পুরনো রোগের বৃদ্ধিতে স্বাস্থ্যহানির সম্ভাবনা। ব্যবসায় শুভত্ব বজায় থাকবে। আর্থিক প্রগতিও হবে। ... বিশদ
লড়াই তো সেই শুরু। প্রথম কয়েকদিন দূর সম্পর্কের এক কাকার বাড়িতে উঠেছিলেন তিনি। কিন্তু মাস গড়ানোর আগেই কাকা হাত তুলে নেন। অর্থাত্ মাথার উপর ছাদ নেই, পকেটেও ভাঁড়ে মা ভবানী। এমন অবস্থায় মুম্বইয়ের মতো শহরে কীভাবে দিন গুজরান হবে? ভাবলেই ভয় হয়। কিন্তু যশস্বী হাল ছাড়েননি। আজাদ ময়দানের কাছাকাছি এক ডেয়ারিতে কাজ জুটিয়ে নেন। সাতসকালে উঠেই ময়দানে অনুশীলন। আর ফিরে এসে ডেয়ারিতে ঝাঁট দেওয়া, টেবিল পরিষ্কারের কাজ করতেন। রাতে সেখানেই এক কোণে ঘুমানো। তবে তাঁর ধ্যান, জ্ঞান সবই যে ক্রিকেটে। কাজে মন না থাকায় ডেয়ারি থেকে বের করে দেন মালিক। অর্থাত্, ১০ বছরের ছেলেটা ফের রাস্তায়। বাড়িতেও কিছু জানানোর সাহস হয়নি যশস্বীর। ভয় ছিল, পাছে বাবা গ্রামের বাড়িতে নিয়ে চলে যান। শেষ পর্যন্ত এক কোচের সুপারিশে আজাদ ময়দানে মুসলিম ইউনাইটেড স্পোর্টসের তাঁবুতে আশ্রয় জোটে। খেলার মাঠের সামনে থাকার জায়গা পেয়ে বেশ খুশিই হয়েছিলেন যশস্বী। কিন্তু পেটও তো চালাতে হবে। তাই দু’মুঠো অন্ন সংস্থানের জন্য মুম্বইয়ের ময়দানে ফুচকা বিক্রি করতে হয়েছে ছেলেটাকে। এছাড়া ফলের দোকানের পাশাপাশি স্কোরার হিসেবেও কাজ করেছেন।
প্রকৃতির নিয়ম, রাত শেষে ভোর আসে। পরিশ্রমী যশস্বীর জীবনেও এমন ক্ষণ এসেছে। একদিন কোচ জাওলা সিংয়ের নজর যায় নেটে ব্যাট করা যশস্বীর দিকে। তরুণ বাঁ-হাতির প্রতিভা দেখে মুগ্ধ হন তিনি। ছেলেটার সঙ্গে আলাপচারিতার জন্য এগিয়ে যান। সেখানেই তাঁর লড়াইয়ের কথা জানতে পারেন জাওলা। সম্প্রতি এক সাক্ষাত্কারে কোচ বলছিলেন, ‘যশস্বীর মুখে ওর জীবন কাহিনি শুনে শুরুতে বিশ্বাস করতে পারিনি। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, সত্যি বলছে।’ এরপরই জাওলা তাঁর স্থানীয় অভিভাবকের দায়িত্ব নেন। ছোট্ট ছেলেটাকে নিজের বাড়িতে রাখেন। আশ্বাস দেন, ‘তুই শুধু ক্রিকেট খেলে যা। বাকি কিছু নিয়ে ভাবতে হবে না। সব দায়িত্ব আমার।’
আসলে এই জাওলা সিং সেদিন যশস্বীর মধ্যে নিজেকে খুঁজে পেয়েছিলেন। গ্রাম থেকে ক্রিকেটার হওয়ার আশায় তিনিও মুম্বইয়ে পা রাখেন। কিন্তু রাজ্য পর্যায়ের উপরে উঠতে পারেননি। যশস্বীর মাধ্যমে নিজের কেরিয়ারের অপূর্ণতা মেটানোর সুযোগ পান। এক সাক্ষাত্কারে জাওলা বলছিলেন, ‘তরুণ যশস্বীর মধ্যে নিজেকে খুঁজে পেতাম। ভাবতাম, উপরওয়ালা আমায় আরও একটি সুযোগ দিয়েছে। নিজে যেটা পারিনি যশস্বীকে দিয়ে তা করাতে চেয়েছি। তবে তখন ওর হাঁটুতে গুরুতর চোট ছিল। আমার সঙ্গে দেখা না হলে ছেলেটার বড়সড় ক্ষতি হয়ে যেত। সবার প্রথমে চিকিত্সা করিয়ে ওকে সুস্থ
করে তুলি।’
এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি যশস্বীকে। দুরন্ত পারফরম্যান্সের সুবাদে অনূর্ধ্ব-১৬ দলে জায়গা পান তিনি। তারপরই প্রথমবার গ্রামের বাড়িতে যান। তাঁর মা এক সাক্ষাত্কারে বলছিলেন, ‘প্রায় ৫-৬ বছর পর ছেলের মুখ দেখতে পেয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারিনি। তবে সে তাঁর স্বপ্নপূরণ করতে পেরেছে। এতেই আমি খুশি।’ অনূর্ধ্ব-১৬’তে দুরন্ত পারফরম্যান্সের সুবাদে প্রচারের আলোয় আসেন যশস্বী। শচীন-পুত্র অর্জুন তেন্ডুলকরের সঙ্গে একই টিমে খেলতেন। তাঁর প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে মাস্টারব্লাস্টার যশস্বীকে নিজের ঘরে ডেকে একটি ব্যাট উপহার দেন। এটাই এখনও পর্যন্ত তাঁর জীবনের সেরা মুহূর্ত। এরপর ২০১৯ সালে মুম্বইয়ের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে সুযোগ পান তিনি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কনিষ্ঠতম ক্রিকেটার হিসেবে দ্বিশতরানের রেকর্ডও গড়েন যশস্বী (১৭ বছর ২৯২ দিন)। সে বছরই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেও জাতীয় দলে ডাক পান তিনি। ৬ ইনিংসে মোট ৪০০ রানের সুবাদে টুর্নামেন্টের সেরা প্লেয়ারের পুরস্কারও উঠে যশস্বীর হাতে। অল্প সময়েই এই তরুণের নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আইপিএলে চুক্তিবদ্ধ হতেও সময় লাগেনি।
২০২০ সালের নিলামে তাঁকে ২ কোটি ৪০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে দলে নেয় রাজস্থান রয়্যালস। সেই ১০ বছর বয়সে মুম্বইয়ে আসা ছেলেটার স্বপ্ন সার্থক হয়। মেটে আর্থিক অনটনও। ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের বন্যা বইয়ে দেওয়ার পর এবারের আইপিএলেও দুরন্ত ছন্দে ছিলেন তিনি। ১৪ ম্যাচে তাঁর ব্যাট থেকে আসে ৬২৫ রান। শামিল একটি শতরানও। সেই সুবাদে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে ভারতের দলের রিজার্ভ প্লেয়ার হিসেবেও ডাক পান তিনি। ছেঁড়া কথায় শুয়ে দেখা স্বপ্নও যে সার্থক হয়, তা যশস্বী প্রমাণ করছেন। তবে এখানেই থামার পাত্র নন তিনি...