পারিবারিক ধর্মকর্ম পালনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ। সন্তানের কর্মসাফল্যে গর্ব। গবেষণায় অগ্রগতি। ... বিশদ
কুবলয় হাসে। মঞ্জুমাসি তার নিজের মাসি নন। তার মায়ের চেয়ে বয়সে অনেক ছোট।
বাস থেকে নামল। বৃষ্টি থেমেছে। আকাশের দিকে তাকাল। এখনও মেঘ জমে আছে। এক্ষুনি বৃষ্টি শুরু হতে পারে। কুবলয়ের কাঁধে ঝোলানো লেদারের ব্যাগে সাধারণত যা যা থাকে সেসব আছে। কিন্তু বাড়ি থেকে বেরনোর সময় চারদিক রৌদ্রময় ছিল। তাই ছাতার কথা মনে পড়েনি।
সোনার ঘড়িটা মনে করে এনেছে তো! ব্যাগটা একবার দেখা দরকার। চারদিকে তাকাল। মোটামুটি ফাঁকা। হয়তো রবিবার বলে বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ। অদূরে সাইনবোর্ডটা দেখে স্বস্তি বোধ করল। পল্টু বস্ত্রালয়। বন্ধ। এখানেই তাকে অপেক্ষা করতে হবে। হাতে এখনও সময় আছে। এখন সাড়ে পাঁচটা। উনি বলেছেন ছ’টায় আসবেন। তার আগে একবার সোনার ঘড়িটা এনেছে কি না দেখা দরকার। প্রকাশ্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে ব্যাগ হাতড়ে ঘড়ি খুঁজবে! তা কি হয়! অথচ দেখতে হবে। তার কী যে হয়েছে! ইদানীং একটুতেই ভুলে যাচ্ছে। চশমা, চাবি যখন তখন হারিয়ে ফেলছে। তবে শেষপর্যন্ত খুঁজে পাচ্ছে ঠিকই। অনেকক্ষণ বসে বসে ভাবতে হচ্ছে।
চশমা কোথায় রাখল! খাটের উপর! কই! নেই তো! টেবিলের ড্রয়ারে! সেখানে না পেয়ে ভাবতে ভাবতে মনে পড়ল বাথরুমে আছে। ঠিক তাই। বাথরুমের মিররের ব্যাকেটে ছিল। ফ্ল্যাটে ফিরে হাত-মুখ ধোয়ার সময় চশমাটা এখানেই রেখেছিল।
ফ্ল্যাটের চাবি! কোত্থাও নেই। পকেটে, ব্যাগে, বিছানায়, বালিশের নীচে, টেবিলে, ড্রয়ারে নেই। শেষপর্যন্ত পেল। ফ্ল্যাটে চাবি খুলে ঢোকার সময় চাবিটা কি-হোলে থেকে গিয়েছিল। এক ঘণ্টা বাদে দরজা খুলে সেটা দেখতে পেল। আরে! এই তো চাবি! বাইরে থেকে কেউ চাবিটা টেনে খুলে নিয়ে পালিয়ে যেতে পারত।
এখন সে দাঁড়িয়ে আছে শাটার নামানো বন্ধ পল্টু বস্ত্রালয়ের সামনে। পাশেই পানাপুকুর। পুকুরে ধ্যানমগ্ন একটা দুধসাদা বক। খানিকটা ফাঁকা জমি। কয়েকটি গাছ। ঝোপঝাড়।
বাহ্। বেশ একটা আড়াল পাওয়া গেল। সেই আড়ালে গিয়ে ব্যাগ হাতড়ে নিশ্চিন্ত হল। ঘড়িটা এনেছে। এটা সত্যিই সোনার কি না যাচাই করা হয়নি। স্যাকরার কাছে গেলে তিনি হয়তো জিজ্ঞেস করতেন, ‘ এটা কি আপনার ঘড়ি? এমন সেকেলে পকেটঘড়ি আজকাল পাওয়া যায়! এ তো দেখছি সোনার ঘড়ি!
পেলেন কোথা থেকে?’
