পুরনো রোগের বৃদ্ধিতে স্বাস্থ্যহানির সম্ভাবনা। ব্যবসায় শুভত্ব বজায় থাকবে। আর্থিক প্রগতিও হবে। ... বিশদ
আপনাদের ভাগ্যের পরিসীমা নাই। আপনাদের মত অনাবিল আকুলতামাখা প্রীতিমান্ ভক্ত ভূমিতলে আর কুত্রাপি প্রকটিত হন নাই। কোন গোষ্ঠীর মধ্যে একজন বড় হইলে অপর সকলে তার গর্ব্বে গর্ব্বানুভ করে—আমরা ও জগতের ভক্তগোষ্ঠীসকলে আপনাদের নামে গর্ব্ব বোধ করি। আপনাদের ভাগ্যমহিমা বর্ণনা করিয়াও আমরা ধন্য। আপনাদের মত ভাগ্যবান্দের বক্ষে ধরিয়া ধরণীও ধন্যা।
উদ্ধবের কথাগুলি সুন্দর ও পরম সত্য বটে, কিন্তু নন্দরাজার বুকে লাগিল সুতীক্ষ্ণ বাণের মত। আরও যেন বর্দ্ধিত বেদনাভারে কাতর হইয়া নন্দরাজ কহিলেন, “উদ্ধব, বৎস! শুনিয়াছিলাম তুমি খুব বুদ্ধিমান্। তোমাকে দেখিয়া সেইরূপ মনেও করিয়াছিলাম, কিন্তু তোমার ভাষা শুনিয়া হতাশ হইলাম। তুমি নিতান্তই বালক। একান্তই অজ্ঞ। না হইলে তুমি আমাদের সম্মুখে বসিয়া আমাদের মুখের উপর আমাদিগকে বলিতেছ ভাগ্যবান্! অহো বিধাতঃ, আমার মত হতভাগ্যকে যে ভাগ্যবান্ বলে তার কি বিন্দুমাত্রও বোধশক্তি আছে? উদ্ধব, যে ব্যক্তি পুত্রবিরহে মুমুর্ষু, তুমি তাহাকে কহ ভাগ্যবান্! তাও আবার যে-সে পুত্র নয়। পুত্র তো সকল মানুষেরই হয় কিন্তু কৃষ্ণের মত পুত্র কি কাহারও আছে, না হবে? এমন পুত্ররত্নহারা হইয়া মরণাধিক বেদনায় যে নিশিদিন ছট্ফট্ করিতেছে, তুমি তাহাকে ভাগ্যশালী বলিতে পারিতে না, যদি এক কণা অনুভবশক্তিও তোমার হৃদয়ে থাকিত! ঘটে যার অতি সাধারণ বুদ্ধিও আছে সেও বুঝিবে এই সংসারে আমাদের মত ভাগ্যহত আর কখনও জন্মগ্রহণ করে নাই। অতি বড় শত্রুও যেন আমাদের মত দুর্ভাগ্য লাভ না করে। উদ্ধব, আমাদের উপর বিধি বিমুখ, তাই এমন কথাও শুনিতে হয়। আমাকে ভাগ্যবান্ বলা এক প্রকার বিদ্রুপ তুল্য। বেদনার উপর বিদ্রুপ ক্ষত স্থানে ক্ষার লেপনের মত। তোমাতে বিচারবুদ্ধি অপ্রচুর ও অন্তর তোমার অনুভবহীন মনে করিয়া ঐ কথা সহ্য করিলাম।” নন্দরাজের কথায় উদ্ধব স্তব্ধ হইয়া গেলেন। বুঝিলেন, কথাটা বলা ভাল হয় নাই। তাঁহার কথায় কৃষ্ণ-পিতার বেদনা বর্দ্ধিত হইয়াছে। সান্ত্বনা দিতে আসিয়া বেদনা বাড়াইয়া দেওয়া নিতান্তই অকর্ত্তব্য। উদ্ধব অন্যায় কথা বলিয়া অকর্ত্তব্য কার্য্য করিয়াছেন। আপাততঃ তাহাই মনে হয়। উদ্ধব গভীরভাবে ভাবিলেন—দেখিলেন যাহা বলিয়াছেন তাহা সর্ব্বতোভাবেই যথার্থ। যাঁহার হৃদয় ঐরূপ আকুলতাভরা কৃষ্ণানুরাগ, এই বিশ্বসংসারে সে-ই তো পরম ভাগ্যবান্। নিখিল-শাস্ত্র উদ্ধবের পক্ষে সাক্ষ্য দিবে। যাহা শাস্ত্রীয়-সিদ্ধান্ত তাহা বলাই তো নীতিসম্মত ও শাস্ত্রজ্ঞ ব্যক্তির সর্ব্বদা কর্ত্তব্য।–উদ্ধব তাহা হইলে ন্যায়তঃ ধর্ম্মতঃ পরম সত্যভাষণ করিয়া কর্ত্তব্যই করিয়াছেন। কিন্তু কি আশ্চর্য্য! এমন কথাও কি প্রকারে অন্যায় ও অকর্ত্তব্য হইয়া নন্দরাজের বেদনা বর্দ্ধনের কারণ হইল—উদ্ধব দিশাহারা হইয়া ভাবিতে লাগিলেন। নন্দরাজের কৃষ্ণপ্রেম যে নিখিলশাস্ত্রসিদ্ধান্তের অতি ঊর্দ্ধে বিরাজিত সেই রহস্য ভেদ করিতে না পারিয়া দিগ্ভ্রান্তের মত খুঁজিতে লাগিলেন।