পারিবারিক ধর্মকর্ম পালনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ। সন্তানের কর্মসাফল্যে গর্ব। গবেষণায় অগ্রগতি। ... বিশদ
জার্নিটা শুরু হয়েছিল সকালে। চিৎপুর স্টেশন থেকে। হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেসে চড়ে বসা। গন্তব্য নবাবের মুলুক। মুর্শিদাবাদ স্টেশনে নেমে ঘোড়ার গাড়ি ভাড়া করে সোজা কাটরা মসজিদ। তৃষার পৈতৃক জেলা। আগে থেকেই ও রুট ম্যাপ সাজিয়ে রেখেছিল, কোনটার পর কোনটা দেখা হবে। প্রথমেই কাটরা মসজিদ। ঘোড়ার খুরের টকটক শব্দ। গাড়োয়ানের ঘোড়া চমকানো মুখের আওয়াজ বেশ উপভোগ করছিল ওরা। সিরাজের শহরের সঙ্গে শুভদৃষ্টি সৈকতের। ইতিহাসের পাতার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা বাস্তব। কামান, গোলা, তরবারি...। ইটের পাঁজরে জমে থাকা কথা আলতো হাতে ছুঁয়ে দেখা। কোনও এক প্রাগৈতিহাসিক পটের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে ওরা। কাটরা মসজিদ দেখে তেমনই মনে হল।
বিস্ময় ভরা চোখে গাইডের দিকে মুখ ফেরাল সৈকত। ৩০ টাকা ঘণ্টায় ভাড়া করা গাইড যেন গুগল। গড়গড় করে বলে চলেছে— কাটরা মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ। ঐতিহাসিক স্যর যদুনাথ সরকারের মতে, প্রথম জীবনে তিনি মুসলিম ছিলেন না। দাক্ষিণাত্যের কোনও এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম তাঁর। বাল্যকালে দাস ব্যবসায়ীরা অপহরণ করে বিক্রি করে দেয় তাঁকে। ক্রেতা ছিলেন এক ধনী মুসলিম ব্যবসায়ী। তিনি বালককে ইসলাম ধর্মে দীক্ষা দেন। নতুন নাম হয় মহম্মদ হাদি। হাদি আওরঙ্গজেবের সান্নিধ্য লাভ করেন। বাংলায় রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত সমস্যা বাড়তে থাকলে মুঘল সম্রাট তাঁকে বাংলার দেওয়ান নিযুক্ত করেন। তখন দেওয়ানি রাজধানী ছিল ঢাকা। নানা কারণে দেওয়ানি অফিস তিনি ঢাকা থেকে মুখসুদাবাদে আনেন ১৭০২ সালে। ১৭০৬ সালে সম্রাট আওরঙ্গজেব তাঁকে মীর কুতুব মুর্শিদকুলি খাঁ উপাধি দেন। একই সঙ্গে সেখানে সদর দেওয়ানি কার্যালয় স্থাপনের অনুমতি দেন। মুখসুদাবাদের নতুন নাম হয় মুর্শিদাবাদ।
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মুর্শিদকুলি পুণ্য অর্জনের আশায় মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা করলেন। ১৭২৩ সালে কাটরা মসজিদ তৈরি শুরু হয়। দু’বছরে তৈরি হয় মসজিদ। সেটির প্রবেশপথে সিঁড়ির নীচেই রয়েছে মুর্শিদকুলি খাঁর কবর। মসজিদের সাতটি গম্বুজ সেগুলি প্রায় ধ্বংসের মুখে। মসজিদের চারপাশে গম্বুজ যুক্ত ছোট ছোট ঘর রয়েছে। সেগুলিতে দ্বীন শিক্ষার ছাত্ররা থাকতেন বলে অনুমান করা হয়। দু’পাশে দু’টি উঁচু মিনার। উচ্চতা ৭০ ফুট।
