পুরনো রোগের বৃদ্ধিতে স্বাস্থ্যহানির সম্ভাবনা। ব্যবসায় শুভত্ব বজায় থাকবে। আর্থিক প্রগতিও হবে। ... বিশদ
দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় দেশ ব্রাজিল আর তার সবচেয়ে প্রাণবন্ত শহর রিও। সেখানেই কোপাকাবানা ও তার পৃথিবী-বিখ্যাত ৪ কিলোমিটার লম্বা সমুদ্র সৈকত। প্রথমে ঠিক হয়েছিল, ওখানে থাকা হবে। কিন্তু অনেক বেশি হই-হট্টগোলের জায়গা হবে ভেবে, মত বদলে পাশের সৈকত ইপানেমায় থাকা ঠিক হল। মত বদলে ভালোই করেছিলাম, কারণ হোটেলের ঘরের বারান্দা থেকে অতলান্তিক মহাসাগরের দুর্দান্ত দৃশ্য আর ছাতের রেস্তরাঁ থেকে দূরে পাহাড়ের মাথায় ‘ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার’ দেখা, দুটোই খুব মনের মতো হয়েছিল আমাদের।
পৌঁছনোর পরের দিন সকালে বেরলাম রিওর প্রধান আকর্ষণ, ‘ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার’ স্ট্যাচু দেখতে। তিহুকা ন্যাশনাল পার্কের কর্কোভাদো পাহাড়ের উপর এই স্ট্যাচু। শহর থেকে দু’ভাবে যাওয়া যায়। ট্রেন আর বাস। আমরা বাসে গেলাম। তিহুকা জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বাস যখন পাহাড় বেয়ে উপরে উঠতে শুরু করল হাল্কা ঠান্ডা হাওয়ার ঝলক বেশ ভালো লাগছিল।
উপরে উঠে ভিড় দেখে একটু ভয় পেয়ে গেলাম। গিজগিজ করছে লোক। কোনওরকমে ঠেলেঠুলে নিজের জায়গা করে নিয়ে উপরে তাকাতেই চোখে পড়ল যিশুর মূর্তি। কংক্রিট ও সাজিমাটি দিয়ে তৈরি প্রায় ১০০ ফুট লম্বা ও চওড়া এই মূর্তি যে কী অপূর্ব বলে বোঝানো মুশকিল। লোকজন দেখলাম শুয়ে পড়ে ছবি তুলছে, সেলফি তোলার ধাক্কায় নিজেদের সামলে নিয়ে অনেকক্ষণ ধরে যিশুর ওই সাদা ধবধবে মূর্তি, পরিষ্কার নীল আকাশ আর হালকা একটা দুটো মেঘের কণা দেখলাম। ভাবলাম আহা, যদি কবিতা লিখতে পারতাম!
যিশুর মূর্তিটা একটা টেরেসের উপর, তার চারদিকে রিওর নানা সমুদ্রতট ও পাহাড়ের ভারি সুন্দর দৃশ্য। ওখানে একবার পৌঁছে গেলে আর ফিরতে মন চায় না, সে যতই ভিড় হোক না কেন। অনেকক্ষণ সময় কাটিয়ে রওনা হলাম সুগারলোফ পাহাড়ের দিকে। কর্কোভাদো আর সুগারলোফ পাহাড়ের যোগাযোগ এক কেবল কার-এর মাধ্যমে। তাতে উঠে আমরা পৌঁছলাম পাহাড়ের চূড়া থেকে গুয়ানাবারা বে দেখতে।
১৫০২ সালের ১ জানুয়ারি পর্তুগিজ অভিযাত্রীর দল এই সৈকতেই প্রথম নেমেছিল। প্রবাদ অনুযায়ী, সেখান থেকেই নাম ‘রিও ডি জেনেইরো’ বা ‘রিভার অব জানুয়ারি’। ব্রাজিলের অবশিষ্ট কিছু আদি বাসিন্দা এখনও ওই এলাকায় বাস করেন।
পরের দিন গেলাম মেট্রোপলিটন ক্যাথিড্রাল দেখতে। এটিও বেশ সুন্দর। খুব নতুনত্ব আছে এর গঠনশৈলীতে। মায়া সভ্যতার পিরামিডের মতো বানানো এই চার্চ, ভেতরে অসংখ্য রঙিন স্টেনড ও ফ্রস্টেড গ্লাস দিয়ে সাজানো। সেখান থেকে বেরিয়ে সোজা গিয়ে পৌঁছলাম সেলারন স্টেপস। বেশ মজার জায়গা, শহরের দুটো এলাকার মধ্যে যাতায়াত করার জন্য এক সার সিঁড়ি। বিশেষত্ব এই যে প্রত্যেকটি ধাপ পৃথিবীর নানা দেশ থেকে আনা টাইলস দিয়ে তৈরি। আমরা পৌঁছেই ভারতের টাইলস খুঁজলাম। পেয়েও গেলাম। দেবতা, সূর্যোদয়, স্বস্তিকা সবই ছিল সেই টালিতে। এখানেও প্রচুর লোক, নানাভাবে সিঁড়িতে শুয়ে বসে ছবি তুলছে।
এসবের পরে স্টেডিয়াম। ব্রাজিলে আসব আর ফুটবল খেলা দেখব না, তাও কি হয়! সোজা গিয়ে হাজির হলাম মারাকানা স্টেডিয়ামে। তবে এখানে এসে একটু বিপদেই পড়লাম, আশপাশে কেউই ইংরেজি বোঝে না। অনেক কষ্টে বোঝালাম যে খেলা দেখব আর স্টেডিয়াম ট্যুর করব। ভাগ্য ভালো একটু আধটু ইংরেজি বোঝে এমন একজনকে পেয়েছিলাম। প্রায় জোরজার করে ইংরেজি বলে তাকে বোঝাতে হল। পরে তার কথায় বুঝলাম সেদিন স্টেডিয়াম বাইরের লোকেদের জন্য বন্ধ। দুটো প্রাইভেট ক্লাবের মধ্যে ম্যাচ চলছে। কী আর করা, স্টেডিয়ামের চারদিকটা ঘুরে দেখে ফিরে এলাম।
খাদ্যরসিকদের মধ্যে ব্রাজিলের চুরাসকারিয়া (বারবিকিউ) বেশ জনপ্রিয়। আমরাও সেই রসিকদের দলে পড়ি। শহরের একটা নাম করা রেস্তরাঁয় প্রাণভরে চুরাসকারিয়া মিল খাওয়া হল। এখানে রোডিজিও স্টাইলে খাবার পরিবেশন করা হয়। সহজ ভাষায় বললে যার মানে দাঁড়ায় ‘যেমন খুশি যত খুশি খাও।’ যতটা পারলাম খেলাম। আর এক জায়গায় খাওয়া হল মোকিকা, ব্রাজিলিয়ান মাছের স্টু। অসাধারণ তার স্বাদ। রিও-র ছুটি শেষ, এবার যাব ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার বর্ডারে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জলপ্রপাতের ধারা, ইগুয়াজ়ু ফল্স দেখতে। তারই তোড়জোড় করতে করতে সুন্দরী রিওকে টাটা জানিয়ে প্লেনে উঠলাম।