পারিবারিক ধর্মকর্ম পালনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ। সন্তানের কর্মসাফল্যে গর্ব। গবেষণায় অগ্রগতি। ... বিশদ
এখনও বৃহত্তর অংশের মানুষ মনে করে, বিবাহের অন্যতম উদ্দেশ্য হল সন্তান উৎপাদন তথা বংশরক্ষা। কিন্তু সমাজ-সংসার থেকে প্রচলিত রীতির অক্ষয় বর্ম দ্রুত অপসৃত হচ্ছে। নতুন যুগের ছেলেমেয়েরা অনেকেই ‘হ্যাপিলি চাইল্ডলেস’ বলে সোৎসাহে ঘোষণা করতে স্বচ্ছন্দ। কেন এমন হচ্ছে?
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ শর্মিলা সরকার জানালেন, এখন কোনও কোনও দম্পতির বাবা-মা হওয়ার ইচ্ছে নেই। তারা সহমতের ভিত্তিতে সন্তানহীন জীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত নেন। বর্তমান প্রজন্মের কাছে সন্তান পালনের জন্য সময় বের করাটা সবচেয়ে বড় সমস্যা। অনেকে ভাবছেন, আমরা নিজেদেরকেই সময় দিতে পারছি না। তারপর আরও একজনকে এনে তার প্রতি অবিচার করা হবে, নিজের প্রতিও অন্যায় হবে। এর চেয়ে সন্তানহীন কাটিয়ে দেওয়াই ভালো! আগেকার দিনে কোনও দম্পতি এরকম সিদ্ধান্ত নিতে গেলে সামাজিক, পারিবারিক দিক থেকে নানা চাপ আসত। কিন্তু এখন অনেক নতুন ধারণা মানুষ গ্রহণ করছে খোলা মনে। একটা সময় সমকামিতাকে অপরাধ ভাবা সমাজ এখন সমকামী বিয়ে উদযাপন করছে। তেমনই সন্তানহীন থাকার সিদ্ধান্তও অনেক দম্পতি নিচ্ছেন সাহসের সঙ্গেই।
তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এমন প্রবণতা বৃদ্ধির পিছনে সামাজিক এবং আর্থ-সামাজিক কারণও গুরুত্বপূর্ণ। চারপাশে প্রতিনিয়ত যেসব অপরাধ বা অন্যায় ঘটে চলেছে, সেসব দেখে অনেকে ভাবছে, এই পরিবেশ সন্তানের সুস্থ মানুষ হয়ে ওঠার জন্য উপযুক্ত নয়। স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই চাকরি করলে তাঁদের মধ্যে একটি অপরাধবোধ কাজ করে। তাঁদের অবর্তমানে সন্তানের উপর নানা অন্যায়, অত্যাচারের আশঙ্কা করেন তাঁরা। এসব আশঙ্কা থেকে মুক্ত থাকতে অনেক দম্পতি সন্তানহীন থাকার সিদ্ধান্ত নেন।
নিজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে ডাঃ সরকার বলেন, এমনও দেখা গিয়েছে, স্বেচ্ছায় সন্তানহীন দম্পতি অন্যের বাচ্চাকে ভীষণ ভালোবাসছেন। বাচ্চা তাঁদের কাছে পছন্দেরও। কিন্তু বন্ধুবান্ধব বা পরিবারে কোথাও শিশুদের কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে বড় হতে দেখে তাঁরা সন্তান না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিশেষ কোনও সমস্যাজনক পরিস্থিতি তাঁদের সন্তানের ক্ষেত্রে সামনে এলে তাঁরা কীভাবে সেটার মুখোমুখি হবেন, তা ভেবে পিছিয়ে আসছেন অনেক যুগল।
সব মিলিয়ে বলা যায়, সময় যত এগচ্ছে, সুস্থ ও সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার বাধ্যবাধকতার তালিকা ততই লম্বা হচ্ছে। জনসমাজের বৃহত্তর অংশ এতসব সাত-পাঁচ না ভেবে জীবনপ্রবাহের স্বাভাবিক নিয়মে বিয়ে, সন্তান ধারণ, পালন করে চলেছেন। সেই সঙ্গেই বাড়ছে স্বেচ্ছায় সন্তানহীন যুগলের সংখ্যাও। স্বাধীনভাবে এবং নিজেদের শর্তে জীবন কাটানোটাই যাঁদের লক্ষ্য, তাঁরা ‘সুখী ও সন্তানহীন’ জীবন বেছে নিচ্ছেন স্বেচ্ছায়। এতে ভালো হচ্ছে, না কি মন্দ, সে উত্তর নিহিত রয়েছে সময়ের গর্ভেই।