লাল ইটের শানে বসে সৈকত ফ্লাস্ক থেকে চা ঢেলে গলা ভেজাচ্ছে। মসজিদের ইটে পুরনো টেরাকোটার মূর্তি রয়েছে কোথাও কোথাও। সেগুলি খুঁটিয়ে দেখছিল তৃষা।
—এবার চল! হাজারদুয়ারি যাই।
কাঁচা-পাকা বাড়ির মাঝ দিয়ে ছুটছে এক্কাগাড়ি। অজানা গাছগাছালিতে ভরা চারপাশ। হাজার দরজার সামনে এসে পৌঁছল ওরা। মুর্শিদাবাদের শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ এই হাজারদুয়ারি। ১৮২৬ সালে ডানকান ক্যামলয়েড নামে এক ইঞ্জিনিয়ার হাজারদুয়ারি তৈরির প্রস্তুতি শুরু করেন। ১৮২৯ সালে ২৯ আগস্ট নবাব হুমায়ুন জা হাজারদুয়ারির ভিত্তি স্বরূপ চার কোণে চারটি সোনার ইট গেঁথে দেন। ভবন তৈরির কাজ শেষ হয় ১৮৩৭ সালে। ভবনটির দৈর্ঘ্য ৪২৫ ফুট। প্রস্থে ২০০ ফুট। উত্তরের প্রবেশদ্বারের বারান্দায় ছ’টি সুদীর্ঘ থাম রয়েছে। বারান্দায় ওঠার জন্য ৩৬টি সিঁড়ি। ওখানেই গা এলিয়ে বসে আছেন পর্যটকরা। সামনে বিরাট চওড়া একটা মাঠ। মাঠের ওপাশে ইমামবাড়া। এই সিঁড়িই এখন সেলফি জোন। ভাড়াটে ক্যামেরাম্যানও পাওয়া যায়। টিমটিম করে বেঁচে আছে ছবি তুলে দেওয়ার প্রাচীন পেশা।
হাজার দরজার হাতছানির ঘোর কাটিয়ে প্যালেসে ঢুকলেই ইতিহাসের মায়াজাল। রং তুলির শামিয়ানা। ঝাড়বাতির বাহার। হাজারদুয়ারি মূলত মিউজিয়াম। ইতিহাসের স্মৃতিকে গর্ভে নিয়ে বসে থাকা এক বিস্ময় অট্টালিকা। দেওয়ালের গায়ে ফ্রেমে বাঁধানো ইতালি, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, হল্যান্ড সহ নানা দেশের জানা-অজানা শিল্পীদের আঁকা মূল্যবান ছবি। কাচের শো-কেসে রাখা অস্ত্রশস্ত্র, বর্ম, সমর সরঞ্জাম। সৈকত বার বার দাঁড়িয়ে পড়ছিল শো-কেসের সামনে। ওকে ঠেলা দিচ্ছে তৃষা। পা চালাও, এখনও অনেক দেখা বাকি।
সব মিলে হাজারদুয়ারিতে ২ হাজার ৬০০টি অস্ত্র রয়েছে। তার মধ্যে ৪০টি পিস্তল, ৪১টি তরবারি, ১১টি মাসকেট, ৩টি লোহার ড্যাগা, ৭টি কুঠার, ৬টি চপার, একনলা ও দু’নলা মিলিয়ে ১৭টি বন্দুক সাজানো রয়েছে নানা কক্ষে। অমূল্য এই অস্ত্র সম্ভারে রয়েছে সিরাজ-উদ-দৌল্লার বল্লম, নাদির শাহের তরবারি, বিক্রমাদিত্যের বর্শা, মীরকাশিমের দু’নলা বন্দুক, আলিবর্দির তরবারি, সিরাজকে খুনে ব্যবহৃত ছুরি। বিদেশি অস্ত্রও রয়েছে। রয়েছে খাবারে বিষ পরীক্ষা করার প্লেট। হাজারদুয়ারির গ্রন্থাগারে প্রাচীন কোরান সহ বহু মূল্যবান গ্রন্থ রয়েছে। রয়েছে আইন-ই-আকবরির পাণ্ডুলিপি। আছে মুর্শিদকুলি খানের ব্যবহৃত মার্বেল পাথরের সিংহাসন। সিরাজের রুপোর সিংহাসন, রানি ভিক্টোরিয়ায় উপহার দেওয়া ঝাড়বাতি। হাতির দাঁতের সোফাসেট, পালকি। বিলিয়ার্ড বোর্ড। আর পর্যটকদের বিস্মিত করা এক অত্যাশ্চর্য আয়না। যেখানে শুধু নিজের মুখটি দেখা যায় না। যে কোনও দরজা দিয়ে ঢুকলে তা আয়নায় ধরা পড়ে।
