পারিবারিক ধর্মকর্ম পালনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ। সন্তানের কর্মসাফল্যে গর্ব। গবেষণায় অগ্রগতি। ... বিশদ
ছোটবেলার পাঠ্যবই, সরকারি গাইডলাইন— বজ্রাঘাত থেকে সুরক্ষিত থাকার উপায় আমাদের সকলেরই ঠোঁটস্থ। তা সত্ত্বেও গত বছর দেশে ৯০০ জনের বেশি প্রাণ হারিয়েছেন শুধু বজ্রাঘাতেই। চলতি মাসেই রাজ্যে বজ্রাঘাতে এখনও পর্যন্ত প্রায় ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। বেশিরভাগই গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দা। তালিকায় বাদ নেই কলকাতাও। অন্যদিকে শহর ও শহরতলিতে তড়িতাহত হয়ে মৃতের সংখ্যা আরও বেশি। রিপোর্ট বলছে, প্রতিবছর সংখ্যাগুলি লাফিয়ে বাড়ছে। বজ্রাঘাতের ফলে মৃত্যু কীভাবে এড়ানো সম্ভব? কেউ তড়িতাহত হলে কী করণীয়—আসুন জেনে নেওয়া যাক।
বজ্রাঘাত এত বাড়ছে কেন?
আসলে কিউমুলোনিম্বাস বা বজ্রগর্ভ মেঘ থেকেই সাধারণত বজ্রাঘাত হয়। পরিবেশ দূষণ, তাপপ্রবাহ দিন দিন বাড়ছে। ফলে বজ্রগর্ভ মেঘ ও বজ্রাঘাতের পরিমাণ বাড়ছে। অন্যদিকে গাছের সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে কমছে। ফলে অল্প জায়গার মধ্যে ‘ক্লাউড টু গ্রাউন্ড’ অর্থাৎ মেঘ থেকে মাটির দিকে বজ্রাঘাত হচ্ছে।
বজ্রাঘাতে মৃত্যু কেন হয়?
বজ্রাঘাতের সময় ১০ কোটি থেকে ১০০ কোটি ভোল্টের বিদ্যুৎ তৈরি হয়। যেখানে বজ্রাঘাত হচ্ছে, সেই জায়গার তাপমাত্রাও অন্য জায়গার তুলনায় অনেকটা বেড়ে যায় এবং বজ্রাঘাতের সময় ঋণাত্মক তড়িৎ আধান তৈরি হয়। পৃথিবীতে থাকে ধনাত্মক আধান। এই প্রচণ্ড তাপ ও শক্তির মধ্যে ঋণাত্মক ও ধনাত্মক তড়িৎ আধানের সংঘর্ষ হয়। এর মাঝে কোনও মানুষ বা প্রাণী চলে এলেই বিপদ। তবে বজ্রাঘাতের বিদ্যুৎ সাধারণত বাইরে থেকে আঘাত হানে। শরীর দগ্ধ হয়ে যায়। হাড় ভেঙে যেতে পারে। মাংসপেশি গলে যেতে পারে। শ্বাসপ্রশ্বাস জনিত সমস্যাও দেখা যায়। যদি শরীরের ভিতরে সেই বিদ্যুৎ প্রবেশ করে, হার্টে বড়সড় প্রভাব ফেলে। তৎক্ষণাৎ মৃত্যু হতে পারে ওই ব্যক্তির।
প্রত্যক্ষদর্শীর কী করণীয়?
অনেকের ধারণা, বজ্রাঘাতে আহত ব্যক্তিকে স্পর্শ করলে তড়িৎস্পৃষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। বজ্রাহত ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া দুটি ভিন্ন বিষয়। বজ্রের বিদ্যুতে ডিসি কারেন্ট থাকে। তাই যাঁর উপর বজ্রাঘাত হয়েছে, তিনি কখনওই তড়িৎবাহক হিসেবে কাজ করবেন না। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রাথমিক চিকিৎসা কী?