এইসব প্রশ্নের মুখোমুখি হতেই হতো। তাই যায়নি। একবার ভেবে ছিল মঞ্জুমাসিকে দেখাবে। তাঁর বড় ফ্ল্যাটের সংলগ্ন এই সেপারেট ছোট্ট ফ্ল্যাটটায় কুবলয় থাকে। ওঁর পিজি হয়ে। মঞ্জুমাসি তাকে যতই স্নেহ করুন ঘড়ি দেখে চমকে উঠতেন, ‘এই সোনার ঘড়ি কোথায় পেলে!’ প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে অনেক কথা বলতে হয়। তাই ঘড়িটা আলমারিতে লুকিয়ে রেখেছিল। তাও ঘড়ি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নয়। পাওয়ার পরের দিন। আসলে ঘড়ির কথা সে ভুলে গিয়েছিল। সেই ভদ্রলোকের ফোন পেয়ে মনে পড়েছিল। যাঁর ঘড়ি আজ তাঁকে ফেরত দিতে এসেছে।
...
ফোনে ভদ্রলোক বলেছিলেন, ‘ গতকাল দুশো সাতাশ নম্বর বাসে আপনার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। আমার নাম আদিনাথ নাগ। মনে পড়ছে?’ কুবলয় বলেছিল, ‘আপনার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল! কই, মনে পড়ছে না তো!’ উনি বলেছিলেন, ‘সে কী! মনে পড়ছে না! বাসে খুব ভিড় ছিল। আপনার সিটের সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। আমার হাতে একটা ছোট বাক্স ছিল। বাসের ঝাঁকুনিতে নিজেকে সামলাতে পারছিলাম না। মনে পড়ছে না!’ তক্ষুনি কুবলয়ের সব মনে পড়ে গেল, ‘হ্যাঁ। হ্যাঁ। এবার মনে পড়েছে। আপনি বাক্সটা আমার হাতে দিয়ে বললেন, আপনার ব্যাগে রাখুন। নামার সময় চেয়ে নেব। বাক্সটা ব্যাগে রাখলাম। খানিকক্ষণ পর আমার পাশের সিট খালি হল। আমার পাশে বসলেন। কত গল্প হল। আমার ফোন নাম্বার একটা চিরকুটে টুকে নিলেন। বললেন আপনার কোনও ফোন নেই। তারপর হঠাৎ রাজাবাজারের স্টপে নেমে গেলেন।’ আদিনাথ বললেন, ‘বড় ভুল হয়ে গেছে। আপনার ব্যাগে আমার ছোট বাক্সটা থেকে গেল।’ কুবলয় বলল, ‘তাই নাকি! আপনার বাক্সের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। আপনি হোল্ড করুন। দেখছি। কী আছে ওই ছোট বাক্সে?’
কুবলয়ের মনে হল আদিনাথ ফোনের ওপারে মুচকি হাসছেন। সেই সঙ্গে তার খেয়াল হল, ‘বলেছিলেন, আপনার ফোন নেই। কিন্তু...’ আদিনাথ তার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললেন, ‘অন্য একজনের ফোন থেকে কথা বলছি। আপনি বাক্সটা দেখুন। ফোন হোল্ড করে আছি।’
কুবলয় ব্যাগ হাতড়ে বাক্স পেল। খুলে দেখল একটা সোনালি রঙের সেকেলে পকেটঘড়ি। ফোন তুলে নিয়ে বলল, ‘বাক্স আছে। তাতে সোনালি রঙের একটা পকেটঘড়ি।’ আদিনাথ বললেন, ‘ওটা খাঁটি সোনার ঘড়ি।’
কুবলয় বলল, ‘তাই নাকি! কিন্তু কীভাবে আপনাকে এটা ফেরত দেব? এক কাজ করুন আমার অফিসে আসুন।’ উনি বললেন, ‘না। সেটা ঠিক হবে না। আপনি বরং আমার কাছে আসুন।’ কুবলয় বলল, ‘কোথায় আসব? আপনার বাড়িতে?’ উনি বললেন, ‘না। না। আমরা বাইরে কোথাও মিট করি।’ কুবলয় বলল, ‘রবিবার ছাড়া অন্যদিন যেতে পারব না।’ উনি বললেন, ‘বেশ। তাই ঠিক রইল। সামনের রবিবার। কোথায় আসতে হবে বলে দিচ্ছি।’ গন্তব্যস্থল বুঝিয়ে দিয়ে শেষে বললেন, ‘মনে রাখবেন পল্টু বস্ত্রালয়ের সামনে। ওখানে বাস থামে। কথা বলে মনে হল আপনি একটু ভুলোমনের মানুষ। সোনার ঘড়িটা মনে করে আনবেন কিন্তু।’ হঠাৎ কুবলয়ের মনে হল ফোনের ওপারে কে যেন বাবা বলে ডাকল। মেয়ের গলা। ভদ্রলোক হঠাৎ ফোন ছেড়ে দিলেন।
