পারিবারিক ধর্মকর্ম পালনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ। সন্তানের কর্মসাফল্যে গর্ব। গবেষণায় অগ্রগতি। ... বিশদ
অমিতাভ বচ্চনের সেই নাটকীয় কায়দায় যদি জিজ্ঞাসা করা হয় পরিচালক সুপর্ণ ভর্মাকে, ‘ক্যায়া হ্যায় তুমহারে পাস?’ একটাই উত্তরে সুপর্ণ অনেকের মুখ বন্ধ করে বলতেই পারেন—‘মেরে পাস কাজল হ্যায়!’ রবার্ট ও মিশেল কিং-এর ‘দ্য গুড ওয়াইফ’ অনুসরণে তৈরি এই সিরিজ, তার আট এপিসোডের ট্রায়াল শেষ করে যে কারও বলতে ইচ্ছা করবে, ওটিটিতে স্বাগত তোমায়, প্রিয় অভিনেত্রী!
স্টোরিলাইন সকলের চেনা। নয়নিকা (কাজল), রাজীব সেনগুপ্ত ও তাঁদের দুই মিষ্টি বাচ্চা মেয়েকে নিয়ে সুখী সংসার। অতিরিক্ত বিচারক রাজীব (যিশু সেনগুপ্ত) পরকীয়া ও ঘুষের অভিযোগে অভিযুক্ত হন। ধরা পড়েন। শুরু হয় বিচার প্রক্রিয়া। সংসারের ভার এসে পড়ে বহুদিন ওকালতি ছেড়ে ঘরকন্নায় মন দেওয়া নয়নিকার কাঁধে। একসময়ের প্রতিভাবান আইনজীবী ফের গায়ে চাপিয়ে নেন কালো কোট।
কিন্তু এই স্টোরিলাইনের গোড়াতেই যে রয়েছে গলদ! বিবাহবিচ্ছেদ, আত্মহত্যায় প্ররোচনা সহ হাতেগোনা কিছু ক্ষেত্র বাদে ‘অ্যাডালটারেশন’ বা পরকীয়া ভারতবর্ষের আইনে এখন যে ‘বেআইনি’ই নয়। দ্বিতীয়ত, অতিরিক্ত বিচারককে এভাবে হঠাৎ করে জেল হেপাজতে পাঠানোও যায় না। ট্রায়াল নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা বলছিলেন, ‘বিচারকের রায়ে অসন্তোষ থাকলে উচ্চতর আদালতে যাওয়া আইনের বিধান। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে পরকীয়ার অভিযোগে তাঁকে পুলিস ধরে নিয়ে যাচ্ছে, তিনি জেল খাটছেন— এভাবে হয় নাকি? বিচারক সংবিধানের রক্ষক। তাঁর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ থাকলে আদালত তদন্ত কমিশন গড়তে পারে। সেই রিপোর্ট জমা পড়ে জোনাল জজের কাছে। তিনি খতিয়ে দেখেন। এসব প্রক্রিয়া দীর্ঘ। তাছাড়া উচ্চ এবং সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতির আইনি রক্ষাকবচও আছে। তাঁদের সঙ্গে এধরনের ব্যবহার করা অসম্ভব। দর্শকের মনোরঞ্জনকে ঢাল করে যা খুশি করা যায় না’, কিছুটা ক্ষুব্ধই শোনাল অনির্বাণকে।
ফলে দুর্বল একটি স্টোরিলাইনকে ভরকেন্দ্র করে এগিয়ে গিয়েছে সিরিজ। শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরে দেখলে, দেখবেন ‘নায়ক’ কাজলের জন্যই! এক প্রাক্তন আইনজীবীর কামব্যাক। তাঁর কলেজজীবনের প্রাক্তন প্রেমিক তথা আজকের দিনের নামজাদা ল-ফার্মের বস অ্যালি খান তথা বিশাল চৌবের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন— নানা অভিব্যক্তিতেই অবলীলায় প্রকাশ করেছেন কাজল। স্বামীর পরকীয়ায় তীব্র ঘৃণা, রাগ, স্বনির্ভর হওয়ার প্রবল আকাঙ্খা, পুরনো ভালোলাগা নিয়ে মিশ্র ও বিচিত্র অভিব্যক্তি, আইনি লড়াইতে জিতেও নৈতিকতায় টান পড়া— ধীরে ধীরে ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট থেকে রহস্যময় রঙিন নারীচরিত্রের আয়না হয়ে উঠেছেন।
আর যিশু? অভিনন্দন আপনাকে। এ মুহূর্তে দেশের অন্যতম প্রতিভাবান অভিনেত্রীর সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করলেও, এক মুহূর্তের জন্যও দুর্বল ভাবতে দেননি। তবে ‘ফ্যামিলি ম্যান’-এর মতো শক্তিশালী হোমওয়ার্কের ওয়েব সিরিজের পরিচালক এবং প্রাক্তন সাংবাদিক সুপর্ণের কাছ থেকে অনেক বেশি পরিণত সিরিজ আশা করেছিলেন দর্শক। এই ওয়েব সিরিজ যেটুকু নম্বর পাবে, তার সিংহভাগের ভাগীদার কাজল।