পুরনো রোগের বৃদ্ধিতে স্বাস্থ্যহানির সম্ভাবনা। ব্যবসায় শুভত্ব বজায় থাকবে। আর্থিক প্রগতিও হবে। ... বিশদ
‘কাগজ কলম লয়ে বসিয়াছি সদ্য,/আষাঢ়ে লিখিতে হবে বরষার পদ্য...।’
আকাশের কোণ জুড়ে যতই ইতিউতি কালো মেঘেদের দেখা পাওয়া যাক না কেন, মোটের উপর ‘কাব্য’ করার সময় নয় অদ্য! বরং আবহাওয়া দপ্তর আর মৌসুমী জলবায়ু এই দুয়ের উপর আস্থা রেখে, সময় নষ্ট না করে এবছরের জন্য নিজেদের ‘বর্ষা-রেডি’ করে ফেলার আইডিয়াই বরং ভালো। আসলে পিচ গলা রোদ্দুরকে ভালোয় ভালোয় পার করে বঙ্গবাসী হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছে! সোশ্যাল মিডিয়ায় উঁকি দিলেই চোখে পড়ছিল ‘সূয্যিমামা’-র তেজ ঘিরে রকমারি মশকরার আসর! একটা একটা দিন পার করে সকলেই প্রায় চাতকপাখির মতো তাকিয়ে ছিল ‘আষাঢ়ষ্য প্রথম দিবস’-এর দিকে! ইদানীং ছিটেফোঁটা বৃষ্টি হলেও বরুণদেবের দেখা যেন পাওয়াই যাচ্ছে না। আজ বৃষ্টি তো কাল জমাটি রোদ্দুর। এ কী ধরনের বর্ষা? তবু বৃষ্টি বাঙালির এক অদ্ভুত রোমান্টিসিজমের জায়গা।
একদিকে ঝমঝমে বৃষ্টি, মেঘলা আকাশ, প্লে-লিস্টে হেমন্ত-কিশোরের গান আর আলসেমি ভরা গোটা একটা দিন। বর্ষাভেজা দুপুরে গরম গরম খিচুড়ি আর ইলিশ মাছ ভাজা। এরা সবাই যেন বর্ষার এক একটা অংশ। তবে, গোটা বর্ষাকাল তো ‘আলসেমি ভরা দুপুর’ মনে করে কাটিয়ে দেওয়ার উপায় নেই। অফিস-কলেজ আর বাচ্চাদের স্কুল সবই খোলা। ‘রেনি ডে’-র মতো পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনা ছুটিগুলোও খুব একটা মেলে না। তাই এই বর্ষায় স্বচ্ছন্দে চলাফেরা তো করতে হবে! তার জন্য লাগবে প্রস্তুতি। মুষলধারার বৃষ্টি কিংবা প্যাচপেচে কাদাকে এক্কেবারে বুড়ো আঙুল দেখানোর বেশ কয়েকটা পদ্ধতি জেনে নিন।
উপযুক্ত পোশাক
বর্ষার দিনগুলোতে বাড়ির বড় থেকে ছোট, প্রত্যেকেই পোশাক নির্বাচনের সময়ে ফ্যাব্রিক বাছাইয়ে গুরুত্ব দিন। যেহেতু বর্ষাকালে ভিজে স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় কাপড় শুকোতে বেশি সময় লাগে, সেক্ষেত্রে নির্বাচন করুন শিফন, পলিয়েস্টার এবং সুতির ফ্যাব্রিক। এগুলো পরলে মূলত বৃষ্টির দিনে স্বচ্ছন্দে যাতায়াত এবং কাজ করতে পারবেন। তবে, বাচ্চা ও বাড়ির বয়স্কদের জন্য সুতির পোশাকটাই ভালো এই সময়ে।
