পারিবারিক ধর্মকর্ম পালনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ। সন্তানের কর্মসাফল্যে গর্ব। গবেষণায় অগ্রগতি। ... বিশদ
ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত নিয়ে কাজ করছেন নমামী কর্মকার। কাজটি করছেন নিউ ইয়র্কে। বিদেশের মাটিতে নিজের দেশের গানকে প্রতিষ্ঠা করার ভাবনাটা কবে থেকে শুরু হয়েছিল? নমামী বলেন ২০০৭ সাল থেকে এই কাজটা শুরু করার কথা ভেবেছিলেন তাঁরা, অর্থাৎ সুরমূর্চ্ছনা নামের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের স্কুল। ইন্ডিয়ান ক্লাসিকাল মিউজিকের কদর বিদেশে কতটা, তার একটা আন্দাজ পেয়েছিলেন বিভিন্ন অনুষ্ঠান করতে গিয়ে। তারপর থেকেই এই ঘরানা আরও প্রসারিত করার ভাবনা মনে চাড়া দিয়ে ওঠে। কিন্তু ভাবলেই তো আর হল না, তার জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো রয়েছে কি না সেটাও দেখা দরকার। শেখানোর লোক চাই, ছাত্রছাত্রী চাই। ফলে সেইসব জোগাড় করতে করতেও আরও কয়েক বছর কাটল। শেষ পর্যন্ত ২০০৭-২০০৮ সাল নাগাদ পাকাপাকিভাবে এই কাজটি শুরু করে সুরমূর্চ্ছনা। বিদেশে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের স্কুলটির নাম দেওয়া হয় ছন্দায়ন।
এখানে যে সব ছাত্রছাত্রী আসে তারা কি মূলত ভারতীয় বংশোদ্ভূত? একেবারেই নয়, বললেন নমামী। বিদেশি ছাত্রের সংখ্যাও প্রচুর। আমেরিকায় ভারতীয় সংস্কৃতি বিষয়ে জানার আগ্রহ খুব, বললেন তিনি। এই আগ্রহ দেখেই তাঁরা স্কুলটা খোলার কথা ভেবেছিলেন। তবে প্রচুর প্রবাসী ছাত্রছাত্রীকেও ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শেখান নমামী। বিদেশে শেখার প্রতি আগ্রহটাই দেশের তুলনায় আলাদা। ‘ওরা যখন যে কাজটা করে তাতে সম্পূর্ণ মনঃসংযোগ করে। আমাদের দেশে এই মনঃসংযোগের মাত্রাটা কিছুটা হলেও বোধহয় কম,’ মনে করেন নমামী। তাঁর কথায়, ‘আসলে সুযোগেরও ব্যাপার আছে। চাহিদাও একটা ফ্যাক্টর। আমাদের দেশে গানবাজনা সব সময়ই এক্সট্রা কারিকুলার হিসেবে ধরা হয়। পড়াশোনার পাশাপাশি আরও কিছু হবি বা শখ পূরণ করতে লোকে গানবাজনা শেখে। কিন্তু সেটাই যে জীবিকা হতে পারে সেই ধারণাই আমাদের মধ্যে নেই। আমাদের সামাজিক পরিকাঠামো এর জন্য দায়ী। এখানে স্কুল থেকে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় সর্বত্রই পড়াশোনার উপরেই জোর দেওয়া হয়। বাকিগুলো হলে ভালো, না হলেও ক্ষতি নেই। এই ধারণা থেকেই আমাদের দেশে ছাত্রছাত্রীরা সঙ্গীতকে অনেক সময় পিছনের সারিতে রাখে। পড়ার ফাঁকে সঙ্গীত সাধনা করে। আবার যেই পড়ার চাপ বাড়ল অমনি গান বাজনা বন্ধ। বিদেশে কিন্তু এমনটা নয়। ওখানে যারা সঙ্গীত সাধনা করে, তারা একশো ভাগই সেই সাধনার পিছনে দিতে আগ্রহী। এর কারণ হয়তো সুযোগের প্রাচুর্য। আমাদের দেশে যার ভীষণ অভাব।’