প্যালেসের উল্টোদিকে ইমামবাড়া। একপাশে ক্লক টাওয়ার, অন্যপাশে মসজিদ। এখানে প্রথম ইমামবাড়াটি তৈরি করেছিলেন সিরাজ-উদ-দৌল্লা। সেটি ছিল কাঠের। ইংরেজরা সেটি ভেঙে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু ধর্মীয় ভাবাবেগের কারণে তা ভাঙা হয়নি। ১৮৩৭ সালে এক ইংরেজ আধিকারিক নতুন ইমামবাড়া তৈরির প্রস্তাব দেন। ১৮৪০ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তার অনুমতি দেয়। ১৮৪৭ সালে একটি অনুষ্ঠান চলাকালীন সিরাজের তৈরি কাঠের ইমামবাড়া আগুনে ভস্মীভূত হয়। অনেকে মনে করেন এই আগুন ইচ্ছাকৃতভাবে লাগানো হয়েছিল। ১৮৪৭ সালে নতুন ইমামবাড়া তৈরি হয়। এটি এশিয়ার বৃহত্তম ইমামবাড়া।
প্যালেসের পিছনেই ওয়াশিফ মঞ্জিল। প্যালেস প্রাঙ্গণে মাথা উঁচু করে সুউচ্চ ক্লক টাওয়ার। এর শীর্ষে রয়েছে একটি ঘড়ি। এটি তৈরি করেছিলেন ইউরোপীয় শিক্ষায় শিক্ষিত নবাব ফেরাদুন জা।
কাঠগোলা বাগানে ঢোকার মুখে ডাব বিক্রি করছেন স্থানীয়রা। একটা তুলে নিয়ে ঢক ঢক করে জল খেল সৈকত। কিছুটা এগতেই বসে আছে গাইডের দল। ঘণ্টায় ৩০, কোথাও ৫০ টাকা মজুরি। হাজারদুয়ারি থেকে চার কিলোমিটার উত্তরে জিয়াগঞ্জের রাজা লক্ষ্মীপৎ সিং দুগার ও ধনপৎ সিং দুগার নামে দুই ভাই জায়গাটি কিনে বাগান বাড়ি তৈরি করেন। ১৮৭৩ সালে বাগান ও বাড়ি প্রতিষ্ঠা হয়। প্রবেশপথে নহবত গেট। অর্থাৎ ফটকের মাথায় বাজনদারদের বসার জায়গা। ভিতরে প্রবেশের পর বাঁদিকে একটি জলপূর্ণ সুড়ঙ্গ। কথিত আছে এই, সুড়ঙ্গটি ভাগীরথীর সঙ্গে মিশেছে। এমনকী দেড় কিলোমিটার দূরে জগৎশেঠের বাড়িও এই সুড়ঙ্গ পথে যাওয়া যেত। ডান দিকে ছোট্ট পাখিরালয়। বাগান বাড়ির সামনেই বিরাট পুকুর, রঙিন মাছের সাঁতার। চারদিকে শুধু গাছ আর গাছ। গাইড ওদের নিয়ে এল শ্বেতশুভ্র একটা মন্দিরের সামনে। জেলার বিখ্যাত ও দর্শনীয় আদিনাথের মন্দির। এটি জৈনদের মন্দির। প্রধান কক্ষের মধ্যে সবচেয়ে উঁচু বেদীতে মূল বিগ্রহ আদিনাথের। মন্দিরে দিগম্বর ও শ্বেতাম্বর—উভয় সম্প্রদায়ের মূর্তির দেখা মেলে। বাগানের আলো-ছায়ার কড়িবরগার ঘরেই চালু হয়েছে হোটেল। মধ্যাহ্ন ভোজ সেরে সেখানে জিরিয়ে নিল ওরা।
