পুরনো রোগের বৃদ্ধিতে স্বাস্থ্যহানির সম্ভাবনা। ব্যবসায় শুভত্ব বজায় থাকবে। আর্থিক প্রগতিও হবে। ... বিশদ
হিন্দুশাস্ত্র মতে গৃহস্থকে পাঁচ রকম কর্তব্য পালন করতে হবে; ১। দেবপূজা (দেব যজ্ঞ), ২। শাস্ত্রাধ্যয়ন বা বেদপাঠ (ঋষিযজ্ঞ বা ব্রহ্মযজ্ঞ), ৩। সাথীদের বা অতিথিদের সেবা (নৃষজ্ঞ), ৪। পিতৃপুরুষের শ্রাদ্ধাদি করা (পিতৃযজ্ঞ), ৫। ইতর প্রাণীদের রক্ষা করা (ভূতযজ্ঞ)। এই কর্তব্যগুলিকে পঞ্চ মহাযজ্ঞ বলে। এইসব কর্তব্যগুলি একঘেঁয়ে খাটুনিভাবে নয় সেবাভাবে, পূজাভাবে সম্পন্ন করতে হবে। এইভাবে কর্তব্য সম্পাদন জীবকে আবদ্ধ করে না, বরং অধ্যাত্ম-জীবনে উন্নতি লাভে সহায়তা করে। বেদান্ত কর্তব্য, সেবা ও পূজাকে এক সূত্রে গাঁথতে চেষ্টা করে। যদি কোন কর্মকে অধ্যাত্ম-জীবনের সঙ্গে যুক্ত করা না যায় তবে তাকে কর্তব্য বলা যায় না। যদি দেখ কোন কর্ম তোমাকে ঈশ্বরের থেকে দূরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, তবে তা করবে না। সব কাজই যেন তোমাকে ক্রমান্বয়ে ঈশ্বরের দিকে নিয়ে যায়। কৃষ্ণ যেমন উদ্ধবকে বলেছিলেন: “যে আমাকে সর্বদা একনিষ্ঠভাবে পূজা করে কর্তব্য সম্পাদনের মাধ্যমে, আমাকেই পরমেশ্বর জ্ঞানে, সে জ্ঞান ও অনুভূতি লাভ করে ও অচিরে আমাকে পায়। সব কর্তব্যই আমার প্রতি ভক্তিভাবে করলে মুক্তির পথে নিয়ে যাবে। পরম শান্তির এই হলো পথ।”
উল্লিখিত পাঁচ প্রকার কর্তব্যের ওপর প্রত্যেক মানবের নিজের প্রতি—স্বীয় উচ্চতর আত্মার প্রতি কর্তব্য আছে। যেহেতু প্রতিটি আত্মা—পরমাত্মারই অংশ—যখন মানব তার উচ্চতর আত্মার প্রতি কর্তব্য সম্পাদন করে, তার অন্যান্য সব দায়িত্বই পালন করা হয়। মানবের উচ্চতর আত্মা তার অভিব্যক্তির, প্রস্ফুটিত হবার অপেক্ষায় আছেন। কিন্তু তিনি সদাই নিম্নতর আত্মা বা অহং-এর দ্বারা আবৃত হয়ে যাচ্ছেন। দৈনন্দিন জীবনের কোলাহলে, ইন্দ্রিয়ভোগের অতিরিক্ত তাড়নায় মানুষ অন্তরের ‘শান্ত নম্র ডাক’, আত্মার ক্রন্দনকে উপেক্ষা করে। ফলে সে যা কিছু করে তা শেষ পর্যন্ত তার কাছে অশান্তির ও ব্যর্থতার কারণ হয়ে পড়ে। এমনকি তার সাথীদের প্রতি কর্তব্যও তাকে ক্লান্ত ও বিফল মনোরথ করে। আমাদের সব কর্তব্যকর্মেরই একক উদ্দেশ্য হওয়া উচিত উচ্চতর আত্মার অভিব্যক্তি। তবেই জীবন অর্থবহ বলে মনে হবে। মূল সমস্যা হলো মানুষ নিয়ন্ত্রিত সাধন পদ্ধতির ভিতর দিয়ে না গিয়েই—ঈশ্বরের হাতের পবিত্র যন্ত্রস্বরূপ না হয়েই—শিক্ষক হতে চায়। তিনি মানবের দেহ-মন্দিরে বাস করেন। আমরা প্রথমে নিজেরা তাঁকে জানব, নিজেদের সমস্যার সমাধান করব, পরে অন্যকে সাহায্য করব। আমরা এইরূপ হয়েই অপরের অজ্ঞাতসারেই সত্যের প্রভাব বিস্তার করে তাদের সাহায্য করতে পারি। কিন্তু নিজেরা আধ্যাত্মিক অনুভূতি লাভ না করে অন্যকে আধ্যাত্মিক পথে সহায়তার কথা চিন্তা করা বা বলা একেবারেই অবাস্তব। একবার শুদ্ধ পবিত্রতা ও অনাসক্তি অর্জন করলে মানব আর সংসারে বদ্ধ হয় না আর সংসারও মানব-মন ও স্নায়ুর ওপর কোন ক্রিয়া করতে পারে না।