সিল্কের তৈরি পোশাক থেকে ত্বকে অস্বস্তি এবং র্যাশ হওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে, কাজেই সিল্কের পোশাক থেকে শুরু হওয়া ফাঙ্গাল ইনফেকশন থেকে ত্বককে বাঁচাতে এই ক’টা মাস সিল্কের পোশাক এড়িয়ে চলতে পারেন।
ঠিকঠাক জুতো
বৃষ্টি আর কাদাভেজা পথ পেরিয়ে নিজে যখন বাজারে কিংবা অফিসে যাবেন কিংবা আপনার বাড়ির খুদে সদস্যটি যখন স্কুলে যাবে, তখন পোশাকের পাশাপাশি জুতোর দিকেও নজর দেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।
চামড়া কিংবা ভেলভেটের জুতো ভিজে গেলে শুকোতে সময় লাগতে পারে, কাজেই এগুলোর বদলে পরতে পারেন জেলি শ্যু কিংবা প্লাস্টিকের জুতো। জুতোর চামড়া এবং বৃষ্টির জলের কারণে পায়ে বিভিন্ন ফাঙ্গাল সমস্যা হতে পারে, কাজেই বুঝেশুনে জুতো নির্বাচন করুন।
যাদের জুতো থেকে পায়ে ফাঙ্গাল ইনফেকশনের সম্ভাবনা রয়েছে, তারা প্লাস্টিকের জুতোর পাশাপাশি ওয়াটারপ্রুফ মোজাও ব্যবহার করুন। একদিকে আপনার পা যেমন সুরক্ষিত থাকবে, অন্যদিকে বর্ষাকালে পা ফাটার মতো সমস্যা থেকেও মুক্তি পাবেন।
বর্ষায় মনখারাপ করা মেজাজ একটু ভালো করতে নিয়ন কিংবা ফ্লুরোসেন্ট কালারের জুতো বেছে নেওয়া যেতে পারে। আপনার শ্যু র্যাকে আপাতত তোলা থাক ফ্লিপ-ফ্লপ আর হিলগুলো!
রকমারি ছাতা
বর্ষাকাল মানেই ছাতা আর বর্ষাতি ব্যবহারের মরশুম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাজারে এখন হরেক রকমের ছাতার পসরা। তবে, ভরা বর্ষায় বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে শক্তপোক্ত ছাতা সঙ্গে রাখাটাই ভালো। আপনার শাড়ি কিংবা কুর্তির রঙের সঙ্গে মানানসই একটা-দুটো ছাতা কিনতে পারেন। এখন বাজারে নানা রকমের নকশা করা, প্রিন্টেড (ছোটদের জন্য কার্টুন-কমিক্স চরিত্রদের ছবি আঁকা) এবং স্বচ্ছ (ট্রান্সপারেন্ট) ছাতা পাওয়া যায়, যা আপনি পরিবারের সদস্যদের জন্য কিনতে পারেন।
রকমারি বর্ষাতি
বৃষ্টির দিনে বর্ষাতি ছাড়া আবার চলে নাকি! মাথার উপরে ছাতা থাকলেও গায়ে একখানা স্টাইলিশ বর্ষাতি থাকলে মন্দ হয় না! বাজারে এখন আপনি পাবেন ছোট থেকে বড় সকলের জন্য নানা ধরনের বর্ষাতি, তার আগে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন বর্ষাতিগুলি যেন নাইলন এবং পিভিসি কোটেড হয়।