কাঠগোলা বাগান থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যেই সে যুগের ব্যাঙ্কার জগৎ শেঠের বাড়ি। মুর্শিদকুলি খাঁ ঢাকা থেকে দেওয়ানি কার্যালয় মুখসুদাবাদে নিয়ে আসার সময়ই তাঁর সঙ্গে এখানে আসেন মানিক চাঁদ। মানিক চাঁদের ভাগ্নে তথা পোষ্যপুত্র ফতেচাঁদই ইতিহাস খ্যাত জগৎশেঠ। ১৭২৪ সালে তিনি দিল্লির বাদশার কাছে ‘জগৎশেঠ’ উপাধি পান।
শেঠের বাড়িটি এখন মিউজিয়াম। বিভিন্ন ধরনের বন্দুক, পিস্তল, তলোয়ার, মশাল, খড়্গ, ঢাল, গণ্ডারের চামড়া, হাত কামান, উল্কাপিণ্ড, হাতির দাঁতের পাশা, মসলিন শাড়ি, টাঁকশালে তৈরি মুদ্রা সহ বহু কিছু রয়েছে সেখানে। জগৎশেঠ নবাব বা রাজা না হয়েও তার রাজ-জৌলুসের খামতি ছিল না। বিপুল ধনসম্পদ থাকায় বহুবার তাঁর বাড়িতে আক্রমণ হয়। ফলে তাঁর বাড়িতে দু’টি গুপ্ত গুহা বা পথ ছিল, যার অংশ বিশেষ এখনও আছে। এই গুপ্ত পথ বহুদূর পর্যন্ত গিয়েছে। কথিত আছে, একটি পথ নিকটবর্তী ভাগীরথী নদীতে গিয়েছে, যাতে আক্রমণ হলে তিনি পালিয়ে বাঁচা যেতে পারে। আবার এও কথিত আছে যে, একটি পথ কিছুদূর গিয়ে দিক পরিবর্তন করে অন্য কোথাও গিয়েছে, যা আজও অজানা। এছাড়া, একটি গুপ্ত পথ কাঠগোলা বাগানে গিয়েছে।
গুপ্ত গুহাগুলি আজ আর নেই। সামনের কিছু অংশ রেখে বাকিটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই গুহা আজ মিউজিয়ামের অংশ। দু’টি গুপ্ত গুহাতেই পুরনো দিনের অনেক স্মারক সংগ্রহে রাখা হয়েছে। জগৎশেঠের রাজকীয় পোশাক ও ব্যবহার্য সামগ্রী তাঁর রাজকীয় জৌলুসেরই পরিচয় বহন করে। লর্ড ক্লাইভের একটি পোশাক আছে এখানে। রয়েছে একটি অতিসূক্ষ্ম মসলিন কাপড়। বিষাক্ত খাবার পরীক্ষা করার জন্য ব্যবহৃত বিশেষ থালা এখানে রক্ষিত আছে। তরলে বিষ মেশানো রয়েছে কি না, তা পরীক্ষার জন্য রয়েছে কাচের জার। সেকালের দেশসেরা রাজ-নর্তকী হীরা বাইয়ের একটি পেইন্টিং রয়েছে এখানে। ব্যক্তি মালিকানায় মিউজিয়ামের আকার নিয়েছে জগৎশেঠের প্রাসাদ।
ঘোড়াগাড়ির টকটক আওয়াজ থামল এসে আরও এক প্রাসাদের সামনে। এ তো হাজারদুয়ারির আদলেই গড়া! নশিপুর রাজবাড়ি। কুখ্যাত রাজা দেবী সিংহ পানিপথ থেকে বাংলায় এসেছিলেন ব্যবসা করতে। পলাশির যুদ্ধের ঠিক পরে ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে। তিনি ব্যবসায় বিশেষ প্রতিপত্তি করতে না পেরে মুর্শিদাবাদের রাজস্ব আদায়ের দেওয়ান রেজা খাঁর সঙ্গে সখ্য এবং ওয়ারেন হেস্টিংসের বিশেষ প্রিয়পাত্রে পরিণত হন। রংপুর ও দিনাজপুরের রাজস্ব আদায়ে নিযুক্ত হন। এক নিঃশ্বাসে বলে চলেছেন গাইড। খাজনা আদায়ে তিনি ছিলেন নির্মম আর ভীষণ অত্যাচারী। প্রাসাদের পিছনের অংশে এখনও ফাঁসির শিকল ও কুয়ো দেখতে পাওয়া যায়। দেবী সিংহকে