আজ রবিবার। সকালে আদিনাথবাবু ফোন করেছিলেন, ‘সোনার ঘড়ি নিয়ে আজ আসছেন তো! সন্ধে ছ’টা। পল্টু বস্ত্রালয়।’ কুবলয় বলেছিল, ‘আসছি।’ কিন্তু কুবলয় চেক করে দেখল না আদিনাথ নাগ একই ফোন থেকে দ্বিতীয় ফোনটা করেছিলেন কি না।
কুবলয়ের বয়স তিরিশ। বাড়ি আসানসোলে। কলকাতার কিড স্ট্রিটে একটা অডিট ফার্মে চাকরি করে। তার সিনিয়র অজিত মিত্র। তাঁকে সে অজিতদা বলে। একদিন তিনি বলেছিলেন, ‘এই বয়সে এত ভুলোমন কেন! কোথায় কোন ফাইল রাখছ ভুলে যাচ্ছ। এইভাবে কাজ করলে মিস্টার দত্ত একদিন তোমাকে জবাব দিয়ে দিতে পারেন।’
কুবলয় ঘাবড়ে গিয়েছিল, ‘তাহলে!’ অজিতদা বলেছিলেন, ‘ঠিক আছে তোমাকে একদিন সুবীরের কাছে নিয়ে যাব। আমার এই বন্ধু কিন্তু নামকরা মনোবিদ।’
কুবলয় একবার ভেবেছিল অজিতদাকে সোনার ঘড়ির কথাটা বলবে। দেখাবেও। আলমারি থেকে ওটা বের করে অফিসে নিয়ে যাবে। পরমুহূর্তে মত বদলাল। বাসে কেউ চুরি করে নেবে না কে বলতে পারে।
সেদিন চলন্ত বাসে কথায়-কথায় আদিনাথ নাগকে সে কোথায় থাকে, কোথায় কী চাকরি করে, কোথায় তার অফিস ইত্যাদি আবেগের বশে বলে দিয়েছে। ঘড়ি সাবধানে রাখতে হবে। ঘড়ি খোয়া গেলে ভদ্রলোক পুলিসের সাহায্য নেবেন। সুতরাং অজিতদাকে ঘড়ি দেখাতে নিয়ে যাওয়া রিস্কি।
...
আজ সকালে মঞ্জুমাসি তার ঘরে এসেছিলেন, ‘কুবলয়, আজ রবিবার। বিকেলে আমার কাছে চা খাবে। কেমন!’ কুবলয় বলেছিল, ‘বিকেলে! ক’টায়!’ উনি বলেছিলেন, ‘এই ধর চারটে-সাড়ে চারটেতে।’ কুবলয় বলেছিল, ‘আজ হবে না। একটা কাজ আছে। ওই সময় বেরব। ফিরতে ফিরতে রাত আটটা হয়ে যাবে।’ উনি বলেছিলেন থাকতে পারলে ভালো হতো। আমার মাসতুতো বোন ধীরা আসবে। ওর বর সুবীর আবার ডাক্তার।’ এইটুকু বলে উনি থেমেছিলেন। কুবলয়ের মনে হল সুবীর নামটা শোনা শোনা। কার কাছে শুনেছে এখন মনে পড়ছে না।
এরপর মঞ্জুমাসি বলেছিলেন, ‘এই কাজটা অন্য একদিন করা যায় না! থাকলে ভালো করতে। এই যে মাঝে মাঝে তুমি যে ভুলে যাও... আজ চশমা, কাল চাবি, পরশু ফোন কোথায় রাখছ মনে থাকছে না। পরে অবশ্য মনে পড়ছে। খুঁজেও পাচ্ছ। এই বয়সে এত ভুলে যাওয়া কি ঠিক! সুবীর মনের ডাক্তার। আমার ইচ্ছে ছিল তার সঙ্গে তোমার আলাপ করিয়ে দিই।’ কথা শেষ করে মঞ্জুমাসি আর দাঁড়াননি। চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু কুবলয় নিরুপায়। আজ ঘড়ি আদিনাথবাবুকে ফেরত না দিলে হয়তো একদিন এই বাড়িতে পুলিস নিয়ে চড়াও হবেন। এসব কথা তো মঞ্জুমাসিকে বলা যায় না!
