমাত্র খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রেই হয়। বিশেষত, টেনিস বা ক্রিকেট প্লেয়ারদের। কিন্তু, ভারী কাজ করতে গিয়ে যে কেউ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। ডাক্তারি পরিভাষায় এর নাম ল্যাটেরাল এপিকন্ডিলাইটিস। ‘বর্তমান’-এর পাঠকদের জন্য এই বিষয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানালেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অর্থোপেডিক বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ সৈকত সাউ। 

টেনিস এলবো কী?
এটা এক ধরনের টেন্ডোনাইটিস। যার জন্য কনুইয়ের বাইরের দিকে অসহ্য ব্যথা অনুভব হয়। বিশেষত, রাতের দিকে ব্যথার মাত্রা অত্যন্ত বেড়ে যায়। কনুইয়ের এক্সটেনসর গ্রুপ অব মাসলস-এর সমস্যাই এই রোগের প্রধান কারণ। 

এই রোগের ক্ষেত্রে কী ধরনের সমস্যা হয়?
দেখুন, টেন্ডোনাইটিস মানুষের শরীরের নানা জায়গায় হতে পারে। যেমন— গোড়ালিতে, হাঁটু বা কাঁধের জয়েন্টে। আবার কনুইয়ের ভিতরের দিকে হলে তাকে বলা হয় গলফার এলবো। কারণ, মূলত গলফাররাই এই সমস্যায় আক্রান্ত হন। তবে, টেনিস এলবো খুব বিরাট কিছু সমস্যা নয়। গালভরা নাম শুনে অনেকেই দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। কিন্তু, এটা বিরাট কিছু রোগ নয়। এক্ষেত্রে, ব্যথার পাশাপাশি আক্রান্তের হাতের স্বাভাবিক মুভমেন্ট বা নাড়াচাড়ার ক্ষেত্রে খুবই অসুবিধা হয়। কিন্তু, সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে তা দ্রুত সারিয়ে তোলা সম্ভব। তবে, ডায়াবেটিস ও থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে ফের এই রোগ আক্রান্ত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে।

এই রোগের প্রতিকার কী?
প্রতিকার অবশ্যই রয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে অত্যাধুনিক ট্রিটমেন্টও ইদানিং চালু হয়েছে। তবে, একটা কথা আগেই বলে রাখা ভালো— একবার টেনিস এলবো হলে যে ভবিষ্যতে আর এই সমস্যা ফিরে আসবে না তা কিন্তু নয়। তবে, তার জন্য অযথা উদ্বেগের কোনও কারণ নেই। কারণ, এটি কোনও খারাপ রোগ নয়। ইন্টারনেটের যুগে অনেকেই গুগল ঘেঁটে প্রবল উৎকণ্ঠায় ভোগেন। কিন্তু, এই রোগের ধরনের প্রকারভেদে একাধিক চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। এক্ষেত্রে, হাতে ‘কমপ্রেশন ব্যান্ড’ ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া, অ্যান্টিইনফ্লামেবল ট্যাবলেট খেয়ে আর কিছু বিধিনিষেধ মেনে চললেই এই রোগ থেকে সেরে ওঠা সম্ভব। ইনফ্রারেড থেরাপিও বেশ কার্যকর। এছাড়া, স্টেরয়েড ইনজেকশনও (লোকাল অ্যানাস্থেসিয়ার মাধ্যমে) প্রয়োগ করা হয়। ইনজেকশনের দাম ১০০ টাকার কম। ইদানীং, কোনও কোনও ক্ষেত্রে ‘প্লেটলেট রিচ গ্রোথ ফ্যাক্টর’ ইনজেকশন ব্যবহারেও দ্রুত কাজ দেয়। তবে, এটি বেশ ব্যয়সাপেক্ষ। খরচ পড়ে প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা।

কোন বয়সে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে?
১৭/১৮-র বেশি বয়সের ক্ষেত্রেই টেনিস এলবোর সমস্যা দেখা দিতে পারে। একটানা ভারী কাজ করা, ভারী ওজন তোলা, খেলতে গিয়ে বা ঘর পরিষ্কারের সময় হাতের সংশ্লিষ্ট পেশির উপর অতিরিক্ত চাপের কারণেই এই সমস্যা দেখা দেয়। তাছাড়া, কনুইয়ে জোরে আঘাত লাগলেও টেনিস এলবো বেগ দিতে পারে।

টেনিস এলবোর ক্ষেত্রে কি অস্ত্রোপচার জরুরি?
অধিকাংশ টেনিস এলবোই সাধারণ চিকিৎসাতেই সেরে যায়। আসলে পুরো বিষয়টিই নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট পেশিতন্তু কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার উপর। যেমন আমরা জানি, ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার শচীন তেণ্ডুলকরের ক্ষেত্রে অপারেশন করতে হয়েছিল। কিন্তু, সব ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়ে না।

এই রোগ সারতে কত সময় লাগে?
সাধারণত, স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন নিলে দু’সপ্তাহের মধ্যেই উপকার পাওয়া যায়। আর, ইঞ্জেকশন না নিয়ে শুধু নিয়ম মেনে ওষুধ খেয়ে গেলে টেনিস এলবো সারতে মাসখানেক সময় লাগে।

খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও বিধিনিষেধ মানতে হয়?
না, টেনিস এলবোয় আক্রান্ত হলে খাওয়ার ক্ষেত্রে কোনওরকম বিধিনিষেধ নেই। তবে, হাড়ের যে কোনও সমস্যার ক্ষেত্রেই ভিটামিন ‘ডি’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, ভিটামিন ‘ই’ এবং ‘সি’ ট্যাবলেট খেলে খুবই উপকার পাওয়া যায়। যে সব খাবারে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ডি’ রয়েছে, সেগুলি বেশি করে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। 

গরম-ঠান্ডা সেঁক কী ব্যথা কমাতে সাহায্য করে? 
গরম সেঁক বা বরফ ব্যবহারে সাময়িক স্বস্তি হয়তো পাওয়া যায়। কিন্তু, দীর্ঘমেয়াদি ক্ষেত্রে এটা খুব বেশি কার্যকর নয়। তবে, টেনিস এলবোর প্রকারভেদে কিছু নির্দিষ্ট ব্যায়াম করলে উপশম মেলে।