ধরা যাক, দু’জন ব্যক্তি বজ্রাহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজনের অবস্থা একটু স্থিতিশীল, অন্যজনের জ্ঞান নেই। সেক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে সংজ্ঞাহীনকে। প্রথমেই তাঁকে ‘মৃত’ বলে ধরে নেওয়াটাই হবে সবচেয়ে বড় ভুল। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, তাঁর সিপিআর (কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন) চালু করতে হবে। তারপর যত দ্রুত সম্ভব, সঠিক পদ্ধতি মেনে তাঁকে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
যেমন?
একজন দুর্ঘটনাগ্রস্ত ব্যক্তিকে চিত হওয়া অবস্থায় দেহ এবং ঘাড় সোজা রেখে নিয়ে যাওয়াই হবে প্রাথমিক লক্ষ্য।
বজ্রাহত ব্যক্তি কি আদৌ সুস্থ হতে পারেন?
বজ্রাঘাতের আঘাত সামলে নিতে পারলে তাঁর বাঁচার সম্ভাবনা ৮০-৯০ শতাংশ। তবে ঘটনার পরের ১০-১৫ মিনিট ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। ওই সময়ের মধ্যেই সঠিক পদ্ধতিতে সিপিআর চালু করতে হবে। নিয়ে যেতে হবে হাসপাতালে।
সুস্থ হতে কতদিন সময় লাগে?
সঠিক চিকিৎসা হলে, ২৪ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রেখে দেওয়া হয়। তারপর পুড়ে যাওয়া অংশ নিরাময় হতে যতদিন সময় লাগে!
বজ্রাহত ও বিদ্যুৎস্পষ্ট হওয়ার মধ্যে পার্থক্য কোথায়?
প্রথমত, বজ্রাঘাতে ডিসি কারেন্ট থাকে। ফলে যাঁর উপর বজ্রাঘাত হচ্ছে, তিনি তড়িৎবাহক হিসেবে কাজ করেন না। কিন্তু তড়িতাহতের ক্ষেত্রে যেহেতু এসি কারেন্টে জড়িয়ে রয়েছে, তাই যিনি আক্রান্ত হচ্ছেন, তিনি নিজেও বাহক হিসেবে কাজ করেন। এক্ষেত্রে তড়িৎ উৎস ছেড়ে বেরিয়ে আসা খুব সমস্যার হয়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীর কী ভূমিকা থাকবে?
সরাসরি স্পর্শ করা যাবে না। মেন লাইন বন্ধ করার চেষ্টা করতে হবে। অনেকসময় গাছের ডাল দিয়ে অনেকে তড়িতাহতকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেন। সেটি ভেজা থাকলে কিন্তু ভীষণ বিপদের। তাই শুকনো কিছু দিয়ে চেষ্টা করতে হবে। তবে পরিস্থিতি বুঝে। নিজের সুরক্ষা সবার আগে।
যদি কোনওভাবে ওই ব্যক্তিকে তড়িৎ উৎস থেকে আলাদা করা সম্ভব হয়, তৎক্ষণাৎ তাঁর সিপিআর চালু করতে হবে। এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গন্তব্য হবে হাসপাতাল।
বাঁচার সম্ভাবনা কত থাকে?
এইক্ষেত্রেও প্রথম ১০ মিনিট ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সময় হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারলে বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি। অন্তত এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়। তারপর আনুসাঙ্গিক চিকিৎসাগুলি চলতে থাকে।
একবার বজ্রাহত হলে বা তড়িতাহত হলে, ফের এমন ঘটনা ঘটতে পারে?
নিশ্চয়ই পারে। সেক্ষেত্রে আঘাত সামলে নেওয়ার হার অনেকটা বেড়ে যায়।
মনে রাখতে হবে...
বর্ষা এসে গিয়েছে। তাই সরকারি গাইডলাইন অক্ষরে অক্ষরে মেনে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। ভেজা জায়গা এড়িয়ে চলুন। ফাঁকা মাঠে ও জলে যাঁদের কাজ, তাঁরা বজ্রাঘাতের সময় খুব সাবধানে থাকুন।