পারিবারিক ধর্মকর্ম পালনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ। সন্তানের কর্মসাফল্যে গর্ব। গবেষণায় অগ্রগতি। ... বিশদ
অতীতের প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলত শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান এবং কৃষ্ণকায় আমেরিকানদের মধ্যে। আমি যখন হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলে ভর্তি হই, তখন প্রায় সাড়ে সাতশো জনের একটি ক্লাসে কিছু ছিলেন কৃষ্ণকায় আমেরিকান, ভারতীয় বংশোদ্ভব চারজনসহ এশীয় ছিলেন হাতে গোনা কয়েকজন এবং জনা দুই আফ্রিকান। কিন্তু সেই আমেরিকা বদলে গিয়েছে নাটকীয়ভাবে। সেখানে ভর্তির লড়াইতে এখন শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান, এশীয়, আফ্রিকানদের সঙ্গে শামিল দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আসা স্প্যানিশভাষীরা এবং মধ্যপ্রাচ্যের পড়ুয়ারা। সর্বশেষ আইনি লড়াইটি হয়েছে ‘প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড ফেলোস অফ হার্ভার্ড কলেজ’-এর বিরুদ্ধে ‘স্টুডেন্টস ফর ফেয়ার অ্যাডমিশন, ইনকর্পোরেটেড’-এর। এই ব্যাপারে দ্বিতীয় মামলাটি হয়েছে ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ক্যারোলিনার (ইউএনসি) মতো অন্য একটি প্রাচীন বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধেও। অদ্ভুত এই বছরে ইউএনসি’তে ভর্তির আবেদনপত্র জমা পড়েছে সাড়ে ৪৩ হাজার এবং প্রথম বর্ষের ক্লাসে ভর্তি নেওয়া হয়েছে তাঁদের মধ্যে থেকে ৪,২০০ জনকে।
প্রতিকূলতা বনাম সমতা
দুটি ক্ষেত্রে মূল ইস্যু ছিল, ভর্তির জন্য পড়ুয়া নির্বাচনে জাতিগত (একটি প্রতিকূল বিষয়) পরিচয় একটি প্রাসঙ্গিক মানদণ্ড বিবেচিত হতে পারে কি না। ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই ১৩টি ব্রিটিশ উপনিবেশ তাদের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল। সমস্যাটি সেই থেকেই আমেরিকাকে উদ্বেগের মধ্যে রেখেছে। এই সমস্যা থেকেই বেধেছিল গৃহযুদ্ধ (১৮৬১-৬৫)।
জাতিগত দাবি বনাম সংবিধান কর্তৃক সাম্যের নিশ্চয়তার ইস্যুটি মার্কিন সুপ্রিম কোর্টকে ১৮৯৬ সাল থেকে ব্যতিব্যস্ত রেখেছে। মার্কিন সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনী মারফত এই ইস্যুটি পরীক্ষিত হয়। সংশোধনীতে বলা হয়েছে: ‘কোনও রাজ্য এমন কোনও আইন প্রণয়ন বা প্রয়োগ করবে না যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বিশেষ অধিকার বা সুরক্ষার ব্যবস্থাটি খর্ব করবে; অথবা কোনও রাজ্য আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই কোনও ব্যক্তিকে তাঁর
জীবন, স্বাধীনতা বা সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করবে না; কিংবা কোনও রাজ্য তার এক্তিয়ারের মধ্যে কোনও ব্যক্তিকে সমান আইনি সুরক্ষা প্রদানের দিকটি অস্বীকার করবে না।’
এই মৌলিক অধিকারগুলিই প্রায় আক্ষরিকভাবে গৃহীত হয়েছে ভারতের সংবিধানের ১৪ ও ২১ অনুচ্ছেদে।
চতুর্দশ সংশোধনীর ইতিহাসে প্রতিফলিত হয় শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের মধ্যে জাতিগত সম্পর্কের ইতিহাস ও বিবর্তন। ১৮৯৬ সালে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট ‘পৃথক কিন্তু সমান’ তত্ত্বটি উত্থাপন করে। ১৯৫৪ সালে ব্রাউন বনাম এডুকেশন বোর্ড মামলায় এটা উল্টে গিয়েছিল, বলা হয়েছিল যে, ‘পৃথক সমান হতে পারে না’। জাতিগতভাবে বৈষম্যমূলক আইনগুলি ‘কঠোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা’র শর্তে এবং শুধুমাত্র তখনই প্রয়োগের অনুমতি দেওয়া হয় যখন একটি ‘আবশ্যক সরকারি স্বার্থ’ ছিল এবং জাতিগত ব্যবহার ছিল ‘সংকীর্ণভাবে ও ক্ষেত্র বিশেষে উপযোগী’। পরবর্তী দুটি সিদ্ধান্তে—ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্টস বনাম বাক্কে (১৯৭৮) এবং গ্রুটার বনাম বোলিঙ্গার (২০০৩)—আদালত এই দৃষ্টিভঙ্গি নিশ্চিত করেছে যে, ‘ছাত্রদের সমষ্টির মধ্যে বৈচিত্র্য রাজ্যের একটি জরুরি স্বার্থ, যেটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে ব্যবহারের ন্যায্যতা দিতে পারে।’ ছাত্র বাছাইয়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সিদ্ধান্তও পিছিয়ে দিয়েছে আদালত।