সত্যিই তার বড় ভুলোমন। সেদিন যখন আদিনাথ সিট ছেড়ে উঠলেন নামবেন বলে, তখন তার ব্যাগে রাখা বাক্সের কথা একবারও মনে পড়ল না! যাঁর বাক্স তাঁরও মনে পড়েনি। বাড়ি ফিরেও মনে পড়েনি। আদিনাথ নাগ ফোন করে মনে করিয়ে দিলেন।
মঞ্জুমাসির সুবীর ডাক্তার কি তাহলে অজিতদার সেই বন্ধু!
পৌনে ছ’টা বাজল। আকাশ অনেকটা পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। মনে হয় আর বৃষ্টি হবে না। আকাশ থেকে চোখ সরিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই দেখতে পেল পাঞ্জাবি-পাজামা পরা এক ভদ্রলোক রাস্তা পেরিয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছেন। আর একটু এগিয়ে এলে সে আদিনাথ নাগকে চিনতে পারল। ভদ্রলোকের মুখে হাসি নেই কেন! কুবলয় তো তাঁর সোনার ঘড়ি ফেরত দিতে এসেছে।
উনি সামনে এসে দাঁড়ালেন, ‘ঘড়ি এনেছেন?’ কুবলয় ব্যাগ থেকে ঘড়িসুদ্ধ বাক্সটা বের করে ওঁর হাতে দিল। উনি বাক্স খুলে ঘড়ি বের করে দেখে আবার সেটা বাক্সে রেখে পাঞ্জাবির সাইড পকেটে রেখে বললেন, ‘আপনাকে কিন্তু ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’ কুবলয় অবাক, ‘কীসের ক্ষতিপূরণ!’ উনি হাসছেন, ‘বাহ্ রে। আমার হাত থেকে এই বাক্সসুদ্ধ সোনার ঘড়ি ছিনিয়ে নিয়ে এই ক’দিন নিজের কাছে রাখলেন। তার তো ক্ষতিপূরণ বলে একটা ব্যাপার থাকে।’ কুবলয় রেগে গেল, ‘কী সব আবোল-তাবোল বকছেন!’ উনি বললেন, ‘যা সত্যি তাই বলছি।’ বলে বুক পকেট থেকে ফোন বের করলেন, ‘তাহলে পুলিসকে ডাকি?’ কুবলয় এবারও অবাক, ‘আপনার ফোন আছে!’ প্রত্যুত্তর এল, ‘আছে। দেখতেই তো পাচ্ছেন।’
কুবলয় বুঝতে পারল ফাঁদে পড়েছে। তবু সাহস করে বলল, ‘ডাকুন। বাসের সব কথা পুলিসকে বলব।’ আদিনাথ আবার হাসলেন, ‘বানিয়ে বলছেন না, সেটা প্রমাণ করতে পারবেন তো? তাই বলছি, আপনার পার্সে যা আছে দিন।’ কুবলয় একবার ভাবল চিৎকার করে লোক ডাকলে হয়। কিন্তু তার কথা কেউ বিশ্বাস করবে কি! প্রমাণ তো নেই।
আদিনাথ জিজ্ঞেস করলেন, ‘পার্সে কত আছে?’ কুবলয় বলল, ‘ঠিক মনে নেই। তবে সাতশোর মতো থাকতে পারে।’ অজিতদা পরামর্শ দিয়েছিল, ‘যখনই বাড়ির বাইরে বেরবে সঙ্গে কিছু এক্সট্রা টাকা রাখবে। কমপক্ষে সাতশো অন্তত।’
আদিনাথ বললেন, ‘বেশ। আমাকে ছ’শো দিলেই হবে।’ কুবলয় একবার শেষ চেষ্টা করল, ‘আপনার ফোন নাম্বার কিন্তু আমার কল লিস্টে আছে। পুলিসকে দেখাতে পারি।’ এবার উনি অট্টহাস্য করলেন, ‘ওই নম্বর কোথায় পাবেন! সেই সিমকার্ড নষ্ট করে দিয়েছি।’ কুবলয় পার্স বের করল।
হঠাৎ কোথা থেকে ছুটে এল এক তরুণী। চিৎকার করে বলল, ‘একটা টাকাও দেবেন না।’ আদিনাথের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে, ‘কুমু, তুই!’