১. প্রিন্টেড হুডেড রেনকোট: মনকেমন করা আবহাওয়া, ঝমঝমে বৃষ্টির মাঝে এই প্রিন্টেড হুডেড রেনকোটটি হয়ে উঠতে পারে আপনার অন্যতম প্রিয় বন্ধু। বাজার কিংবা অফিস যাওয়ার পথে এই ধরনের বর্ষাতির থেকে ভালো আর কিছু হতে পারে না। বর্ষাতির গায়ে টুপি (হুডি) থাকার জন্য বাড়ির ছোট সদস্যকে স্কুলে পাঠানোর সময়ে এই ধরনের বর্ষাতি ব্যবহার করে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। রকমারি প্রিন্ট এবং নকশা বর্ষার মনকেমন করা সকালগুলোতে একটু হলেও আপনার মন ভালো রাখবে।
২. ফুল লেংথ রেন জ্যাকেট: বাজারে হরেক রকমের বর্ষাতির ভিড়ে এই ধরনের বর্ষাতির ব্যবহার বেশ স্টাইলিশ! শাড়ি কিংবা জিনসের সঙ্গে এই ধরনের রেন জ্যাকেট ব্যবহার করে আপনি অনায়াসেই নিজের স্টাইল স্টেটমেন্ট তৈরি করতে পারেন।
৩. উওমেন মিডি লেংথ রেন জ্যাকেট: এই ধরনের মিডি লেংথ রেন জ্যাকেট কিন্তু ভরা বর্ষাতেও আপনার স্টাইলকে রাখবে অটুট! ওয়ান পিস ড্রেসের সঙ্গে বেশ মানানসই এই ধরনের বর্ষাতিগুলো।
৪. হাইকিং রেন পঞ্চু: বাঙালি মাত্রই ভ্রমণপ্রিয়! গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা কোনও ঋতুই বাঙালির এই আদি-অকৃত্রিম অভ্যাসের ভিত টলাতে পারেনি। তাই পাহাড়প্রেমী বাঙালির জন্য এসেছে বিশেষ হাইকিং রেন পঞ্চু। পাহাড়ি পথেও বজায় থাকবে আপনার স্টাইল স্টেটমেন্ট!
৪. হুডেড হাইপাড্রাই রেন জ্যাকেট: পুরুষদের জন্য হুডেড হাইপাড্রাই রেন জ্যাকেটগুলো মানানসই হতে পারে। অফিসে কিংবা এদিক-সেদিক বেড়াতে গিয়ে রোদ-জলের হাত থেকে বাঁচতে এই ধরনের রেন জ্যাকেট ব্যবহার করা যেতে পারে।
৫. হুডেড রেনকোট: ছেলেদের জন্যও এখন নানা রঙের হুডেড রেনকোট রয়েছে। মুষলধারে বৃষ্টিতে কাজ দেয় দুর্দান্ত।
‘মানডে ব্লুজ’-এর মতোই ‘মনসুন ব্লুজ’ও আপনি অনায়াসেই কাটিয়ে উঠতে পারেন যদি সঠিক পোশাক এবং সঠিক রঙের পোশাক পরেন। ঘন কালো মেঘের ভিড়ে মনের কোণে একফালি রোদ্দুরের খোঁজে বেছে নিন উজ্জ্বল রঙের পোশাকগুলো— লাল, হলুদ, কমলা, নিয়ন সবুজ! এই রংগুলো কিন্তু মন ভালো করতে পারে নিমেষে! এছাড়াও ফ্লোরাল প্রিন্টেড পোশাক ব্যবহার করতে পারেন।
বর্ষাদিনে জলীয় বাষ্পের সোঁদা গন্ধ থেকেও অনেক সময়ে ‘মনসুন ব্লুজ’ হতে পারে। সে জন্য ব্যবহার করতে পারেন হাল্কা জুঁই ফুলের পারফিউম বা অন্য কোনও ফুলের পারফিউম। এসময় কাচা জামাকাপড় কড়া রোদ্দুরে না শুকোলে একটা বিশ্রী গন্ধ ভেসে বেড়ায় বাড়ির বাতাসে। পরিবারের সকলের মন ভালো রাখতে বাড়িতেও তাই মাঝে মাঝে রুম-ফ্রেশনার ব্যবহার করুন।
আর দেরি না করে এভাবেই নিজেদের করে ফেলুন তরতাজা, ভরা বর্ষার মাঝেই।