২০ বছর পর, আইনের উপর্যুক্ত বক্তব্যটি উল্টে গিয়েছে। পরিহাসের বিষয় এই যে, আইনটি সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের উপলক্ষ করে নয়, বরং এশীয়-আমেরিকানসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধি বলে দাবি করা একদল ছাত্রের উপলক্ষ্যে পুনরায় লেখা হয়েছে।
রিপাবলিকান বনাম ডেমোক্র্যাট
হার্ভার্ড এবং ইউএনসি মামলাগুলিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিদের (৬:৩) মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাঁদের ‘রক্ষণশীল’ এবং ‘উদারপন্থী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস এবং বিচারপতি থমাস, আলিটো, গোরুশ, ক্যাভানাফ ও ব্যারেট—এই ছয় ‘রক্ষণশীল’ বিচারপতিকে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টরা নিয়োগ করেন। অন্যদিকে, ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্টরা নিয়োগ করেন বিচারপতি সোটোমায়র, কাগান ও জ্যাকসন—এই ‘উদারপন্থী’ তিনজনকে। খোলা চোখে, আইনি লড়াইটি ছিল ‘রক্ষণশীল’ বনাম ‘উদারপন্থী’ বিচারপতিদের। কিন্তু এটি বাস্তবে ছিল রিপাবলিকান-নিযুক্ত বনাম ডেমোক্র্যাট-নিযুক্ত বিচারপতিদের আইনি লড়াই।
‘পরিবার পরিকল্পনা বনাম কেসি’ মামলায় একই সংখ্যাগরিষ্ঠতায় (৬:৩) মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট ‘রো বনাম ওয়েড (১৯৭৩)’ মামলার রায় বাতিল করে দিয়েছে, যেখানে একজন মহিলার তরফে গর্ভপাতের অধিকার ঘোষিত হয়েছিল। নির্বাচনগুলি দেখিয়ে দেয় যে, কেসি মামলায় গৃহীত সিদ্ধান্তকে ৬০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রবাসী অনুমোদন করেন না।
বিচারপতিদের নির্বাচন করার ক্ষমতা, রাজনৈতিক কার্যনির্বাহীর উপর ন্যস্ত হওয়ার বিপদটি চিত্রিত হয়েছে হার্ভার্ড এবং ইউএনসি মামলার রায়ে। যে প্রেসিডেন্টের পার্টি সেনেটকে নিয়ন্ত্রণ করে, তিনি যেকোনও ব্যক্তিকে বিচারপতি নিয়োগ করতে পারেন, এই শর্তে যে মনোনীত আইনজ্ঞটি প্রেসিডেন্টের দলের মতাদর্শের প্রতি সহমত পোষণ করেন। সংবিধানের মৌলিক নীতি, সাংবিধানিক ইতিহাস ও নৈতিকতা, নজির, জনমতের বিবর্তন এবং সর্বোপরি, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের বর্তমান নীতি-বিশ্বাস ও ইচ্ছা বর্জিত হল।
বিচারপতিদের প্রবণতা
ভারতের জন্য একটা শিক্ষা আছে। এই দেশে মারাত্মক রকমের মেরুকরণ ঘটে রয়েছে। সেখানে এগজিকিউটিভের (প্রধানমন্ত্রী) হাতে সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্টের বিচারপতিদের বেছে নেওয়ার ক্ষমতা অর্পণ বা কলেজিয়াম-পূর্ব অবস্থানে ফিরে যাওয়াটা বিপজ্জনকই হবে। ক্ষমতা কলেজিয়ামের কাছে একচেটিয়াভাবে সংরক্ষিত হয়ে গেলে সেটাও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ কলেজিয়ামের পাঁচজন বিচারপতিরও পছন্দ এবং প্রবণতা রয়েছে। একজন অযোগ্য বিচারপতিকে উচ্চতর বিচার বিভাগে নিয়োগের ঘটনা বিরল হতে পারে, তবে বিশেষভাবে যোগ্য ব্যক্তিরা যে উপেক্ষিত হয়েছেন বা কলেজিয়ামের সুপারিশগুলি সরকার প্রত্যাখ্যান করেছে অথবা সেগুলি কার্যকর করার ক্ষেত্রে অযথা বিলম্ব হয়েছে, তার দৃষ্টান্ত রয়েছে ভূরি ভূরি। পাশাপাশি, আদালতে বৈচিত্র্য ও প্রতিনিধিত্ব ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সমতা হল কাঙ্ক্ষিত আদর্শ। প্রতিকূলতা হল একটি কঠোর বাস্তব। আর বৈচিত্র্যের প্রয়োজন আমরা অনুভব করেছি। এই তিনটির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য, অবশ্যই এমন বিচারপতিদের নির্বাচন করার ব্যবস্থা আমাদের থাকবে, যাঁরা সংবিধানের মৌলিক নীতির প্রতি বিশ্বস্ত হবেন।
• লেখক সাংসদ ও ভারতের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী। মতামত ব্যক্তিগত