পুরনো রোগের বৃদ্ধিতে স্বাস্থ্যহানির সম্ভাবনা। ব্যবসায় শুভত্ব বজায় থাকবে। আর্থিক প্রগতিও হবে। ... বিশদ
ঘুমকাতুরেদের বড় ভাগ্য। চাইলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েও নাকি ঘুমিয়ে পড়তে পারে তারা। কিন্তু যাদের চোখে ঘুম নেই? তাদের বড় চিন্তা। চিন্তার ঠেলাতেই ঘুম পালাই পালাই রব তোলে, এ জেনেও তারা চিন্তামুক্ত হতে পারে কই? তাদের জন্যই জানাচ্ছি ‘সাউন্ড বাথ’-এর কথা। কী বলছেন, শব্দ-স্নান নিয়ে আপনার মাথাব্যথা নেই? তবু জেনে রাখুন, বিষয়টা বেশ কৌতূহল জাগানোর মতোই।
আপনার মনে হতে পারে সাউন্ড বাথ নাম দিয়ে চালাচ্ছে তো সেই মিউজিক থেরাপি। আজ্ঞে না, শব্দ-স্নান আর মিউজিক থেরাপি কিন্তু একগোত্রীয় বিষয় নয়। সে কথায় পরে আসছি। শব্দ-স্নান ঘুমের আরাম দেওয়ার পাশাপাশি স্ট্রেস কমানো, রিল্যাক্স করা, নিজের ভিতরে সৃষ্টিশীলতার স্ফূরণ ঘটানোর মতো বিভিন্ন দিকেই সাহায্য করে। দেখা গিয়েছে অবসাদ এবং উদ্বেগের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও ফল দিচ্ছে এই পদ্ধতি।
শব্দের অনুরণনে দেহকে সার্বিকভাবে স্বস্তি দেওয়ার প্রচলন বহুদিন। হাজার হাজার বছর আগে থেকেই এমন ধারা বিভিন্ন সংস্কৃতিতে ছিল। যার অনেকটা বলা ভালো আধ্যাত্মিক। এ প্রসঙ্গে মনে পড়তে পারে যোগাসন করার শেষে দীর্ঘ সময় ধরে ‘ওম’ উচ্চারণ। মন শান্ত করতে এই মন্ত্রোচ্চারণ কাজ দেয় ম্যাজিকের মতো। ওঙ্কারধ্বনির মাধ্যমে ধ্যান বা মনঃসংযোগ করার চেষ্টা করি আমরা। এই মেডিটেশন বা ধ্যানে বসার যে ধারণা, তারই কিছুটা বিস্তৃত রূপ বলা যায় শব্দ-স্নান বা সাউন্ড বাথ। যে এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তার মনে হবে সে যেন বিভিন্ন শব্দতরঙ্গে ভেসে যাচ্ছে। বিদেশে দারুণ জনপ্রিয় এই পদ্ধতি। ফলে ধারণাটি কিছুটা পশ্চিম ঘেঁষা বলতে পারেন। এখন এদেশেও ক্রমশ কদর বাড়ছে এর। এতে ব্যবহার হয় চাইম (সুরে বাঁধা ঘণ্টা), পারকাশন, র্যাটল, তিব্বতি সিঙ্গিং বোল, কখনও বা মানুষের কণ্ঠস্বর। কেউ আবার আগে থেকে রেকর্ড করে রাখা শব্দও ব্যবহার করতে পারেন, প্রকৃতি সম্পর্কিত ধ্বনি অথবা অন্য কোনও বাদ্যযন্ত্রের শব্দ। তবে এই ধরনের শব্দের মধ্যে কোনও সঙ্গীতানুষ্ঠানের মতো সুরক্ষেপণ বা তালের খোঁজ করতে যাবেন না। এখানে আসল কথা শব্দের অনুরণন, যা মনের মূল পর্যন্ত ছোঁবে।
শব্দ-স্নানের জন্য কী করবেন? শবাসনের মতো করে শুয়ে পড়তে হয়। চোখ বুজে অথবা খুলেও থাকতে পারেন। গাইডের উপস্থিতিতে একসঙ্গে মিলে অনেকেই এটা করতে পারেন। চারপাশ থাকতে হবে পিন পড়ার নিস্তব্ধ। কারণ তাতে শব্দের অনুরণন ভালোভাবে হয়। ঘরে থাকতে হবে খুব নরম আলো। মনের বিচ্যুতি ঘটার মতো কোনও উপাদান বা জিনিস যেন সেখানে না থাকে। প্রক্রিয়াটি ১৫ মিনিট থেকে শুরু করে বেশ কয়েক ঘণ্টা চলতে পারে। এখানে কাউকে একটা থাকতে হয় যিনি সাউন্ড বাথ মিউজিক্যাল টেকনিকের সঙ্গে পরিচিত। তিনি একটি বা একের বেশি যন্ত্র ব্যবহার করে উপশমদায়ী সেই অনুরণন তৈরি করার চেষ্টা করবেন। আপনি ধীরে ধীরে লম্বা শ্বাস নিতে থাকবেন। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইতিবাচক চিন্তার মধ্যে ডুবিয়ে ক্রমশ গাইড আপনাকে যেন এগিয়ে নিয়ে যাবেন একটা উদ্দেশ্যহীন আলোর পথে। শব্দের সেই অনুরণন থেকে আপনি পরশ পাবেন একটা গভীর স্তরের, যেখানে শরীরের নড়াচড়া ভুলে একটা অদ্ভুত প্রশান্তির মধ্যে ঢুকে যেতে পারবেন। মনে হবে যেন অন্তরাত্মা ভেতর থেকেই যেন শুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। রাগ, হতাশা, অভিমান, ক্ষোভের ঘরগুলো ক্রমশ ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। নিজেকে হারিয়ে ফেলার এই সেশনের শেষের দিকে আপনার গাইডই আপনাকে ফিরিয়ে আনবে সচেতন জগতে। এই ধরনের পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন মুম্বইয়ের চিকিৎসক অদিতি সোমান। তিনি জানিয়েছেন, ‘এটা যেন একটা অদ্ভুত শান্তিদায়ী অভিজ্ঞতা। সারা দিনে কাজেকর্মে মনে যত ক্লেদ জমে, সব যেন ধুয়েমুছে যায়। মনের স্পা বলা চলে এই প্রক্রিয়াকে। এর মধ্যে ছিলাম, মনে হচ্ছিল এটা যেন শেষই না হয়। এই ধরনের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে বারবার যাওয়া উচিত আধুনিক মানুষের।’ শুধু অদিতি নন, এই অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন এমন অনেকেরই দাবি, সেশন শেষে শরীর-মনে অদ্ভুত একটা তরতাজা ভাব আসে। সব উদ্বেগ যেন কেউ ছেঁকে বের করে দেয় শরীর-মন থেকে। সঙ্গে প্রশান্তির আনন্দ।
মনে রাখবেন, সাউন্ড বাথ আর মিউজিক থেরাপি কিন্তু এক জিনিস নয়। অনুরণনই শব্দ স্নান প্রক্রিয়ার মূল কথা। ধ্বনির এই অনুরণন ক্রমশ উদ্বেগ দূর করে দৈহিক ও মানসিকভাবে আপনাকে শান্ত করে। কোনও মারাত্মক নিয়মানুবর্তিতা বা ধৈর্যের প্রয়োজন নেই এর জন্য, শুধু মন দিয়ে শুনতে হবে আর সময়টা দিতে হবে। শোনার প্রক্রিয়ার মধ্যে হয়তো বা পথে আসবে খানিক দুশ্চিন্তা, খানিক উদ্বেগ। দেখা দিয়ে ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাবে তারা। আর আপনি সহজে রিল্যাক্সড হওয়ার সূত্র নিজেই খুঁজে পাবেন। তবে শব্দস্নাত হওয়ার পরে আর চিন্তা আসবে না জীবনে, এমনটা একেবারেই নয়। এটা একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। প্রতিদিন চলার পথে কিছু না কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা, যন্ত্রণা মনকে জীর্ণ করবেই। আবার থাকবে মন ভালো করা অসংখ্য মুহূর্ত। কীভাবে সেই মুহূর্তগুলোর জন্যই বাঁচবেন, তার খোঁজ দেবে শব্দ-স্নান। টেনশন সরিয়ে রেখে প্রশান্তিকে প্রশ্রয় দেওয়ার পাঠ বলতে পারেন একে।