পারিবারিক ধর্মকর্ম পালনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ। সন্তানের কর্মসাফল্যে গর্ব। গবেষণায় অগ্রগতি। ... বিশদ
সম্ভবত এটাই পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলানের সেরা কাজ। মেমেন্টো, দ্য ডার্ক নাইট, ইনসেপশন নয়। কারণ, এখানে আগের নোলানকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। অ্যাকশন, সিজিআই, এমনকী সময়ের গতি ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা প্রায় কিচ্ছু নেই। রয়েছে শুধু আবেগ। সেকারণেই ‘ওপেনহাইমার’ আলাদা। এক মার্কিন বিজ্ঞানীর জীবনকাহিনি নিয়ে এমন টানটান থ্রিলার একমাত্র নোলানই বানাতে পারেন। যোগ্য সঙ্গত করেছে হোয়তে ভ্যান হোয়তেমারের ক্যামেরা এবং লুডভিগ গোরানসনের মিউজিক।
যদিও সব আলো কেড়ে নিয়েছেন কিলিয়ান মার্ফি। ইহুদি পদার্থবিদ, অ্যাটম বোমার জনক জে রবার্ট ওপেনহাইমারের চরিত্রে তাঁর নীল, ঈষৎ বিস্ফারিত চোখ থেকে নজর সরানো যায় না। স্বপ্ন, আত্মশ্লাঘা, অনুশোচনা, ভয়... কী নেই সেই দৃষ্টিতে। কাজপাগল বিজ্ঞানী, বামপন্থী, নারীলোলুপ, ভাষাবিদ, ভীরু ও জিনিয়াসের জটিল অভিনয়ে তিনি অনবদ্য। যৌনতার পর বান্ধবীর কথায় গীতাপাঠ করেন, ‘আমিই সর্বসংহারক মৃত্যু...।’ চমকে দিয়েছেন ‘আয়রন ম্যান’ খ্যাত রবার্ট ডাউনি জুনিয়রও। এমিলি ব্লান্ট, ফ্লোরেন্স পাগ, ম্যাট ডেমন— প্রত্যেকে দুর্দান্ত।
কাই বার্ড ও মার্টিন শেরউইনের বই ‘আমেরিকান প্রমিথিউস’ অবলম্বনে চিত্রনাট্যে সমান্তরাল তিনটি গল্প রয়েছে। প্রথমটি রাশিয়ার হয়ে চরবৃত্তির অভিযোগে বদ্ধ ঘরে ওপেনহাইমারের ‘বিচার’। সেখানে আত্মপক্ষ সমর্থনে উঠে আসে দ্বিতীয় গল্প, অ্যাটম বোমার জন্ম। অঙ্কে দুর্বল, কোয়ান্টাম ফিজিক্সের ছাত্র থেকে বিশ্ব ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ নাম হয়ে ওঠার যাত্রা। আর আসেন আইনস্টাইন, নীলস বোররা। তৃতীয় গল্প সাদাকালো ষড়যন্ত্রের। ঠান্ডা যুদ্ধের প্রাক্কালে সেনেটের মুখোমুখি মার্কিন বাণিজ্য সচিব পদপ্রার্থী স্ট্রস।
ছবির মূল আকর্ষণ প্রথম অ্যাটম বোমা বিস্ফোরণ! প্রজেক্ট ম্যানহাটনের শেষ পর্যায় ট্রিনিটি টেস্ট। প্রায় ৩০ সেকেন্ড ধরে পর্দায় নিঃশব্দ গলগলে আগুনের বিমূর্ত অবয়ব মুগ্ধ করে। তবে বিস্ফোরণের সেখানেই ইতি। এ গল্প পুরোপুরি ওপেনহাইমারের আত্মবিস্ফোরণের। হিরোশিমা-নাগাসাকিতে অ্যাটম বোমা ফেলার খবর পেয়ে যিনি সগর্বে চিৎকার করতে চান, অথচ মনের মধ্যে তাঁর গলা টিপে ধরে নিরীহদের কান্না। অনুশোচনা হয়। তিনি হয়ে ওঠেন পরমাণু যুদ্ধবিরোধী নীতির প্রবক্তা। আর তারপরই শুরু ষড়যন্ত্র। ৭০ মিমি আইম্যাক্স ফর্ম্যাটে এই গল্পকে বেঁধেছেন নোলান। আইম্যাক্সের পর্দায় যা দেখলে ঘুম উড়ে যেতে বাধ্য। তবে তার টিকিটের দাম শুনলেই ফোস্কা পড়ছে পকেটে। হবে না কেন, এ সিনেমা যে নোলানের। নামই যথেষ্ট!