মোটামুটি কোন বয়সের ছাত্রছাত্রী তাঁরা পান? নমামী বললেন, দেশে একটু ছোটবেলা থেকেই শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সাধনা শুরু হয়। ফলে ছাত্রছাত্রীরা মূলত শৈশবেই ভর্তি হয় গান শিখতে। অনেকে সাধনা চালিয়ে নিয়ে যায়, অনেকে আবার তা মাঝপথে বন্ধ করে দেয়। কিন্তু বিদেশে চিত্রটা এমন নয়। সেখানে শেখার কোনও নির্দিষ্ট বয়স নেই। একেবারে শিশু বয়সেরও যেমন ছাত্ররা শিখতে আসে তেমনই আবার জীবনের সায়াহ্নে এসেও অনেকেই শিখতে আগ্রহী হন।
বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কোন কোন দেশের ও প্রদেশের ছেলে মেয়ে পেয়েছেন? নমামী বললেন, জাপান, চীন, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশের ছাত্র রয়েছে। আবার আমেরিকার বস্টন, ভার্গিনিয়া, নিউ ইয়র্কের মতো শহর থেকেও ছাত্ররা আসে তাঁর কাছে গান শিখতে। বিদেশিদের উচ্চারণ ও বাচন ভঙ্গিতে ভারতীয় সুর, সরগমের প্রতিটি মাত্রা গলায় বসানো কি কঠিন হয়ে পড়ে? নমামী বললেন, ‘না, আমার অভিজ্ঞতায় তেমন কোনও সমস্যার মুখোমুখি হইনি। আসলে ওদের মধ্যে ডেডিকেশনটা এত বেশি থাকে যে সেটা বুঝতে, সেই সুর গলায় বসাতে ওদের কোনও সমস্যা হয় না। অনেকেই তো এমন প্রশ্নও করেন যে ভারতীয় সঙ্গীত শিখতে চাইলে জীবনযাপনগত কোনও পরিবর্তন করতে হবে কি? খাওয়াদাওয়ায় কোনও বদল কি চাই? আমরা কিছু বদলের কথা বললে সেটা খুব নিষ্ঠার সঙ্গে করেন ওরা। এছাড়াও অনেক সময় সুর গলায় বসানোর জন্য কিছু ভয়েস এক্সারসাইজও বলে দিই। সেগুলো অভ্যাস করে নিয়ম করে যাতে গানে কোনও ত্রুটি না হয়।’
নমামী বললেন এক মার্কিন শিশু বছর ছয়েক থেকেই তাঁর কাছে গান শিখছে। এখন বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছেও একইভাবে ক্লাসিকাল মিউজিক শিখে চলেছে। পাশাপাশি ওয়েস্টার্ন ক্লাসিকালেও পারদর্শী। পিয়ানোও বাজায় চমৎকার। ফলে তাকে আরও প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সঙ্গীতের মিলন ঘটানোর একটা ইচ্ছা মনে মনে কাজ করছে নমামীর। ক্লাসিকালের প্রতিটি নোট অপরিবর্তিত রেখে দু’টি ধারার সঙ্গীতের মিলন ঘটাতে চান তিনি। তবে এই ভাবনা এখনও পরিকল্পনার স্তরেই রয়েছে। আরও বেশ কিছু বছর লাগবে তার রূপদানে। তার জন্য আরও অনেক পড়াশোনা দরকার, জানালেন তিনি। আগামীর পরিকল্পনা বলতে এটাই। অনুষ্ঠান ও প্রশিক্ষণ যেমন চলছে তেমনই চলবে। তাঁর মতে, বিদেশের মাটিতে ভারতের সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠা করার অনুভূতিটাই আলাদা। জগৎসভায় ভারতের নাম আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠুক শুধু এটুকুই আশা।