পারিবারিক ধর্মকর্ম পালনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ। সন্তানের কর্মসাফল্যে গর্ব। গবেষণায় অগ্রগতি। ... বিশদ
এক তরুণীর গল্প বলে ‘নীহারিকা’। যার নিঃসঙ্গ জীবন যেন শিমুলতলার আকাশের মতোই ফ্যাকাসে। তবে মাঝে মধ্যে সেই আকাশেই বিদ্যুত্ ঝলকায়। পরমুহূর্তে তৈরি হয় অন্ধকার। সেই অন্ধকারের মধ্যেই পা ফেলে একটু একটু করে এগিয়ে যায় দীপার জীবন। এমনই মায়াময় এই ছবি। শিমুলতলার শুকনো পৃথিবীর চোখ মাঝেমধ্যেই ছলছল করে উঠেছে। দীপার জন্য। দীপাকে বোঝার জন্য। জটিল জীবনের আলো অন্ধকারে এক মায়ার পশম বয়ে নিয়ে বেড়ায় এই দীপা। যে মায়ায় বাঁধা পড়বেন আপনিও।
দীপার (অনুরাধা মুখোপাধ্যায়) ছোটবেলা মধুর নয়। প্রতি রাতে সে দেখেছে, মদ্যপ বাবা তার মায়ের উপর অত্যাচার করে। সিঁড়ির হলদে আলোয় জমে মনকেমন। দিশেহারা দীপাকে ছোটকাকা যে কোনও অজুহাতে স্পর্শ করে। দমবন্ধ করা শৈশব, কৈশোরে এমন মেয়ের জীবনে মা ছাড়া কাছের মানুষ আর কেউ ছিল না। মায়ের মৃত্যু দীপাকে ভিটেছাড়া করল। বাবা আর মেয়েকে কাছে রাখতে চাইলেন না। মেয়ের দায়িত্ব নিতে হল ছোটমামাকে (শিলাজিত্ মজুমদার)। দীপার ঠিকানা বদল হল। শিমুলতলায় মামা-মামির (মল্লিকা মজুমদার) সংসারে সেই প্রথম থাকার শুরু। শুরু ‘নীহারিকা’ আশ্রয়ে দিনযাপন। শুরু সই পাতানোর প্রথম অঙ্ক।
না! সে আশ্রয় যে দীপার সব মনকেমন ভুলিয়ে দিতে পেরেছে, তা নয়। নিজেকে না চিনতে পারা, নিজেকে না বুঝতে পারার অসহায়তা দীপা বয়ে চলে আজীবন। বাড়িতে থাকার সময় শরীর চিনিয়েছিল অসুস্থ দাদুর এক নার্স। কিন্তু তাকে কি ভালোবেসেছিল মেয়েটি? শিমুলতলার আদি অনন্ত যাপনে ধীরে ধীরে দীপার ছোটমামার প্রতি দুর্বলতা তৈরি হয়। এক সমুদ্র শূন্যতা ভরিয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত সে দিলেও এই চাওয়ার পরিণতি কী? আসলে দীপার অন্ধকার পথচলার বাঁকে বাঁকে গ্রাস করে ভয়। না ভালোলাগার বিরাট একটা রাক্ষসের পেটে যেন খাবি খেতে থাকে সে। কখনও সে আঁকড়ে ধরে ছোটমামাকে, কখনও মামিকে। কিন্তু আশ্রয় খোঁজার মধ্যেও যেন দ্বন্দ্ব, একটা ভয়। কোল পেতে তার জন্য যেন অপেক্ষায় ছিল একমাত্র ‘নীহারিকা’।
এই ছবিতে এক জীবনে প্রচুর স্তর দেখিয়েছেন পরিচালক। সম্পর্কের জটিলতার বুনন কখন যে দর্শককেও আয়নার মুখোমুখি করবে, তা আগে থেকে বোঝা সম্ভব নয়। ছবির গল্প চলেছে শান্ত নদীর মতো। পাল্লা দিয়ে এগিয়েছে জয় সরকারের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। ঘণ্টা দু’য়েকের ছবি কখনওই খুব একটা একঘেয়ে লাগে না। খুব যে ঘটনার ঘনঘটা রয়েছে এমনটা নয়, তবে শান্ত নদী একাধিকবার গতিপথ বদলেছে। ছবির সম্পাদনা, দৃশ্যগ্রহণ চোখের আরাম দেয়। গল্প বলার ধরনে পরিচালকের মেধার ছাপ স্পষ্ট। গল্প-চিত্রনাট্য-সিনেমাটোগ্রাফিই এই ছবির সম্পদ।
এই ছবির মুখ্য চরিত্রে অনুরাধা একশোভাগ চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কোনও কোনও মুহূর্তে তাঁর কাছ থেকে আরও ভালো অভিব্যক্তি দর্শক আশা করতে পারেন। মল্লিকা এই ছবির সম্পদ। শান্ত উপস্থিতির জোর যে কতটা হতে পারে, তা তাঁর অভিব্যক্তিতে স্পষ্ট। তাঁর বাচনভঙ্গি মনে থাকবে অনেকদিন। ছোট চরিত্রে অনিন্দ্য সেনগুপ্তকে ভালো লাগে। আদতে সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের গল্প আধারিত এই ছবির ক্যানভাস বাংলা চলচ্চিত্রকে বহু দিক থেকে সমৃদ্ধ করেছে।