কুমু এগিয়ে এসেছে, ‘হ্যাঁ। আমি।’ আদিনাথ বললেন, ‘চল। চল। বাড়ি ফিরি।’ হাতে পার্স নিয়ে কুবলয় ভ্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে রইল।
কুমু বলল, ‘আমিই পুলিসকে ডাকছি।’ হাতের বটুয়া থেকে কুমু ফোন বের করল। আদিনাথ আর্তকণ্ঠে বললেন, ‘তুই তোর বাবাকে পুলিসের হাতে তুলে দিবি! বুক কাঁপবে না!’ কুমু বলল, ‘না। কাঁপবে না। অনেকদিন ধরে সহ্য করেছি। আর নয়। ঠাকুরদার ওই নকল সোনার ঘড়ি নিয়ে কম দুষ্কর্ম করনি। সেদিন এঁকে ফোন করে কী কী বলছিলে এবং আজও যা বলছিলে সব শুনেছি। তোমাকে হাতেনাতে ধরব বলেই ছুটে এসেছি।’
করুণ দৃষ্টিতে আদিনাথ কুবলয়ের দিকে তাকালেন, ‘প্লিজ, ওকে বারণ করুন।’ কী বলবে কুবলয় ভেবে পেল না। কুমু ততক্ষণে ফোনে কথা শুরু করেছে, ‘হ্যালো। হ্যালো। করিমপুর পুলিস স্টেশন...’
আবার আকাশ কালো হয়ে উঠছে। এবার বোধহয় জোরে বৃষ্টি নামবে। তখনও কুমু হ্যালো, হ্যালো করে যাচ্ছে। কুবলয় কুমুর হাত থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নিল, ‘না। পুলিস ডাকবেন না। মেয়ে কখনও বাবাকে পুলিসের হাতে তুলে দেয়!’
আদিনাথ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছেন। কুমু হাত বাড়াল, ‘ফোনটা দিন।’ কুবলয় ফেরত দিল। কুমু ফোন অফ করে বটুয়াতে রেখে দিল।
কুবলয় বলল, ‘রাগের মাথায় কী করতে যাচ্ছিলেন ভেবে দেখেছেন!’ কুমু বলল, ‘আর উনি দিনের পর দিন কী করে চলেছেন সেটা জানেন! ওই ঘড়ি ওঁর সর্বনাশের মূল কারণ। সহজ-সরল লোক পেলেই ফাঁদে ফেলেছেন।’
তারপর বাবার দিকে ফিরে হাত বাড়াল, ‘ঘড়িটা দাও।’ বাবা মাথা নাড়লেন, ‘না।’ কুমু আবার বলল, ‘দাও।’ বাবা দিল।
ওটা নিয়ে কুমু ছুটে গেল পানাপুকুরের দিকে। ছুড়ে ফেলে দিল ওই পুকুরে। তারপর শান্তভাবে এসে দাঁড়াল দু’জনের মাঝখানে।
কুবলয় আকাশের দিকে তাকাল। মেঘ এবার কেটে যাচ্ছে। আর সন্ধে নামছে।