পরবর্তীকালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি রাজা উপাধি দেয়। তিনি নিঃসন্তান ছিলেন তাই তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র রাজা উদমন্ত সিংহ নশিপুরের রাজা হন। তিনি বহু মন্দির নির্মাণ করেছিলেন পূর্ব পুরুষদের পাপ মোচনের জন্য। তাঁর জমিদারির অধিকাংশ আয় দেবতা, ব্রাহ্মণ ও দরিদ্র মানুষের সেবায় ব্যয় করতেন। রাজা উদমন্ত সিংহের নাতি রাজা কীর্তিচাঁদ ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে হাজারদুয়ারির আদলে বর্তমান নশিপুর রাজবাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন ।
বেলা ফুরিয়ে আসছে। সন্ধে নামার আগে পৌঁছতে হবে খোশবাগ। ভাগীরথীর ওপারে। ফেরিঘাটে যাওয়ার রাস্তায় পড়ল কসবিখাকি। মিরজাফর ও তাঁর বংশধরদের জাফরাগঞ্জ কবরস্থান। হাতে সময় কম। লালবাগের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে রয়েছে অগুনতি ছোট বড়, নামী-অনামী মসজিদ। কোনওটা ভগ্নপ্রায়। কোনওটির সংস্কার হয়েছে। নৌকার দোলা, পড়ন্ত সূর্য আর ভাগীরথীর হাওয়া। চোখ বুজে আসছে সৈকতের। ওপারে নেমে টোটো চেপে খোশবাগ। খুশবু থেকে খোশবাগ। নবাব আলিবর্দি ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ে একটি সৌধ নির্মাণ করেন। চারদিকে ফুলের গাছ লাগান। গন্ধে ম ম করত এলাকা। আলিবর্দি উইলে লেখেন, ‘কর্ম চঞ্চল প্রাণপাখি বেরিয়ে গেলে অকর্মা দেহটাকে খোশবাগে সমাধি করিও। যেন কেহ বিরক্ত না করে।’ মৃত্যুর পর তাঁকে খোশবাগে কবর দেওয়া হয়। এখানেই চিরশয্যায় তাঁর প্রিয় দৌহিত্র বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌল্লা। সিরাজের বেগম লুৎফুন্নেসা। আর আছে চরাচরব্যাপী নিস্তব্ধতা। কোলাহল মুক্ত সবুজের মাঝে শান্তির আশ্রয়। কিছুক্ষণ আগে স্থানীয় একটা মেয়ে ফুল রেখে গিয়েছে সিরাজ-লুৎফার কবরে। ও রোজ আসে।
ফের গঙ্গা পেরিয়ে এপারে আসা। বাহারি আলোয় সেজে উঠেছে মোতিঝিল পার্ক। সামনে বোটিং। পর্যটকদের জন্য মোতিঝিলকে নতুন করে সাজিয়েছে রাজ্য সরকার। যতটা ঝাঁ চকচকে করা যায়। ১৭৫০-’৫১ খ্রিস্টাব্দে নবাব আলিবর্দি খাঁয়ের জ্যেষ্ঠ জামাতা তথা ঘসেটি বেগমের স্বামী নবাব নওয়াজেস মহম্মদ খাঁ সুদৃশ্য মোতিঝিল এবং ঝিলের পাড়ে সিংহী দালান নামে এক প্রাসাদ নির্মাণ করেন। এখন সেই প্রাসাদ আর নেই। রয়েছে শুধু দালানের ভিত। কথিত আছে এই ঝিলে মোতি চাষ হতো। তাই নাম মোতিঝিল। ঝিলের জলে চাঁদের প্রতিচ্ছবি, সন্ধ্যা মিশছে রাতে। এবার ফেরাল পালা।
তৃষা জানতে চাইল, প্রি ওয়েডিং শ্যুটটা?
সৈকত বলল, নবাবি মুলুক। ...ফাইনাল।